নিজস্ব প্রতিনিধি: দীর্ঘ দেড় বছরের অধিক সময় সাতক্ষীরা উপকূলের বিস্তৃর্ণ এলাকা নদীর লবণ পানিতে ডুবে আছে। জলাবদ্ধতা এবং করোনা এই অঞ্চলের মানুষকে দুর্বিষহ অবস্থায় ফেলেছে। মানুষের জীবনযাত্রা কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর জোয়ার-ভাটা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। আমরা ভাটায় জাগি, জোয়ারে ডুবি। বেড়িবাঁধ ভাঙনের আতঙ্কে স্থানীয়দের তটস্থ থাকতে হয় সব সময়। দিনে দুইবার নদীর জোয়ারের পানিতে অনেক এলাকা এখনো তলিয়ে আছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন। চিকিৎসা, স্যানিটেশন, সুপেয় পানিসহ বিভিন্ন সংকটে বিপর্যস্ত এখনো উপকূলের লক্ষাধিক মানুষ। চারিদিকে পানি আর পানি। গত জুলাই মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও কোলে ঢালে পড়া আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের মাহমুদুল হাসানকে চারি দিকে পানি থাকায় মাটির উপর কোন রকম পলিথিন বিছিয়ে ইট গেথে সমাধি তৈরি করে দাফন করা হয় মৃতদেহ। কয়েকদিন পর লাশ পচে চারিদিকে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
এমন দুর্বিষহ দুর্ভোগের ভয়াবহ চিত্র বর্ণনা তুলে ধরে দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, জলাবন্ধতা নিরসন, সুপেয় পানি ও উপকূল সুরক্ষার দাবিতে পানির উপরে মানববন্ধন করে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরে ‘জলবায়ু ধর্মঘট’ কর্মসূচি পালন করেছে উপকূলবাসী।
শক্রবার বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানসহ বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ফেসটুন ও প্লাকার্ড নিয়ে হাটু ও কোমর পানিতে ভিজে ও নৌকায় দাঁড়িয়ে ঘন্টা ব্যাপী এই ‘জলবায়ু ধর্মঘট’ কর্মসূচি পালিত হয়। পরিবেশবাদী আন্দোলন ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশ এবং ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এর আহ্বানে এই ধর্মঘটে উপকূলের ভুক্তভোগী শত শত বাসিন্দারা অংশগ্রহণ করেন। এসময় বক্তব্য রাখেন স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এর সাতক্ষীরা জেলা সমন্বয়ক এস এম শাহিন আলম,জলবায়ু কর্মী জান্নাতুন নাঙ্গম, মমিনুর ইসলাম, রাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
জলবায়ু ধর্মঘট কর্মসূচী ও মানববন্ধনে বক্তরা বলেন ,জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে আজ উপকূল ক্ষতবিক্ষত। মানুষের বেঁচে থাকাটাই চ্যালেঞ্জ। লাখ লাখ মানুষ মানুষ উপকূল ছেড়ে কাজের সন্ধ্যানে চলে যাচ্ছে। তাই আগামী জলবায়ু সম্মেলনের আগেই ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, টেকসই বেঁড়িবাধ নির্মান এর বাস্তবায়ন দেখতে চন উপকূলবাসী।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয় গোটা সাতক্ষীরা উপকূল। পানিবন্দি হয়ে পড়ে উপকূলের লক্ষাধিক মানুষ। দুই হাজারেরও বেশি ঘর-বাড়ি ধসে পড়ে। এখনো ডুবে আছে শতাধিক ঘর-বাড়ি।
Leave a Reply