জি এম রাজু আহমেদ নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগরে অবস্থিত বেসরকারি বন্ধন হাসপাতালে চিকিৎসায় চরম অবহেলার কারণে এক নবজাতকের মৃত্যু ঘটেছে। অভিযোগের প্রমাণ মেলায় তদন্ত শেষে হাসপাতালটির সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এবং লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।
সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগরে অবস্থিত বেসরকারি ‘বন্ধন হাসপাতাল’-এ চিকিৎসায় অবহেলার ঘটনায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। ঘটনার তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললে ১৬ জুন ২০২৫ তারিখে হাসপাতালটির সকল কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা জারি করে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়।
সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুস সালাম স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় জানানো হয়, ৪ জুন গঠিত তদন্ত কমিটি সরেজমিনে হাসপাতালটি পরিদর্শন করে। প্রতিবেদনে উঠে আসে, গত ২৪ মে বিকেল ৪টার দিকে রামনগর গ্রামের মোস্তাকিম বিল্লার স্ত্রী মনিরা পারভীন প্রসব ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও হাসপাতালে কোনো রেজিস্টার্ড চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত নার্স উপস্থিত ছিলেন না।
প্রসূতির অবস্থার অবনতি সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী ও সেবা সময়মতো না পাওয়ায় প্রসব প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ও বাধার সৃষ্টি হয়, যার ফলে নবজাতক শ্বাসরোধে মারা যায়। তদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে— “Asphyxia due to prolonged/obstructed labour”।
তদন্তে উঠে আসা ভয়াবহ অব্যবস্থাপনার পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালের কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ অমান্য করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করে দেওয়া হয়। এই নির্দেশনার অনুলিপি পাঠানো হয়েছে—স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, খুলনা বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য), সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, উপজেলা স্বাস্থ্য ও নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে।
এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বছরের পর বছর ধরে লাইসেন্সবিহীন ও মানহীন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যেগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাদের দাবি, দ্রুত এসব অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের যৌথ অভিযান চালিয়ে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আর না ঘটে।
Leave a Reply