শ্যামনগর প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী মান্দারবাড়িয়ার চরে ফেলে যাওয়া ৭৫ জন বাংলাদেশীকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শ্যামনগর থানা থেকে তাদের নিতে আসা পরিবারের সদস্যদের হাতে পুশইন হওয়া এসব বাংলাদেশীকে তুলে দেয়া হয়। এসময় ভারতীয় নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা তাদের স্বজনদের সাথে মিলিত হলে হৃদয়বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় কোস্টগার্ড ও পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে ভারতীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক এসব মুসলিম বাংলাদেশীর উপর অত্যাচারের কথা তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের লেঃ কমান্ডার আবরার হাসান, সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্তি পুলিশ সুপার মিথুন সরকার, সহকারী পুলিশ সুপার আনোয়ারুল ইসলাম, অফিসার ইনচার্জ মোঃ হুমায়ুন কবির প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয় গত ২৬ এপ্রিল গুজরাট ও সুরাট থেকে আরও অসংখ্য মুসলিম পুরুষের মত উক্ত ৭৮ জন বাংলাভাষীকে আটক করা হয়। নাগরিকত্বসহ নানান তথ্য যাচাইয়ের নামে বিভিন্ন স্থানে একাধিক দিন আটকে রাখার পর ৫ মে তাদেরকে গুজরাট থেকে বিমানযোগে কলকাতায় নেয়া হয়। একপর্যায়ে বিমানে থাকা অবস্থায় কালো কাপড়ে মুখসহ পিছমোড়া দিয়ে হাত ও পা বেঁধে তাদেরকে জাহাজে তোলা হয়। মাঝ সাগরে জাহাজ নোঙর করে একাধিক স্পিডবোটযোগে এসব বাংলাভাষীকে বঙ্গোপসাগরের চরে ফেলে দেয়া হয়। তবে জাহাজে অবস্থানকালে তাদেও উপর অমানবিক আচারণসহ ব্যাপক শাররীক নির্যাতন চালনো হয়। যার কারনে অন্তত ১০ মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ফিরে আসা বাংলাদেশী আবু বক্কার জানান ৯ মে রাত ১২টার দিকে তাদের বঙ্গোপসাগরের চরে ফেলে দেয়া হয়। পরবর্তীতে প্রায় ১২/১৪ ঘন্টা পায়ে হেঁটে পরের দিন সকালের আলোয় একটি মোবাইল টাওয়ার সনাক্ত করে তারা মান্দারবাড়িয়া বনবিভাগের অফিসে পৌছে। এসময় খবর পেয়ে বনবিভাগসহ কোস্টগার্ড সদস্যরা তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। এছাড়া সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের পক্ষে শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসন ও শ্যামনগর থানা পুলিশ পরবর্তীতে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
পুশইন হওয়া ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লেঃ কমান্ডার আবরার হাসান আরও জানান মুসলিম বাংলাদেশীদের আটকের পাশাপাশি তাদের ঘরবাড়ি ঘটনার রাতে বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে সেখানকার পুলিশ। পরিবারের সদস্যদের সামনে তাদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি ধর্মীয় অবমাননাসুচক শব্দ ব্যবহার ছাড়াও বিষোদগার করা হয়।এমনকি আটকের পর প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ না করে বরং অবর্ণনীয় নির্যাতনের চেষ্টা চালানো হয় এসব বাংলাদেশীর উপর।
এদিকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে লেঃ কমান্ডার আবরার হাসান জানান তিন তরুন নিজেদের ভারতে জম্ম হয়েছে দাবি করায় অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। যদিও তাদের বিষয়ে বিশদ তদন্তসহ পরিবারের অপরাপর সদস্যদের তথ্য যাচাইয়ের পর কারাগারে ঐ তরুনদের বিষয়ে পুলিশ পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।
এদিকে সংবাদ সম্মেলন চলাকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে আগত পুতুল আক্তার কবিতা নামের এক নারী দাবি করেন তার ছোট ভাই মোঃ অনীক হোসেনকে উক্ত ৭৮ জনের সাথে জাহাজে উঠানো হয়। কিন্তু তার ভাই ছাড়া সকলেই লোকালয়ে ফিরতে সক্ষম হলেও তার ভাইয়ের কোন হদিস মিলছে না। তার ভাই গত ২২ এপ্রিল গুজরাটে থাকা তার ভাবিকে আনতে সেখানে গিয়েছিল বলেও দাবি করেন উক্ত নারী।
এদিকে পুশইন হওয়া ব্যক্তিদের নিজ নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে বিদায় দেয়ার সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রনী খাতুন প্রত্যেকের হাতে পানি ও খাবার স্যালাইন উঠিয়ে দেন। এসময় শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হুমায়ুন কবির ছাড়াও নড়াইল থেকে আসা জেলা বিএনপি নেতা এম রেজাউল ইসলামসহ পুশইন হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
নিজ নিজ বাড়িতে পিরতে সহায়তা করায় শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যদের প্রতি ধন্যবাদ জানান ৩৭ বছর ধরে ভারতে বসবাসরত হারুন শেখ। সেখানে অবস্থানরত আট সন্তানসহ স্ত্রীকে ফিরে পেতে তিনি সরকারের আন্তরিক হস্তক্ষেপও কামনা করেন। এসময় বাসে উঠার প্রাক্কালে তিনিসহ আরও কয়েকজন গত তিনদিন ধরে অব্যাহত সেবায় আপ্লুত হয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন।
Leave a Reply