নিজস্ব প্রতিনিধি: ফিরেছে সোনালী আঁশে সোনালী দিন। এক সময় সোনালী আঁশ কৃষকের গলার ফাঁস হলেও বর্তমানে এই আঁশ কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন বাজারে জমে উঠেছে পাট কেনা-বেচা। দামও অনেক বেশী। বাজারে ভালো দাম পেয়ে খুশি পাটচাষিরা। সরজমিনে সাতক্ষীরার বিভিন্ন বাজারের পাটের আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, ইঞ্জিনচালিত ভটভটি ও ব্যাটারি চালিত ভ্যানে বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা বাজারে পাট বিক্রি করতে আসছে। আড়তে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮শত টাকা থেকে ৩ হাজার ১শত টাকা। উপজেলার বিভিন্ন আড়ৎ/বিক্রয় কেন্দ্রগুলো যেন বহু বছর পর প্রাণ ফিরে পেয়েছে। চলতি মৌসুমে পাট চাষের শুরুতে অনাবৃষ্টি দেখা দেয়। পানির অভাব থাকা সত্তে¡ও পাট চাষীরা শ্যালো ও ডিপ টিউবওয়েলের সাহায্যে সেচ দিয়ে জমি চাষ করেছেন। এবার পাট চাষে কৃষকের একটু বাড়তি খরচ হয়। তবে বাড়তি খরচ হলেও পাটের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষক ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখছে। গতবার পাটের ভাল দাম পাওয়ায় উপজেলার কৃষকরা পাট চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অফিস স‚ত্রে জানা গেছে, এবছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৪৪৮ হেক্টর জমি। লক্ষমাত্রা থেকেও প্রায় সাড়ে ৩’শ হেক্টর জমিতে পাটের বেশি আবাদ করেছে স্থানীয় পাটচাষীরা। সবচেয়ে বেশি পাটের আবাদ হয়েছে সাতক্ষীরার কলারোয়া এবং ইউনিয়নে ৯’শ হেক্টর জমিতে। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার মোট ২৮ টি কৃষি বøকে এবার এই পাটের আবাদ হয়েছে। এদের মধ্যে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ২৫৮ হেক্টর, লাবসা ইউনিয়নে ১৭০ হেক্টর, আগরদাড়ী ইউনিয়নে ৪৭০ হেক্টর, বৈকারী ইউনিয়নের ৩৪০ হেক্টর, কলারোয়া পৌরসভায় ৯৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। কথা হয় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পাট চাষী রফিকুল ইসলামের সাথে। কদমতলা বাজারে তিনি পাট বিক্রি করতে এসেছেন। তিনি বলেন, আমি আড়তে পাট বিক্রি করতে এসেছি। গত বছর প্রতি মণ পাট ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছি। এবার বিক্রি করছি প্রতি মণ ২ হাজার ৮শত থেকে ৩ হাজার ১শত টাকা দরে। দেবনগরের আবু ছিদ্দিক বলেন, জমি থেকে পাট কেটে প্রায় ৪/৫ মাইল দ‚রের খালে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এতে খরচ অনেক বেশী হলেও বাজার দর বেশী থাকায় আমারা খুশী। উপজেলার বৈকারী ইউনিয়নের মালিগ্রামের কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে ২২ মণ পাট পেয়েছি। আড়ৎ নিয়ে এসে ২ হাজার ৯শত টাকায় বিক্রি করে খুব ভাল লাগছে। এমন দাম থাকলে আগামী বছর ৬/৭ বিঘা জমিতে পাট চাষ করবো ইনশাল্লাহ। তবে এ হাটে আসা অনেক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, এক শ্রেণীর অসাধু দালাল ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ওজনে কারচুপীসহ ন্যায্যম‚ল্য থেকে কৃষক বঞ্চিত হচ্ছে। এব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাগণ হাট বাজার পর্যবেক্ষণ করার জন্য কৃষকরা আকুল আবেদন রেখেছে। কথা হয় কলারোয়া উপজেলার পাট ব্যবসায়ী কুদ্দুস আলীর সাথে তিনি বলেন, চলতি বছরের এখন পর্যন্ত কৃষকদের কাছ থেকে ২০০ মন পাট ক্রয় করে তা সাতক্ষীরার বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করেছি। তিনি আরো বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ মণ পাট কিনি। সাতক্ষীরার জামাল বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে কৃষকদের কাছ থেকে পাট ক্রয় করে তা আড়তে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে পাট কিনে আড়তে এনে বিক্রি করলে গাড়ি ভাড়া ও লেবার খরচ বাদ দিয়ে মণপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা লাভ হয়। গতবছর চাষিরা পাটের ভালো দাম পাওয়ায় এবার বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, উপজেলার পাট চাষীদের আধুনিক উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে কৃষকদের বিনাম‚ল্যে পাট বীজ-সার ও প্রণোদনা দেয়ায় এবছর তারা আগ্রহভরে পাটের আবাদ করেছে। তিনি আরো বলেন, পাটজাত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহারে পাটের দাম যথাযথ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা পাট আবাদে এগিয়ে এসেছে। যার ফলে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা থেকেও সাড়ে ৩’শ হেক্টর জমিতে বেশি পাটের আবাদ হয়েছে।
Leave a Reply