শ্যামনগর প্রতিনিধি: প্রায় পাঁচ মাস সময় বাকি থাকতে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকুলীয় জনপদ শ্যামনগরে। হাট-বাজার, বিপনী বিতানসহ চায়ের দোকান আর গ্রাম-গঞ্জের সর্বত্র এখন আলোচনার বিষয় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। দলীয় মনোনয়নসহ প্রার্থী নির্বাচন ও ভোটের নানাবিধ হিসাব-নিকাষ আর যুক্তি-তর্ককে ঘিরে সরগরম সমগ্র জনপদ। দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থক ছাড়াও নির্বাচনী এ আমেজ ইতিমধ্যে ছুঁয়েছে সংসদীয় আসনের ভোটারসহ সব সাধারণ মানুষকে। সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদীতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সরব উপস্থিতি এলাকাজুড়ে বিশেষ এক নির্বাচনী আবহ তৈরী করেছে।
এদিকে নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করায় রাজনৈতিক দলগুলোর মত তোড়জোড় শুরু করেছে সংসদীয় আসনের সাম্ভব্য প্রার্থীরা। সরকার দলীয় সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে তৎপরতা চালালেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে দ্বীধাগ্রস্থ বিএনপি-জামায়াত সেক্ষেত্রে কিছুটা কৌশলী। যদিও সব পক্ষই ইতিমধ্যে কর্মী সমর্থক ও শুভান্যুধায়ীদের সংগঠিত করার পাশাপাশি নিজেদের মত করে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। অতীতের ভুল-ভ্রান্তি শুধরে দলীয় কর্মী সমর্থকসহ সাধারন মানুষের পাশে থাকার প্রতিশ্রতি দিয়ে জনমত গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। বিরোধীয় পক্ষের নানা দুর্বলতা উল্লেখ করে সাম্ভব্য প্রার্থীরা আগামী নির্বাচনে দল ও নিজের পক্ষে ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি রীতিমত প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়াচ্ছেন। তৃণমুলের সমর্থন আদায় ছাড়াও তারা দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিতে কেন্দ্রের আস্থা অর্জনে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন। নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ মানুষ এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে নির্বাচনকে ঘিরে সবগুলো রাজনৈতিক সংগঠনের জোর প্রস্তুতি রয়েছে। অংশগ্রহণের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে থাকলেও বিএনপি ও সমমনা দলের নেতারা ভিতরে ভিতরে নির্বাচনের মাঠে যথেষ্ট সক্রিয়। ইতিপুর্বে সংসদীয় এ আসন থেকে একক কিংবা জোটবদ্ধভাবে চারটি প্রধান দলই এক বা একাধিকবার নির্বাচিত হওয়ায় এবারের নির্বাচনে তারা কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। শ্যামনগর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও কালিগঞ্জের আংশিক (৮টি) মোট ২০ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৪ আসনে বর্তমান মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখেরও সামান্য কিছু বেশি। সর্বশেষ দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের দখলে থাকা এ আসনে ২০০৮ সালে মহাজোটের টিকিটে জাতীয় পার্টির প্রার্থী স্বল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়। ১৯৯৬ সালে শ্যামনগর আসন আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও ১৯৯১ সালের পর থেকে বিএনপি ও জামায়াত একক এবং জোটবদ্ধভাবে তিনবার এ আসন থেকে জয়ী হয়। জানা যায় জামায়াত ও আওয়ামী লীগের বিশেষ ভোট ব্যাংক থাকায় উভয় দলই নির্বাচনের সময় অন্যদের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় থাকে। তদুপরি পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেলের পাশাপাশি নানান উন্নয়ন কর্মকান্ডকে সামনে এনে স্থানীয় ভোটারদের আকৃষ্ট করতে তৎপর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। পক্ষান্তরে নাগালের বাইরে চলে যাওয়া দ্রব্যমুল্যসহ দলীয় নেতাকর্মীদের উপর বর্তমান সরকারের দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলে ধরে পরিবর্তনের আহবান জানাচ্ছে জামায়াত। একইভাবে বিএনপির ভাষায় ভোটাধীকার ফিরিয়ে আনা এবং দলীয় প্রধানের বন্দীদশা থেকে মুক্তিসহ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলের ভুলভ্রান্তি তুলে ধরে জনমত গড়তে ব্যস্ত বিএনপি। আবার সরকারের ব্যর্থতায় জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিএনপি জামায়াতের ধ্বংসাত্বক কর্মকান্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চাইছে জাতীয় পাির্ট। সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মী সূত্রে জানা গেছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সাতক্ষীরা-৪ আসনে আওয়ামী লীগ হতে দলের প্রধান দুই নেতাসহ ৫জন মনোনয়ন চাইবেন। টানা দু’বারের সাংসদ শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম জগলুল হায়দার তৃতীয় বারের মতো প্রার্থী হতে আগে থেকে মাঠে রয়েছেন। এছাড়া দলের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম আতাউল হক দোলন প্রাথীতা ঘোষণা দিয়ে গনসংযোগ শুরু করেছেন। এছাড়া কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও দলের সাধারণ সম্পাদক সাইদ মেহেদী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম শফিউল আযম লেনিন ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী মাসুদা খানম মেধা দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের তুলনায় বিএনপিতে মনোনয়ন প্র্যাশীর সংখ্যা তুলনামুলক কম। নির্বাচন প্রশ্নে দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকলেও ইতিমধ্যে নির্বাচনী মাঠ সাজাতে ব্যস্ত যুক্তরাজ্য বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক এম মনিরুজ্জামান। এছাড়া জাতীয় পার্টি (নাফি) থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়া বর্তমান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী মো. আলাউদ্দীন মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে। এছাড়া জেলা বিএনপির আহবায়ক এড. সৈয়দ ইফতেখার আলী অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনে এই আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তার পৈত্রিক নিবাস কালিগঞ্জ উপজেলার দুদলী গ্রামে। তিনি দলের জেলা আহবায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর দলের জেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও আন্দোলন সংগ্রামে ব্যাপক ভূমিকা রাখলেও এখনো পর্যন্ত নিজের নির্বাচনের বিষয়ে তেমন কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায়নি। এ আসনে জামায়াত দলীয় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম ইতোমধ্যে পোস্টার ফেস্টুন লাগিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন। এছাড়া একাদশ নির্বাচনের আগে বিকল্পধারায় যোগ দেয়া সাবেক এমপি এইচ এম গোলাম রেজা শ্যামনগর থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে নিশ্চয়তা মিলেছে। এই আসন থেকে জাতীয় পাটির আব্দুস সাত্তার মোড়ল এবং জাসদের অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী নির্বাচন করবেন বলে জানান গেছে।
Leave a Reply