নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজে চাকুরী স্থায়ীকরণের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন ঐ স্কুলের শিক্ষক আক্তারুল ইসলাম। পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামাল উদ্দিন কর্তৃক কোন ধরনের নোটিশ বা পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই চাকুরি থেকে বের করে দেওয়ার প্রতিবাদে রবিবার (০৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় ঐ স্কুলের সামনে চাকুরী ফিরে পেতে এ আমরণ অনশনে বসেছেন ঐ শিক্ষক। তার লিখিত অভিযোগের লিফলেট উল্লেখ করেছেন যে, আজ আমি এখানে ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছি ‘সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ’ নামক উক্ত প্রতিষ্ঠানটির কিছু জালিয়াতির আমলনামা পেশ করার জন্য, আমার সাথে ঘটে যাওয়া জুমুল-নির্যাতন ও প্রচলিত আইন বিরোধী অবস্থানের সম্পর্কে জনগণকে অবগত করার জন্য ও সঠিক প্রতিকার পেতে এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অতি সামান্য একজন শিক্ষক হিসাবে রাষ্ট্রের কাছে জরুরি কিছু আবেদন পেশ করার জন্য।
প্রথমে একটু বলি ‘সাতক্ষীরা পাবলিক স্কুল’ বলার পরিবর্তে ‘সাতক্ষীরা ব্যক্তিগত স্কুল’ বললে এটার নামের সাথে কাজের মেলবন্ধন হবে। কারণ প্রতিটি শিক্ষককে একজন ব্যক্তির নির্ধারিত সিস্টেমে পাঠদান, ব্যক্তির ইচ্ছামতো নম্বর প্রদান, চলন,বলন সবই তার ইশারায় হবে; এমনকি স্কুলে সূর্যের আলো পৌঁছাবে কি-না সেটাও ব্যক্তি নির্ধারণ করেন। তাই আমার মতে ‘পাবলিক’ শব্দটি ব্যবহার করা অযৌক্তিক এবং নৈতিক অধিকার তাদের নেই। যদিও Registration of Private Schools Ordinance, ১৯৬২ অনুযায়ী কোন ধরনের আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। তবে, নাম ব্যবহারে ভোক্তা/জনগণের বিভ্রান্তি কথা বিবেচনায় নৈতিক অধিকারের কথা উল্লেখ করেছি। কেননা আমাদের প্রচলিত আইনে বলা আছে, যদি কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তার নাম দিয়ে জনসাধারণকে বোঝায় যে এটি সরকারিভিত্তিক বা সরকারি অনুমোদিত, তাহলে অভিযোগ/প্রশাসনিক নজরপাত হতে পারে (misleading/ deceptive practice প্রেক্ষাপট)। তাছাড়া, স্কুলের নামের শিরোনামে কলেজ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে যা বিভ্রান্তিকর। কারণ এখানে কোন কলেজ সেকশন নেই।
প্রতিষ্ঠানটির কিছু জালিয়াতি এবং বেআইনি কাজ হলো ঃ
লোক দেখানো ভালো ফলাফলের জন্য ভালো শিক্ষার্থীদের নিজের স্কুল থেকে রেজিষ্ট্র্রেন করানো হয় এবং অপেক্ষাকৃত খারাপ /অকৃতকার্যের সম্ভাবনা আছে এমন শিক্ষার্থীদের সরকারি স্কুল (লাবসা এমাদুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়) থেকে রেজিষ্ট্রেশন করানো হয় যা স্পষ্ট জালিয়াতি।
প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েও অধ্যক্ষ পদ নিজের দখলে রাখা। যদিও Education (Pre‑Primary, Primary and Post‑Primary) অপঃ, ২০০৮ এবং ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে NTRCA (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) ও সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক আইন অনুযায়ী মালিক এবং অধ্যক্ষ দুটোই ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে এবং একটি বডির মাধ্যমে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিলো।
শিক্ষাজীবন চলমান এমন শিক্ষার্থীর মাধ্যমে ক্লাস পরিচালনা করা।
শুধুমাত্র অভিভাবকদের বোকা বানিয়ে এবং সাময়িক সন্তুষ্টি খুশি করার জন্য শিক্ষকদের বাধ্য করে জোরপূর্বক আকাশছোঁয়া নম্বর পাইয়ে দেওয়া, মালিকের নির্দেশনায় শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিক্ষার্থীদের সকল ধরণের পরিক্ষায় সহযোগিতা করানো, এমনকি নির্ধারিত সময়ে পরিক্ষা না দিতে পারলে বা প্রশ্ন লিখতে অপারগ হলে অনৈতিক ও অবারিত সময় দেওয়া এবং প্রয়োজন হলে গাইডের সহযোগিতা নেওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত করা ইত্যাদি সহ নানান প্রকারের জালিয়াতি কারখানা তৈরি করা সহ শিক্ষা ব্যবস্থা এবং জাতি ধ্বংসের সাথে প্রতিষ্ঠানটি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।
পাবলিক শব্দটির ফাঁদে, পরীক্ষা নামক টাকা ইনকামের মেশিনে, সেশন চার্জ এবং আকাশচুম্বী বেতনে শতশত শিক্ষার্থীদের এবং অভিভাবকদের নাভিশ্বাস অবস্থা। অনেক শিক্ষার্থীকে আমার চোখের সামনে কাঁদতে দেখেছি।
বেশিরভাগ সরকারি ছুটির দিনগুলোতে এমনকি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দিনে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য শিক্ষকদের অফিস করতে বাধ্য করা। তাছাড়া সরকারি ছুটির দিনেও ক্লাস চালু রাখেন এবং শিক্ষকগণ অনুপস্থিত থাকলে বেতন থেকে ১ দিনের টাকা কর্তন করে থাকেন। যদিও আমরা জানি,মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ (MOE/DSHE) ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ “সরকারি/বেসরকারি” স্কুল ও কলেজের জন্য একক ছুটি-তালিকা (academic calendar / holiday list) জারি করে এবং সেটি শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি-উভয় শ্রেণির জন্যই মেনে চলা কর্তব্য। তবে, এসব ব্যাপারে প্রতিবাদ বা কথা বলার চেষ্টা করলে মালিক জবাব দেন যে, “এটা আমার প্রতিষ্ঠান এখানে আমার ব্যক্তিগত আইন চলবে, আমি বসতে বললে বসবি এমনকি শুইতে বললে শুবি….এটাই তোদের কাজ।”
NCTB প্রদত্ত সিলেবাস এবং প্রশ্ন কাঠামোর পরিবর্তে ব্যক্তিগত সিলেবাস follow করতে দেখা গেছে।
আমি এবং আরও অনেক শিক্ষকদের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু অন্যায় ঃ
কোন ধরনের নোটিশ বা পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই চাকুরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করার জন্য কোন ধরনের সম্মানি প্রদান করা হয় নি।
শিক্ষকদের দিয়ে Day Care/ Special Care এর নামের অতিরিক্ত ক্লাস পরিচালনা করানো,তবে আপসোসের বিষয় লক্ষ লক্ষ টাকা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে নেওয়ার পরেও শিক্ষকদের একটি পয়সাও দেওয়া হয় না।
নির্ধারিত কর্ম ঘন্টার থেকে বেশি সময় ধরে কাজ করানো হয়েছে। মিটিং, ট্রেনিং এর নামের অতিরিক্ত, প্রচার এবং বিভিন্ন অতিরিক্ত অফিসিয়াল ও ব্যক্তিগত কাজের অজুহাত শিক্ষক এবং কর্মচারীদের গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
শিক্ষকদের সাথে সর্বোচ্চ অসম্মানজনক আচরণ করা হয়েছে এবং দুঃখের সাথে বলতে হয় অনেকের গায়ে পর্যন্ত হাত উঠানো হয়েছে।
রাষ্ট্রের কাছে আমার কিছু দাবিঃ
একটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুইটি sector হলো Education & Health কিন্তু আপসোসের বিষয় এই দুটি সেক্টরে সবচেয়ে নিয়ন্ত্রণহীন এবং ভয়াবহ দূর্নীতিতে জর্জরিত। শিক্ষা নামক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে সামান্য একটু অবহেলা করলেই এ জাতির ধ্বংস অনিবার্য। ইতোমধ্যে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বলতে পারি যে সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি প্রতিষ্ঠানে যদি শিক্ষা নামক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এভাবে অবহেলা করা হয়,তাহলে দেশের অন্য সকল জায়গায় কি অবস্থা তা ভেবে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। সাথে সাথে আমার ব্যক্তিগত কিছু পরামর্শ এবং দাবি পেশ করছি।
দেশের লক্ষ লক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যথাযথ মনিটরিং এর ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে একটি আলাদা Regulatory Authority তৈরি করা যেমন : Private Schools Regulatory Authority,Bangladesh এমন নামে প্রয়োজনে বিভাগ ভিত্তিক করা যেতে পারে। যদিও নামকাওয়াস্তে কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেমন, MoE, NTRC Ges NCTB ইত্যাদি।
বেসরকারি শিক্ষকদেরকেও রাষ্ট্র থেকে একটা “বেতন কাঠামো নির্ধারণ” করে দেওয়া হোক যেখানে শিক্ষকদের সর্বনিম্ন বেতনের উল্লেখ থাকবে। আমার প্রশ্ন একজন গার্মেন্টস কর্মীর সর্বনিন্ম বেতন রাষ্ট্র নির্ধারণ করতে পারলে জাতি গঠনের কারিগর সম্মানিত শিক্ষকদের বেতন কাঠামো কেনো নির্ধারিত করতে পারবে না? বেসরকারি শিক্ষকগণ কি দেশের নাগরিক নয়?
আমার সমস্যাকে কেবল ব্যক্তিগত সমস্যা এবং তুচ্ছ গঠনা হিসাবে দেখবেন না, কেননা এটা রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে গেছে। আজকে আমি ব্যক্তিগতভাবে এখান থেকে আওয়াজ তুলেছি, আপনার বিবেচনায় আমি কথাগুলো যৌক্তিক মনে হলে আসুন আমার সাথে একসাথে আওয়াজ তুলুন। ন্যায়,সাম্য, মানবিক মর্যদা এবং সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করার কাজে আমাকে সহযোগিতা করার উদাত্ত আহŸান জানাচ্ছি। এবিষয়ে পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামাল উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল ও হোয়াটসআপে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
Leave a Reply