নিজস্ব প্রতিনিধি: সুস্থ্যভাবে বাড়িতে ফিরে আসার জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন ইউক্রেনে আটকে থাকা বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলাদেশ সমৃদ্ধ’র চীফ অফিসার মনসুরুল আমীন। বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরাস্থ নিজ বাড়িতে তিনি এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
সেদিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মনসুরুল আমীন জানান,সেদিন আমরা যে যার কেবিনে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি আগুন জ¦লছে। পরবর্তীতে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা সেই আগুন নিভিয়ে ফেলি। এরপর সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে আমরা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে পেরেছি। তবে সহকর্মীকে হারানোটাই আমাদের বড় আফসোস হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সাতক্ষীরা পৌরসভাস্থ ‘এখানেই নোঙর’ বাড়িতে যেয়ে বৃহস্পতিবার সরেজমিনে কথা হয় মনসুরুল আমীনসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে। মনসুরুল আমীন খানের পিতা সেলিম খাঁন জানান, এই পরিবারটিতে সব উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর হতাশার অবসান ঘটেছে কারন তাদের প্রিয় সন্তানটি যুদ্ধক্ষেত্র মাড়িয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছে। সাতক্ষীরার ‘এখানেই নোঙর’ বাড়িটি যেন আলো ঝলমল করে উঠেছে তাদের নাবিক সন্তান মনসুরুল আমিন খান গিনির উপস্থিতিতে। তিন পুত্রসন্তান ফাহিমি, ফারহান এবং ফারদিনের চোখেমুখে হাসির যে ঝিলিক,তা ছুঁয়ে যাচ্ছিল স্ত্রী আশরুকা সুলতানার চোখে-মুখেও। মনসুরুল আমিন খান জানান, ২ মার্চ স্থানীয় সময় বিকাল ৫টার দিকে হঠাৎ বিকট বিস্ফোরনে কেঁপে উঠি আমরা। আমরা সেই সময় যে যার কেবিনে ছিলাম। উপরে গিয়ে দেখি বিস্ফোরন হয়েছে। ধোয়া উড়ছে, আগুন জ¦লছে। আমরা দ্রæত আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করলেও ততক্ষনে হারিয়েছি আমাদের সহকর্মী এক নাবিককে। ‘আমরা আগুন দেখেছি, জাহাজ বিধ্বস্ত হতে দেখেছি, আমরা মৃত্যু দেখেছি’ এমন মন্তব্য করে মনসুরুল আমিন খান গিনি বলেন, ‘সে দৃশ্য ভয়াবহ। চারদিকে বিকট শব্দ। আকাশজুড়ে ধোয়ার কুন্ডলী। আমাদের আতংকের শেষ ছিল না। বাড়িতে মাঝেমধ্যে মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু আতংক আর হতাশা কিছুতেই পিছু ছাড়েনি। তবু ভরসা ছিল একদিন বাড়ি ফিরবোই’।
মনসুরুল আমিন খান আরও বলেন, শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটিয়েছি। বাংলাদেশ সরকার, শিপিং কর্পোরেশন এবং সর্বোপরি রোমানিয়া দূতাবাসের আন্তরিক চেষ্টায় আমরা সুস্থভাবে দেশে ফিরে আসতে পারায় সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
স্ত্রী আশরুকা সুলতানা জানান, যে উদ্বেগে ছিলাম,তা বলে বোঝানো যাবেনা। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। তিনি আরও জানান,প্রথম থেকেই সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিল। প্রথমে তাদেরকে ব্যাংকারে নেওয়া হয়েছে। পরে বিকল্প ব্যবস্থায় তাদের সরিয়ে দেশে আনা হয়েছে। সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
Leave a Reply