আজকের সাতক্ষীরা দর্পণ ডেস্ক: “সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশের অভিযানে বিপুলপরিমাণ সরকারি ঔষধসহ আটক-১” শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র হাতে ওই বিপুল পরিমাণ সরকারি ঔষধসহ এক ব্যক্তি আটক হয়। আটক মো. রাজীব উদ্দীন (৩৫) সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ উপজেলার সাদেক আলী গাজীর ছেলে। চোরাচালানের উদ্দেশ্যে ওষুধগুলো মজুদ করা হয়েছিল। পুরাতন সাতক্ষীরা (কলবাগান পাড়া) এলাকার বাসিন্দা মো. ফজলুর রহমান (৫৫) এর দোতলা বিল্ডিং ঘরের নিচতলার ভাড়াটিয়া ধৃত রাজীব উদ্দীন (৩৫)। রাজীব উদ্দীনের ভাড়া বসতঘরের খাটের নিচে সাজানো অবস্থায় সরকারি ঔষধ: কিলম্যাক্স-২৫০ মি:গ্রা: ট্যাবলেট ৬৬৫ পিস, সেফিজিম ক্যাপসুল ৪০০ (মি:গ্রা:) ৪২০পিস, অগমেন্টিন ৬২৫ মি:গ্রা: ৩০০পিস, অসটোক্যাল জিএক্স ১৫০০মি:গ্রা: ৭২০ পিস, লোসারটন পটাশিয়াম ট্যাবলেট ৫০ মি:গ্রা: ২২০০পিস, গ্লিক্লাজাইট ৮০০ মি:গ্রা: ১১৫০ পিস, ইসোমিপ্রাজল ২০মি:গ্রা: ১৫০পিস ঔষধ উদ্ধার করা হয়। বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধ কালোবাজারে বিক্রির আগে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ আটক করেছে। এজন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশ প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু রাজীব উদ্দীন এ বিপুল পরিমাণ ওষুধ পেলো কোথায়? সরকারি হাসপাতাল থেকে কেউ না কেউ রাজীব উদ্দীনের মাধ্যমে ওষুধগুলো কালো বাজারে পাঠাচ্ছিলেন। এখন আরও কিছু প্রশ্ন সামনে এসেছে এভাবে কী জনগণের টাকায় কেনা সরকারি ওষুধ কালো বাজারে বিক্রি হয়? তা না হলে ওষুধ যায় কোথায়? ওষুধ পাচারের সাথে কারা জড়িত? এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজার দায়িত্ব অপরাধ বিশেষজ্ঞদের। আমরা শুধু বলতে চাই ২০২২ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন সরকারের সম্মতি পেয়ে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আকস্মিক অতিপ্রয়োজনীয় ২০টি জেনেরিকের ৫৩ ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল। অন্যান্যবারের চেয়ে সেইবার কোনো ওষুধের দাম দ্বিগুণ, তিনগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এরপর ওষুধের দোকানগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে ওষুধ বিক্রি করতে থাকে।
ওই বছর ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটির ৫৮তম সভায় এসব ওষুধের পুনর্র্নিধারিত দাম অনুমোদন করা হয়। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বহুল ব্যবহৃত ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মাত্রার প্যারাসিটামলের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫০ থেকে শতভাগ। মাত্র ৪০টাকার এমোক্সিসিলিনের দাম করা হয়েছে ৭০টাকা, ২৪টাকার ইনজেকশন ৫৫টাকা। ৯টাকার নাকের ড্রপের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৮টাকা। কোনো কোনো ওষুধের দাম ৯৯ থেকে ১৩২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ওষুধের এই হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এরপর দফায় দফায় বাড়তে থাকে ওষুধের দাম। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কয়েক দয়ায় বাড়ে জবিন রক্ষাকারী ওষুধের দাম। চলতি সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। ওষুধ কোম্পানী ও ওষুধ ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে ওষুধ বিক্রি করে আসছে বলে আমরা অভিযোগ শুনে আসছি। ওষুধের বাড়তি খরচ যোগাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের ২০২৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৮দশমিক ৬শতাংশ ব্যক্তি নিজেই বহন করেন। এ ব্যয় করতে গিয়ে বছরে ৮৬লাখের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। চিকিৎসার মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি প্রায় ৬৫ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে ওষুধ কিনতে।
সরকারি হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের জন্য বিনামূল্যে সরকার ওষুধ সরবরাহ করছে। বিনামূল্যের সেই ওষুধ কালো বাজারে বিক্রি করতে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জড়িত বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। গরীব, অসহায়, দুস্থ সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সরকার বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করছে। সেই ওষুধ কালো বাজারে বিক্রি কারো কাম্য হতে পারে না। ওষুধ পাচার ও চোরাই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এ প্রত্যাশা আমাদের।
Leave a Reply