নিজস্ব প্রতিনিধি: বন্ধুত্বের আসল রূপ দুঃসময়ে প্রকাশ পায়। সেই সত্যকে স্মরণীয় করে রাখলেন পলাশপোল এসএসসি’ ৮৯ ব্যাচের সহপাঠীরা। গত ২৯ আগষ্ট শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটায় মৃত্যুবরণ করেন সাতক্ষীরার জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে কর্মরত মুহুরী আমির আলী (৫৪)। মৃত্যুর আগে এক সপ্তাহ ধরে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। ঘটনার সূত্রপাত হয় সাতক্ষীরা জজ কোর্টের প্রাঙ্গণে। বাথরুম থেকে বের হওয়ার সময় হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যান তিনি। দ্রুত তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে একদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। এক সপ্তাহ চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হলেও হঠাৎ শুক্রবার বিকেলে ব্রেন স্ট্রোক করলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
আমির আলী ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিনি তিন সন্তানের জনক। বড় মেয়ে ইতোমধ্যে বিয়ে দিয়েছেন, ১৮ বছরের ছেলে বর্তমানে বেকার এবং ছোট মেয়ের বয়স মাত্র সাত বছর। বাবার অকাল মৃত্যুতে পরিবারটি চরম সংকটে পড়েছে। বন্ধুর মৃত্যুতে ব্যাচের সহপাঠীরা গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং ১৩ সেপ্টেম্বর শনিবার সাতক্ষীরা জেলার বাঁশদহা ইউনিয়নের সাতানি গ্রামে আমির আলীর বাড়িতে যান। সেখানে তারা প্রয়াত বন্ধুর কবর জিয়ারত করেন, তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের খোঁজখবর নেন। এ সময় সহপাঠীরা একত্রে প্রয়াত আমির আলীর স্ত্রীর হাতে ৫৫ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা তুলে দেন।
বন্ধুত্বের এই মহতী উদ্যোগে অংশ নেন সহপাঠী কামাল, শাহাদাত, মাসুম, আজগার, আইয়ুব, আজিজ, আমিরুজ্জামান বাবু, রেজা, টিপু, মাহবুব, সফি, হাবীব, কবিরুল, কামরুল, কালাম, মিন্টু, শাহিন। তারা বলেন, “আমির শুধু আমাদের সহপাঠী ছিলেন না, তিনি ছিলেন আমাদের পরিবারের একজন। আজ তিনি নেই, কিন্তু আমরা তার পরিবারের পাশে থাকব।”
আমির আলীর স্ত্রী সহপাঠীদের উপস্থিতিতে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “আজ আমার স্বামীকে হারালেও তার সহপাঠীরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, এটি আমার পরিবারের জন্য বড় আশীর্বাদ।”
এ সময় স্থানীয়রা সহপাঠীদের এমন মানবিক উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এ ধরনের বন্ধুত্বই সমাজে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
Leave a Reply