আশাশুনি প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। খোলপেটুয়া নদীর প্রবল গ্রোতের টানে সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারে বিছট গ্রামের শহিদ মোড়লের বাড়ির পাশে বেড়িবাঁধে ধ্বস লেগেছে। দ্রুত বাঁধ মেরামত না করতে পারলে যে কোন মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ ওই বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে আনুলিয়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যেতে পারে। বিগত ২০২৪ সালের ২৬-২৭ মে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতগ্রস্থ বেড়িবাঁধ সংস্কেোর জন্য ২০২৫ সালের মার্চ মাসে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু কার্যাদেশ পাওয়ার পর ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে সময়মত কাজ না করা ও সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পাউবো কর্মকর্তার (এসও) মোমিনুল হকের কর্তব্য অবহেলার কারণে বেড়িবাঁধে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
পাউবো কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় রেমালের অঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের বিছট গ্রামের শহিদ মোড়লের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় ৭৫ মিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এই বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য চলতি বছরের মার্চ মাসে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। বাঁধটি সংস্কারে মাটির কাজের পাশাপাশি ভাঙ্গন প্রতিরোধে রিভার সাইডে ৭ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং ও ৭৫ মিটার জিও ফিল্টার ব্যবহার করার কথা।
বাঁধটি সংস্কারের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ খুলনার মেসার্স আমিন এন্ড কোং কার্যাদেশ পান। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত মার্চ মাসে বাঁধ সংস্কারের কার্যাদেশ পাওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গন পয়েন্ট এখনো পর্যন্ত কাজ শুরু করেননি। শুধুমাত্র অল্প কিছু জিও ব্যাগ বালি ভর্তি করে রেখে দিয়েছেন। ঠিকাদার নিজে অথবা তার কোন প্রতিনিধি এই এলাকায় কখনো আসেননি। কাজের সাব কন্টাক্ট নেওয়া এক ব্যক্তির কয়েকজন লোক অনেক আগে কিছু জিও ব্যাগ বালু ভর্তি করে রেখে গেছেন। তার পর আরও কারো দেখা মেলেনি। বিছট গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারের কাজে দায়িত্বে থাকা সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর সেকশন অফিসার (এসও) মোমিনুল হক এ বিষয়ে কোনো খোঁজখবর রাখেন না বা এলাকায় আসেন না। ভাঙ্গনের বিষয়টি তাকে বারবার অবহিত করার পরও তিনি কোন গুরুত্ব দেন না। ফলে বেড়িবাঁধের ভাঙন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় বসবাসকারী গ্রামবাসীর মধ্যে। বিছট গ্রামের শহিদ মোড়ল জানান, খোলপেটুয়া নদীর প্রবল ¯্রােতের টানে তার বাড়ির পাশে বেড়িবাঁধের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ধসে পড়েছে। ক্রমশ এই ভাঙন আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে যে কোন মুহূর্তে সম্পূর্ণ বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। কখন বাঁধ ভেঙে যায় সেই ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারিনা। বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদেরকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর সেকশন অফিসার (এসও) মোমিনুল হক জানান, বিছট গ্রামের ভাঙন পয়েন্টে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার জন্য কিছু বস্তায় বালু ভরে রাখা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এগুলো ডাম্পিং করা হবে। এছাড়া দ্রুত মাটির কাজও শুরু করা হবে। তিনি ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন বলে জানান।
এ বিষয় সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাযকিয়া জানান, বিছট গ্রামের নদী ভাঙন দীর্ঘদিনের। বর্তমান ভাঙন পয়েন্টের মেরামতের টেন্ডার প্রক্রিয়া আমি এই স্টেশনে যোগদান করার অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার সেকশন অফিসার এটি দেখভাল করেন। আমি অফিসিয়াল কাজে ঢাকায় আছি। ফিরে এসে ভাঙন পয়েন্টে দ্রুত কাজ শুরুর ব্যবস্থা নিব।
Leave a Reply