জি এম আমিনুল হক: সাতক্ষীরার শহর থেকে গ্রামÑ সব জায়গায় মশার উপদ্রব ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পরপরই মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। শিশু, বৃদ্ধ, এমনকি গৃহপালিত পশুও রেহাই পাচ্ছে না। নোংরা পরিবেশ, অপরিচ্ছন্ন ড্রেন ও জমে থাকা বর্জ্যের কারণে পুরো জেলার বিভিন্ন স্থানে মশা ও মাছির প্রজনন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই উপদ্রব আরও তীব্র হয়েছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন পর্যায়ে মশা নিধনে এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বছরের অন্যান্য সময় ফগার মেশিন ব্যবহার হলেও এবার সেটির তেমন কোনো ব্যবহার চোখে পড়ছে না। তাই দ্রুত ফগিং কার্যক্রম ও মশার প্রজননকেন্দ্র ধ্বংসে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নাগরিকেরা।
জানা গেছে, ৩১.১০ বর্গকিলোমিটারের সাতক্ষীরা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। প্রায় দুই লাখ মানুষের এই পৌর এলাকায় কাঁচা–পাকা মিলিয়ে প্রায় ২০০ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। আছে দেড় শতাধিক ডাস্টবিন, কসাইখানা ও গণশৌচাগার। শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া প্রাণসায়ের খালও এখন মশার অন্যতম প্রজননক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে এসব স্থানে ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার লার্ভাও বাড়ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
পৌরসভার বাসিন্দা জামশেদ আলী বলেন, ‘মশার কামড়ে রাতে ঘুমানো তো দূরের কথা, দিনে কাজ করা বা সন্তানদের পড়ালেখাও কঠিন হয়ে পড়েছে। আগে মাঝেমধ্যে ফগার মেশিন চলত, এখন তাও দেখা যায় না। মেয়র–কাউন্সিলর না থাকায় যেন সবাই অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে।’
পলাশপোল এলাকার মুসল্লি আবু দাউদ জানান, মসজিদে নামাজ পড়ার সময় মশার কামড়ে মুসল্লিরা নাজেহাল হয়ে পড়ছেন। শহরের অনেক মসজিদেই একই অবস্থা।
নাগরিকেরা অভিযোগ করেন, পৌরসভার তরফে মাঝে মাঝে স্প্রে করা হলেও তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। অনেক সময় সঠিক নিয়মে ওষুধ প্রয়োগ না করায় মশার বংশবৃদ্ধি থামছে না।
মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত বলেন, ‘জলাবদ্ধ এলাকা, ড্রেন ও নালা-নর্দমায় জমে থাকা পানি মশার প্রজনন বাড়াচ্ছে। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা না থাকায় সমস্যা আরও তীব্র হচ্ছে।’
জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক এড. শেখ বেলাল হোসেন বেলাল বলেন, ‘শুধু স্প্রে করে সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। আধুনিক প্রযুক্তি ও কার্যকর ওষুধ ব্যবহার জরুরি।’
মশার উপদ্রবে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে উল্লেখ করে তিনি পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের কাছে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান।
Leave a Reply