ন্যাশনাল ডেস্ক: ভূমিসেবার ক্ষেত্রে দুর্নীতি বা অন্যান্য অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। গত ১১ নভেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদের সই করা পরিপত্রে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে- ‘ভূমিসেবায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও জনবান্ধব ভূমিসেবা নিশ্চিতকল্পে কর্মচারীদের অবশ্য পালনীয়’ শিরোনামের পরিপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ভূমি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি রোধ এবং সেবা প্রদান প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও আধুনিকায়নে ভূমি মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এর মধ্যে ঘরে বসে ই-নামজারি, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি অন্যতম। এ পদক্ষেপগুলো জনগণকে সেবা প্রদান আরও সহজ, দ্রুত এবং সুষ্ঠু করতে নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ভূমিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের কর্মচারীদের কার্যকলাপ নিয়ে জনগণের অসন্তোষ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই জনগণ কাঙ্ক্ষিত ভূমিসেবা পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, সেবা প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ও অনিয়ম হচ্ছে এবং দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে।
বিশেষ করে নামজারি এবং পরবর্তীতে হোল্ডিং খোলার মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি, অবৈধ অর্থ লেনদেন এবং সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে অশোভন আচরণের মতো ঘটনা ঘটছে।
এ ধরনের অভিযোগ বা ঘটনায় দেশের ভূমিসেবা ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও সেবার মান নিয়ে জনমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, যা জনগণের প্রতি মন্ত্রণালয়ের সেবা দেওয়ার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও মানদণ্ড বিঘ্নিত করছে।
ভূমিসেবায় এ ধরনের পরিস্থিতি অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অগ্রহণযোগ্য বলে ভূমি মন্ত্রণালয় মনে করে। জনগণের সেবা এবং তাদের অধিকার রক্ষায় মাঠপর্যায়ের সব কর্মচারীকে পেশাদারিত্ব ও সেবার মান নিশ্চিতকল্পে ভূমি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছে পরিপত্রে।
নির্দেশনাগুলা হলো প্রত্যেক কর্মচারীকে সেবাগ্রহীতাদের সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনোরূপ বিলম্ব, গাফিলতি বা অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
সব কর্মচারীকে ভূমিসেবা প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে দুর্নীতি বা অন্যান্য অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে সদাচরণ এবং তাদের জিজ্ঞাসা ও সমস্যা আন্তরিকভাবে গ্রহণ ও যথাসময়ে সমাধান কর্মচারীদের অন্যতম দায়িত্ব। সেবা সংক্রান্তে জনগণের সঙ্গে কোনো ধরনের খারাপ আচরণ গ্রহণযোগ্য হবে না।
জনগণের সঠিক তথ্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে, যা তাদের সম্পত্তি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক। ভূমি সংক্রান্ত যে কোনো সেবা প্রদানে সঠিক ও হালনাগাদ তথ্য দিতে হবে। ভূমি সেবা কার্যক্রমের সুষ্ঠু তদারকি নিশ্চিতে কার্যকর পরিদর্শন, সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ পরিদর্শন প্রতিবেদন তৈরি এবং তা যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে পাঠানো নিশ্চিত করতে হবে।
ভূমি মন্ত্রণালয় জনগণের সেবা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে বদ্ধপরিকর। জনগণের সেবায় স্বচ্ছতা, সততা এবং নিষ্ঠা প্রদর্শন করতে হবে। ভূমিসেবা প্রদানে আন্তরিক ও যতœশীল হতে এবং সেবার মান উন্নয়নে সচেষ্ট থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয় পরিপত্রে।
পরিপত্রটি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) ভূমি প্রশাসনের সব দপ্তর প্রধানের কাছে পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply