নিজস্ব প্রতিনিধি: একটি বাইসাইকেল। সাইকেলটির পেছনের সিটে বিশেষ কায়দায় নির্মিত একটি বাক্স, যে বাক্সে বরফ দিয়ে সংরক্ষণ করা আইসক্রিম। আর সাইকেলটির সামনের অংশে বাঁধা একটি মাইক। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বাক্সে থাকা আইসক্রিমের গুনাগুন বর্ণনা করে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে-করতে হেটে চলেছেন একজন ব্যাক্তি। যার কাছে ছুটে যাচ্ছেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ যেখানে শিশুদের সংখ্যায় বেশি। এ দৃশ্য একসময়কার নিত্যদিনের তবে এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না। বলছি আবহমান গ্রামবাংলার অত্যন্ত পরিচিত একটি চরিত্রের কথা যিনি ‘আইসক্রিম ওয়ালা’ নামে পরিচিত। কিছু আইসক্রিম ওয়ালাদের আবার সাইকেল আর মাইক থাকেনা। তাদের এক হাতে থাকে আইসক্রিমের একটি বিশেষ পাত্র আর অন্য হাতে একটি ঘন্টা। সেই ঘন্টা বাজিয়েই তারা ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। একটা সময় ছিলো যখন রমরমা ব্যবসা ছিলো আইসক্রিম ওয়ালাদের কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এখন সময় ভালো যাচ্ছে না তাদের। কারণ এখন গ্রামাঞ্চলের দোকানগুলোতেও পৌঁছে গেছে রেফ্রিজারেটর এবং বিভিন্ন নামি-দামি ব্রান্ডের আইসক্রিম। মন করলেই হাতের নাগালে সুস্বাদু বিভিন্ন ফ্লেভারের আইসক্রিম পাওয়া যায় বলে এখন ক্রেতাদের কাছে কদর কমেছে আইসক্রিম ওয়ালাদের। আগের মতো কেনা-বেচা নেই বলে অনেক আইসক্রিম ওয়ালা বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। আবার অনেকই কোনরকমে টিকিয়ে রেখেছেন ব্যবসা। অন্যদিকে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর পর থেকে আইসক্রিম ওয়ালাদের বেচা-কেনা আরও কমে গেছে। ঠান্ডা খেলে করোনার ঝুঁকি বাড়তে পারে এই ভয়ে অভিভাবকরাও সন্তানদের আইসক্রিম থেকে দ‚রে রাখার চেষ্টা করছেন। ব্যবসার বর্তমান অবস্থার বর্ণনা করে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাঁড়ি এলাকার আইসক্রিম ওয়ালা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, গত দুই দশক ধরে আমি আইসক্রিমের ব্যবসা করছি। এখন থেকে কয়েক বছর আগেও বেচা-কেনা ভালো ছিলো কিন্তু এখন আর আগের মতো কেনা-বেচা হয় না। আগে কুলফি মালাই, দুধ মালাই, নারকেল আইসক্রিম, বস্তা আইসক্রিমসহ বিভিন্ন পদের এক-দেড় হাজার পিস আইসক্রিম প্রতিদিন বিক্রি হতো কিন্তু এখন তিন’শ পিস আইসক্রিমও বিক্রি করতে পারিনা। বিক্রি শেষ হওয়ার আগেই কিছু আইসক্রিম গলে যায়। কোন রকমে দিন চলছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নলকুড়া গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবির আহমেদ হৃদয় বলেন, যখন স্কুলে পড়তাম প্রতিদিন বাবা-মায়ের কাছে বায়না করতাম আইসক্রিম খাওয়ার জন্য। স্কুলের সামনে বসতো আইসক্রিম ওয়ালা ওখান থেকে অনেক আইসক্রিম খাওয়া হয়েছে তবে এখন আর আইসক্রিম ওয়ালাদের কাছ থেকে আইসক্রিম কেনা হয়না। আইসক্রিম খেতে মন চাইলে পাশের দোকান থেকে কিনে নিয়ে আসি। এখন তো আইসক্রিম ওয়ালাদেরও রাস্তা-ঘাটে আগের মতো দেখা যায়না।
Leave a Reply