আজকের সাতক্ষীরা দর্পণ ডেস্ক: মহান ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছরেও কলারোয়ায় বেশিরভাগ স্কুল-কলেজে গড়ে ওঠেনি শহীদ মিনার। এছাড়া উপজেলার কোনো মাদ্রাসায় নেই একটিও শহীদ মিনার। যদিও কলারোয়া আলিয়া মাদ্রাসা একটি শহীদ মিনার নির্মাণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলো। যা জেলা পরিষদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। তবে আজও এর প্রাথমিক কোনো কাজ শুরু হয়নি। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ২টি ইউনিয়নের কোথাও আজও স্থাপন করা হয়নি একটি শহীদ মিনার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলারোয়া পৌরসভা ও উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে শহীদ মিনার রয়েছে ৩৪টি। এর মধ্যে কলারোয়া ফুটবল ময়দানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, কলারোয়া সরকারি কলেজ, কলারোয়া গার্লস পাইলট হাইস্কুল, কলারোয়া সরকারি প্রাইমারি স্কুল, শেখ আমানুল্লাহ ডিগ্রি কলেজ, বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ, তুলসীডাঙ্গা সরকারি প্রাইমারি স্কুল, গোপিনাথপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুল-এই ৮টি শহীদ মিনার কলারোয়া পৌরসভাধীন। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নির্মিত শহীদ মিনারগুলো হলো: হেলাতলা ইউনিয়নের দমদম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হেলাতলা আইডিয়াল হাইস্কুল, রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজীরহাট হাইস্কুল, ঝাঁপাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জয়নগর ইউনিয়নের সরসকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরসকাটি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জয়নগর বদরুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয় ও ধানদিয়া হাইস্কুল, দেয়াড়া ইউনিয়নের খোরদো হাইস্কুল, দেয়াড়া হাইস্কুল, কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের পানিকাউরিয়া হাইস্কুল, কেরালকাতা ইউনিয়নের কেকেইপি হাইস্কুল, চন্দনপুর ইউনিয়নের গয়ড়া বাজার, বয়ারডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চান্দুড়িয়া কেসিজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চন্দনপুর ইউনাইটেড কলেজ, চন্দনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্ত্বর, হিজলদি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের সোনাবাড়িয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, সোনাবাড়িয়া সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সোনাবাড়িয়া সোনার বাংলা ডিগ্রি কলেজ ও বিবিআরএনএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়নের কেএল হাইস্কুল, বোয়ালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, যুগিখালি ইউনিয়নের বামনখালি হাইস্কুল প্রাঙ্গণ। উপজেলার কয়লা ও জালালাবাদ ইউনিয়নে কোনো শহীদ মিনার নেই বলে জানা গেছে। কয়লা হাইস্কুলে একটি শহিদ মিার নির্মাণের জন্য ভিত্তি স্থাপন করা হলেও তার নির্মাণ কাজ এ পর্যন্ত শুরুই হয়নি-এমনটি সর্বশেষ জানা গেছে। সূত্র জানায়, উপজেলায় ৩৪টি এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা রয়েছে। যার মধ্যে সিনিয়র মাদ্রাসার সংখ্যা ৫টি।
এসব মাদ্রাসার কোথাও গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়নি একটিও শহীদ মিনার। তবে হতাশার বিষয় হলো, উপজেলার ১২টি বেসরকারি কলেজের মধ্যে ৭টি কলেজ ক্যাম্পাসে নির্মাণ করা হয়নি কোনো শহীদ মিনার। কলারোয়া সরকারি কলেজ, শেখ আমানুল্লাহ ডিগ্রি কলেজ, বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ, চন্দনপুর ইউনাইটেড কলেজ ও সোনাবাড়িয়া সোনার বাংলা ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে কেবলমাত্র শহীদ মিনার রয়েছে। এমআর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান নিজ অর্থায়নে কয়েক বছর আগে কলারোয়ার সোনাবাড়িয়া হাইস্কুল, কেকেইপি হাইস্কুল, হেলাতলা হাইস্কুল, চন্দনপুর কলেজ ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার তৈরি করিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া কলারোয়া ফুটবল মযদানে ‘স্বাধীনতা’ স্তম্ভ¢ ও শহীদ মিনার তাঁরই অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়, যা সবারই জানা। এ প্রজন্মের অনেক শিক্ষার্থী কলেজে এসে ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার দেখছে না। এদের অনেকেই তাদের স্কুল প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার দেখে এসেছে। শহীদ মিনারবিহীন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মহান একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতে পারে না। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বেসরকারি কলেজের চেয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়। কেননা, উপজেলার ১৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। অপরদিকে উপজেলার ১২৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে কলারোয়া, তুলসীডাঙ্গা গোপিনাথপুর, রঘুনাথপুর, ঝাঁপাঘাট ও বয়ারডাঙ্গা-এই ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সাতক্ষীরা জেলার ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব ভাষা সৈনিক প্রয়াত শেখ আমানুল্লাহ তাঁর জীবদ্দশায় অনেক অনুষ্ঠানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার গড়ে তোলার কথা বলতেন। তিনি প্রয়াত হয়েছেন ১১ বছর। কিন্তু তাঁর লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে প্রয়াত এই ভাষা সৈনিকের প্রতি আমরা প্রকৃত শ্রদ্ধা দেখাতে পারি। এর জন্য প্রয়োজন উদ্যোগ ও সমন্বিত প্রয়াস। এ বিষয়ে আলাপকালে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারা জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিজস্ব উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণ করিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি আলোকপাত করেছেন। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেতনা ছড়িয়ে দিতে ও নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেম-ভাষাপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে সকল শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে গড়ে তোলা করা দরকার শহিদ মিনার-এমনটি মনে করেন ভাষাপ্রেমী মানুষ।
Leave a Reply