আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং খাদ্যের গভীর সংকট তৈরি হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। সারা দেশে লেগেছে হাহাকার। দেশটিতে প্রচন্ড হারে বেড়েছে খাদ্য-পানির দাম। শ্রীলঙ্কার তামিলরা এখন ভারতে আসার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যেই শ্রীলঙ্কার ১৬ জন ভারতে ঢুকেছেন। তারা শরণার্থী হিসেবে ভারতে ঢুকছেন। দেশটি থেকে ভারতে যাওয়া শরণার্থীরা জানিয়েছেন সেখানে চাল প্রতি কেজিতে শ্রীলঙ্কার মুদ্রায় ৫০০ টাকা অবধি পৌঁছেছে। ৪০০ গ্রাম পাউডার দুধের দাম ৭৯০ টাকা। এক কেজি চিনির দাম ২৯০ টাকা। ১৯৮৯ সালে গৃহযুদ্ধের সময় যেভাবে মানুষ পালাতো এবারেও সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কান শরণার্থীদের দু’টি দল ভারতের তীরে এসে পৌঁছেছে। ছয়জনের একটি দল রামেশ্বর এলাকায় আসছিল সে সময় ভারতীয় কোস্ট গার্ড বাহিনী তাদের বাঁচায়। নৌকাটি ফোর্থ আইল্যান্ডে ফেঁসে গিয়েছিল। শরণার্থীরা শ্রীলঙ্কার উত্তর জাফনা এলাকা থেকে আসছে। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবর অনুযায়ী, তামিলনাড়ু পুলিশ জানিয়েছে শ্রীলঙ্কায় গভীর সংকট তৈরি হয়েছে। তাই দেশটির শরণার্থীরা ভারতে ঢুকছে। শ্রীলঙ্কার উত্তরদিকে তামিল প্রভাবিত এলাকা রয়েছে। তামিলনাড়ু ইন্টেলিজেন্সের সূত্র মতে এটা শুধুমাত্র সূচনা। এখনও ওখান থেকে অনেক মানুষ আসবেন। ইন্টেলিজেন্সের তথ্য অনুযায়ী, খুব তাড়াতাড়ি আরও ২০০০ শ্রীলঙ্কান শরণার্থী ভারতে ঢুকবেন।শ্রীলঙ্কার কাছে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার শেষ হয়ে গেছে। জরুরি সামগ্রী বাইরে থেকে আনার জন্যও উপযুক্ত টাকা নেই দেশটির কাছে।
লঙ্কান রাজনৈতিক সংগঠন ইলাম পিপলস রেভোল্যুশনারি লিবারেশন ফ্রন্টের প্রধান সুরেশ প্রেমচন্দ্রন বলেন, দেশব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির কারণে নির্মাণ শ্রমিক ও দিনমজুররা খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছেন… অর্থনীতি স্থিতিশীল না হলে আরও বেশি লোকের দেশত্যাগ করার আশঙ্কা রয়েছে। শ্রীলঙ্কার এমন দুর্দশার পেছনে করোনাভাইরাস মহামারির দায় থাকলেও সেটি একাই দোষী নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্রীলঙ্কার এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বহু বছর ধরে একের পর এক অলাভজনক মেগা প্রকল্পে অর্থায়ন আর অদূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই এমন ঘোর বিপদে পড়েছে দক্ষিণ এশীয় দেশটি। কাগজের অভাবে স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে শ্রীলঙ্কা। কারণ, কাগজ আমদানির মতো বৈদেশিক মুদ্রা তাদের কাছে নেই। বিদেশি ঋণের ভারে আজ জর্জরিত দ্বীপরাষ্ট্রটি। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় ঠেকেছে, তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যয়ও মেটাতে পারছে না। যার ফলে জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে আর কখনো এতটা দুরবস্থায় পড়েনি দেশটি।
Leave a Reply