স্পোর্টস ডেস্ক: তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ১৩.৪ ওভারে ১১৯/২ ( পারভেজ ৩৩*, তানজিদ ৫৫*; সাইফ ১৯, লিটন ৭) আয়ারল্যান্ড ১৯.৫ ওভারে ১১৭/১০ (ইয়াং ০*; টিম ১৭, হ্যারি ৫, টাকার ১, ক্যাম্ফার ৯,স্টার্লিং ৩৮, ডেলানি ১০, অ্যাডায়ার ৮, হামফ্রিজ ১, ডকরেল ১৯, হোয়াইট ৫)
১১৮ রানের মামুলি লক্ষ্যে খেলতে নেমে পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট পড়েছে শুধু। তার পর দেখা গেলো তানজিদ তামিমের বিধ্বংসী ব্যাটিং। তার ফিফটিতে ভর করে চট্টগ্রামে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দাপুটে এই জয়ে স্বাগতিকরা সিরিজও নিশ্চিত করেছে ২-১ ব্যবধান।
৩৮ রানের ওপেনিং জুটিতে মঞ্চ গড়েন সাইফ হাসান ও তানজিদ তামিম। সাইফ ১৯ রানে ফিরলে ভাঙে শুরুর জুটি। লিটনও দ্রুত ৭ রানে ফিরলে প্রান্ত আগলে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন তানজিদ। ৩৫ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১১তম ফিফটি। শেষ পর্যন্ত ৩৬ বলে ৪টি চার ও ৩ ছক্কায় ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। সঙ্গী পারভেজ হোসেনও কম ছিলেন না। ২৬ বলে ১ চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৩ রানে অপরাজিত থেকেছেন। তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে তারা ৫০ বলে যোগ করেন ৭৩ রান।
পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের ৪৮ রান শুরুর জুটি ভাঙার পর লিটন দাস বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৫.২ ওভারে হ্যারি টেক্টরের বলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ তুলে ফিরেছেন ৭ রানে। বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট হারায় ৪৬ রানে। লিটনের বিদায়ে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ ২ উইকেটে তুলেছে ৪৮ রান।
৩৮ রানে ভাঙলো শুরুর জুটি দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও সাইফ হাসান মিলে দারুণ সূচনা করেছিলেন। ২৪ বলে যোগ করেন ৩৮ রান। চতুর্থ ওভারের শেষ বলে এসে বড় স্ট্রোক খেলতে কাটা পড়েন সাইফ। ইয়াংয়ের বলে ক্যাচ তুলে ১৯ রানে ফেরেন তিনি। সাইফের ১৪ বলের ইনিংসে ছিল ২টি চার ও ১টি ছয়।
দারুণ বোলিংয়ে আইরিশদের ১১৭ রানে অলআউট করেছে বাংলাদেশ।
সিরিজ জিততে আয়ারল্যান্ডকে ১৯.৫ ওভারে ১১৭ রানে গুটিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিল আয়ারল্যান্ড। পাওয়ার প্লেতে ৫১ রান তুলতে পারলেও আইরিশদের ২ উইকেট তুলে তাদের ছন্দপতন ঘটায় স্বাগতিক দল। সেই ধাক্কায় পরে আর বাংলাদেশের বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। চাপ তৈরি করে নিয়মিত বিরতিতে দারুণ বোলিংয়ে উইকেট তুলে নিতে থাকে টাইগাররা। শুরুতে দুর্দান্ত ব্যাট করতে থাকা পল স্টার্লিংও চাপে পড়ে ৩৮ রানে রিশাদের শিকার হন। এর পর আর কোনও আইরিশ ব্যাটার সেভাবে ইনিংস গড়তে পারেননি।
বল হাতে সবচেয়ে সফল ছিলেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান। ৩ ওভারে মোস্তাফিজ ১১ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। রিশাদ ৪ ওভারে ৩ উইকেট নিলেও খরচ করেছেন ২১ রান। ২১ রানে দুটি নেন শরিফুল ইসলাম। মেহেদী ও সাইফউদ্দিন নিয়েছেন একটি।
শরিফুল ফেরালেন ডকরেলকে
শেষের দিকে সতীর্থদের ব্যর্থতার মাঝে প্রান্ত আগলে রান তোলার চেষ্টা করছিলেন ডকরেল। ১৮.২ ওভারে তাকে ফেরান শরিফুল। ডকরেল ২৩ বলে ফেরেন ১৯ রানে।
মোস্তাফিজের আঘাতে ৮ উইকেট নেই আয়ারল্যান্ডের ১৮তম ওভারে আইরিশদের আরও বিপদে ফেলেন মোস্তাফিজুরর রহমান। জোড়া আঘাতে তুলে নেন অ্যাডায়ার (৮) ও হামফ্রিজের (১) উইকেট। তাতে ১১০ রানে অষ্টম উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড।
রিশাদের তৃতীয় শিকার ডেলানি ৭৩ রানে পঞ্চম উইকেট পতনের পর রানের চাকা সচলের চেষ্টা করেন ডকরেল-ডেলানি জুটি। ২০ রান যোগ করেন তারা। ১৫.৩ ওভারে রিশাদের বলে ভেঙেছে এই জুটি। মেরে খেলতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন ডেলানি। ১২ বলে ১০ রান করেন তিনি। আয়ারল্যান্ড ষষ্ঠ উইকেট হারায় ৯৩ রানে।
রিশাদের দ্বিতীয় শিকার স্টার্লিং শুরুটা ঝড়ো গতির হলেও দ্রুত উইকেট তুলে আয়ারল্যান্ডের রান তোলার গতি কমিয়ে দিতে পেরেছে বাংলাদেশ। প্রান্ত আগলে স্টার্লিং চেষ্টা করছিলেন সেই গতি বাড়াতে। ১১তম ওভারে রিশাদের বলে বাউন্ডারি মেরে পরের বলেই বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে ৩৮ রানে ফিরেছেন আইরিশ অধিনায়ক। স্টার্লিংয়ের ২৭ বলের ইনিংসে ছিল ৫ চার ও ১ ছক্কা।
রিশাদের ঘূর্ণিতে পড়লো চতুর্থ উইকেট দুর্দান্ত বোলিংয়ে দ্রুত ৪ উইকেট তুলে আইরিশদের রান তোলার পথে কাটা বিছিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। তিন উইকেট পতনের পর কিছুটা হাল ধরার চেষ্টা করছিলেন স্টার্লিং-ক্যাম্ফার। ওই সময় বাউন্ডারিও আসছিল না। চাপ কমাতে রিশাদের দশম ওভারে স্টাম্প ছেড়ে বড় শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন ক্যাম্ফার। তাতে ৬৬ রানে পড়েছে আয়ারল্যান্ডের চতুর্থ উইকেট।
দ্রুত তৃতীয় উইকেটও পেয়ে গেলো বাংলাদেশ দারুণ সূচনা পেয়েছিল আয়ারল্যান্ড। কিন্তু তাদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের বিপরীতে দ্রুত তিন উইকেট তুলে বাংলাদেশ তাদের ছন্দপতন ঘটিয়েছে। পাওয়ার প্লের পর সপ্তম ওভারের প্রথম বলেই নতুন ব্যাটার লরকান টাকারকে এলবিডাব্লিউতে ফেরান মেহেদী। তাতে আয়ারল্যান্ড ৫১ রানে হারায় তৃতীয় উইকেট।
শুরুতে আম্পায়ার আউট দেননি। বাংলাদেশ রিভিউ নেওয়াতে মেলে সাফল্য।
পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে আয়ারল্যান্ডের ৫১ টস জিতে দুর্দান্ত সূচনা পেয়েছিল আয়ারল্যান্ড। চার ওভারেই স্কোর ছিল বিনা উইকেটে ৩৮। একই ওভারের শেষ বলে ওপেনার টিম টেক্টরকে (১৭) বোল্ড করেন শরিফুল ইসলাম। ষষ্ঠ ওভারে নতুন ব্যাটার হ্যারি টেক্টরকেও (৫) বিদায় দেন মোস্তাফিজ। বাংলাদেশ দুটি উইকেট তুলে নিতে পারলেও স্টার্লিংয়ের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৬ ওভারে সফরকারীদের স্কোর হয়ে যায় ২ উইকেটে ৫১।
শেষ টি-টোয়েন্টিতে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এটাই বাংলাদেশের শেষ সিরিজ। তাই বছরের শেষটা স্বস্তিতে শেষ করার লক্ষ্য বাংলাদেশের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি জিতলে সিরিজও নিশ্চিত হবে। সেই লক্ষ্যে চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে শুরুতে টস হেরেছে বাংলাদেশ। টস জিতে শুরুতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক পল স্টার্লিং। গত ম্যাচেও শুরুতে টস জিতে ব্যাট করেছিল তারা।
প্রথম ম্যাচে ৩৯ রানে হারের পর দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে চার উইকেটে জিতে সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরেছে বাংলাদেশ।
একাদশে কারা
শেষ ম্যাচে তিনটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। ফিরেছেন শরিফুল ইসলাম, রিশাদ হোসেন ও শামীম হোসেন। বাদ পড়েছেন নাসুম আহমেদ, তানজিম হাসান ও নুরুল হাসান। তিনটি পরিবর্তন এনেছে আয়ারল্যান্ডও। ফিরেছেন কার্টিস ক্যাম্ফার। তাছাড়া ক্রেইগ ইয়াং ও বেন হোয়াইটকে নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ একাদশ: তানজিদ হাসান, পারভেজ হোসেন, সাইফ হাসান, লিটন দাস (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), তাওহীদ হৃদয়, শামীম হোসেন, মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, শরিফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান।
আয়ারল্যান্ড একাদশ: পল স্টার্লিং (অধিনায়ক), টিম টেক্টর, হ্যারি টেক্টর, লরকান টাকার (উইকেটরক্ষক), কার্টিস ক্যাম্ফার, জর্জ ডকরেল, গ্যারেথ ডেলানি, মার্ক অ্যাডায়ার, ক্রেইগ ইয়াং, ম্যাথু হামফ্রিজ ও বেন হোয়াইট।
Leave a Reply