আবু সাঈদ সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা আদালতে বিচার ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা শিকার বিচার প্রার্থীসহ অনেকেই। দুর্নীতিবাজ পেশকারদের ( বেঞ্চ সহকারী ) তারিখ বাণিজ্যের কারণে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা। বাদী কিংবা বিবাদীর কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে পেশকাররা ধার্য তারিখ কম বেশি করেন। তারিখ বাণিজ্যে পেশকারসহ দায়িত্ব থাকা আদালতের কর্মচারীরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এধরনের অভিযোগ একাধিক আইনজীবী ও আইনজীবী সহকারী ও আদালতে সেবা নিতে আসা একাধিক ভুক্তভোগীরাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সরকারি কৌশলী ও আইনজীবীরা এ প্রতিবেদক কে বলেন, সাতক্ষীরা জর্জ কোর্ট আদালতে টাকা না দিলে কিছুই করতে পারবেন না। টাকা দিলে এককে দুই আর দুইকে এক করা কোনও ব্যাপারই না।
এদিকে জজ কোর্ট আদালতের পেশকারদের তারিখ বাণিজ্যের ব্যাপারে একাধিক আইনজীবী অভিযোগ করেছেন। তারা বলেন, পেশকারদের নানা রকম কৌশল রয়েছে। কিভাবে বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া যায় তা তারা ভালো বোঝেন। ধার্য তারিখ পরিবর্তন করে বিচারকাজে বাধাগ্রস্ত করেন পেশকাররা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মামলার নথি গায়েব, ধার্য তারিখ পরিবর্তনসহ বিভিন্ন অনিয়ম। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা একাধিক আইনজীবী বলেছেন, পেশকারদের বিরুদ্ধে দরখাস্ত দিলেও কিছুই হবেনা, বরং সমস্যাটা আরো জটিল হবে।পেশকারদের সঙ্গে বিরাট একটি দালাল চক্র আছে যারা প্রভাবশালী। তাদের ছত্রছায়ায় যে কোনও ধরনের অনিয়ম করেই পার পাওয়া যায়। আজ পর্যন্ত কোনও অনিয়মের সঠিক তদন্ত হয়েছে কিনা তাদের জানা নেই। এমন কোনো আইনজীবী নেই যে পেশকারদের টাকা দেন না একটি মামলায় জামিন করালেই পেশকাররা টাকা নেন বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে। কোনো একটা মামলা ফাইল করতে গেলেই পেশকার এবং জিআরোদের টাকা দিতে হয়। পেশকারদের টাকা না দিলে সঠিকভাবে মামলার তারিখ ধার্য হয় না। টাকা দিলে, মামলার তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসা যায় আর টাকা না দিলে তারিখ আগ-পিছের কারসাজিতে ব্যস্ত থাকেন পেশকাররা। আইনজীবীরা আরো বলেন, বিচারপ্রার্থীদের আদালতে ঘাটে ঘাটে নিয়মবহির্ভূত টাকা গুনতে হয়। আদালতে এই ঘুষ নতুন কিছুই নয়। আদালতে ঘুষ বাণিজ্য বিচারপ্রার্থীদের বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। মামলার নথি দেখা,হাজিরা দেওয়া, জামিননামা দেওয়া, জামিন শুনানি করা, মামলার নকল তোলাসহ মামলা সংক্রান্ত যেকোন সেবায় ঘুষ ছাড়া এখন চলেই না। এসব ঘুষ বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় আইনজীবী অথবা আইনজীবী সহকারীদের মাধ্যমে। ফলে বিচারপ্রার্থীদের পদে পদে হয়রানি ও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কিন্তু এসব দুর্নীতি ঠেকানোর কোনো উদ্যোগ নেই, তদন্ত নেই, বেচার নেই। এ বিষয়ে কোন নজর দারিও নেই আদালতের সংশ্লিষ্ট সবার সামনেই ঘটছে এসব দুর্নীতি কিন্তু সবাই নীরব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আইনজীবী সহকারি জানান, প্রত্যেকটি পেশকার প্রতিদিন এজলাসে দোকান খুলে বসে থাকেন। আদালতের এজলাস হলো বড় দোকান। পেশকারদের টাকা আইনজীবীরাও দিচ্ছেন, আমরাও দিচ্ছি। পেশকাররাতো জজ সাহেবদের ওপরে তৃতীয়ত, কোনও মামলার ব্যাপারে পেশকারের কাছে তথ্য চাইলে বা ফাইল দেখতে চাইলে একশ’, দেড়শ কিংবা আড়াইশ টাকাও দিতে হয়। টাকা না দিলে কোনও মামলার ফাইল দেখতে দেয়া হয় না। চতুর্থ পেশকারদের কাছে টাকা দিলে যে কোনও ধরনের তথ্য দেখা যায় কিংবা পাওয়া যায়। চাইলে তার ফটোকপিও করিয়ে দেন পঞ্চমত, পেশকাররা সংঘবদ্ধ দালালচক্রের সঙ্গে যোগসাজশে কাজ করেন। বিভিন্ন মামলায় তদবিরবাজদের কাছ থেকে ব্যাপক অংকের টাকা নিয়ে ধার্য তারিখ পরিবর্তন করে থাকেন।
ফৌজদারি কিংবা দেয়ানি উভয় মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় পেশকারদের ব্যাপক ভূমিকা আছে। কোনো মামলায় বিচারকের সামনে নথি উপস্থাপন, প্রকাশ্যে মামলার তারিখ ঘোষণা, মামলার নথির দাপ্তরিক কাজ করাসহ অনেক কাজই একজন পেশকারকে করতে হয়। একজন পেশকার যদি সৎ হন, তবে বিচারপ্রার্থীরা অনেক উপকার পাবেন। কারণ বিচারপ্রার্থীদের পেশকারদের সঙ্গেই সব যোগাযোগ করতে হয়। সাতক্ষীরা আদালতে অনিয়ম চিহ্নিত স্থানগুলো হলো ফাইলিং শাখা, সেরেস্তা, জিআর শাখা, আদালতের পেশকার, উমিদার, মামলার জিআরও, আদালতের পিয়ন, সমন জারীকারক সহ আদালতের বেশিরভাগ কর্মচারী অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত। আর এসব দুর্নীতিবাজদের হাতে জিম্মি আদালতের আইনজীবীরাসহ সাধারণ মানুষ। এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা নারী শিশু নির্যাতন দমন প্রতিরোধ ট্র্যাইবুনাল এর সরকারি কৌশলী এড শেখ আলমগীর আশরাফ বলেন আমি নতুন দায়িত্ব আছি আর এ গুলো আগেই থেকে চলছিল তবে এখন অনেক কমে গেছে।
Leave a Reply