বেনাপোল প্রতিনিধি: ভারত সরকার ট্যুরিস্ট, বিজনেস ভিসা প্রায় বন্ধ করে দেওয়ায় আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট বেনাপোল দিয়ে ভারতে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেকের নিচে। যাত্রী সংকটে পরিবহন সংখ্যা কমেছে ৪গুন। ফলে বিপাকে পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্টরাসহ স্থানীয় ব্যাবসায়িরা। মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসায় যাত্রী পারাপার ও কমতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকেই ভারতীয় দূতাবাস বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ আরোপ করে। ফলে কমতে শুরু করে যাত্রী যাতায়াত। যেখানে এ সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ৬থেকে ৯হাজার যাত্রী যাতায়াত করতো সেখানে গত ৩দিনে যাতাযাত করেছে১১হাজার৭৯জন। যা ভারতে গেছে ৫৬১০জন। এসেছে ৫৪৬৯জন। যেখানে ৫০/৫৫টি বাস কোম্পানীর ২শতাধিক বাস ছাড়তে বেনাপোল থেকে সেখানে ৪০থেকে ৪৫টি দুরপাল্লার বাস চাড়ছে বলে জানান পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্টরা। যাত্রী সংকটে ৫শতাধিক পরিবহন শ্রমিকের কাটছে মানবতার জীবন যাপন। ভিসা প্রাপ্তিসহ এ থেকে পরিত্রান চান পরিবহন শ্রমিক সাহর ও মিহিরসহ শ্রমিকেরা। ভারতীয় ভিসা না ছাড়ায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে দুর পাল্লার পরিবহন চলাচল। শ্রমিকদের কষ্ট বাড়ছে। বেকার হয়ে পড়েছে অনেকে। এ থেকে পরিত্রানে দু’দেশের সরকারের সহযোগিতা চান বেনাপোল পরিবহন সমিতির নেতা সেক্টর ও মিজানুর রহমান মিজান।
বেনাপোল দিয়ে ভ্রমনকর বাবদ বছরে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে সরকার। ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে যাত্রী যাতায়াত কমে যাওয়ায় এই খাতে রাজস্ব আদায়ে ধ্বস নামতে শুরু করেছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পরিবহন ব্যাবসায়িরা। সরকার হারাচ্ছেন রাজস্ব। দ্রুত ভিসা প্রদানের দাবী ভুক্তভোগীদের।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ আহসান বলেন, বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে পূর্বে ৮ থেকে ৯ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতো। ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর যাত্রীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। ৫ আগস্টের আগে প্রতিমাসে গড়ে ১৫ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আয় হতো এ খাত থেকে। বর্তমানে বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে পাসপোর্ট যাত্রী পারাপারে রাজস্ব আদায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটিতে নেমে এসেছে। একই সময় আগে প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ হাজারেরও অধিক যাত্রী পারপার হতো এ পথে। বর্তমানে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে অর্ধেকের নিচে। ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ১৯দিনে বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে দু’দেশের মধ্যে ৬৪হাজার ৬৭৬জন দেশি বিদেশী পাসপোর্টযাত্রী পারাপার করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছেন ৩৭ হাজার ৫৮৭জন ও ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ৩৩হাজার ৬৯জন। বাংলাদেশী যাত্রীদের বিজনেস ভিসা বন্ধ থাকলেও ভারতীয় যাত্রীরা বিজনেস ভিসায় প্রতিদিন শত শত লোক আসা যাওয়া করছে। তবে বেড়েছে ল্যাগেজ ব্যবসার সাথে জড়িত ভারতীয় যাত্রীর আগমন।
বেনাপোল থেকে কোলকাতার দূরত্ব কম হওয়ায় অধিকাংশ পাসপোর্টযাত্রীরা এ পথে ভারতে যেতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে থাকেন। ভারতে যাতায়াতকারী যাত্রীদের অধিকাংশই রোগী। তবে ট্যুরিস্ট, বিজনেস, স্টুডেন্ট যাত্রীদের সংখ্যা নেই বললেই চলে। ভারত সরকার ভিসা প্রায বন্ধ করে দেয়ায় বেকায়দায় পড়েছে রোগীরা। ভারত সরকার বিজনেস ভিসা না দেওয়াতে দেশের বৃহত্তর স্থল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের উপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনে পাসপোর্টধারী কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ভারত সরকার ভিসা বন্ধ করাতে বিপাকে পড়েছেন রোগীসহ নানা পেশার মানুষ। বর্তমানে আগের থাকা ভিসায় পারাপার করছে পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। তবে যাত্রী কম থাকায় দ্রুত পাসপোর্ট অনলাইনে এন্টিসহ সকল কাজ হওয়াতে খুশি যাত্রীরা। তবে ভিসার মেয়াদ শেষের দিকে হওয়াতে বিপাকে পড়তে পারেন রোগীরা এমনটা আশঙ্কা করছেন তারা। দ্রুত সকল সমস্যা কাটিয়ে দুই দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের নতুন করে ভিসার ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশ সরকার এমনটাই চাওয়া সকলের। আবেদনের দীর্ঘদিন পর কোন রকম চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসা পেলেও ভ্রমন ভিসা একদমই নেই।
ভারতগামী যাত্রীরা বলেন, আগে থেকে জানতাম ইমিগ্রেশনে অনেক লম্বা লাইন থাকে, অনেক যাত্রীর ভীড় থাকতো। কিন্তু আজ এসে দেখলাম মানুষজন একেবারে নেই বললেই চলে। নিরিবিলি যাচ্ছেন তারা।
Leave a Reply