তুহিন হোসেন:
ঋতুরাজ বসন্তকে ছুঁয়ে এসেছে ভালোবাসার দিনে। কোকিলের কুহুতানে মুখরিত বাংলার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে পহেলা ফাগুনের এই দিনে হয়েছে ভালোবাসার জয়গান। হূদয় থেকে হূদয়ের কথাগুলো আজ ভাষা পায়েছে। প্রেমিক তার প্রেমিকাকে কিংবা প্রেমিকা তার প্রেমিককে আমি তোমাকে ভালোবাসী কথাটি প্রকাশ করেছে ‘হ্যাপি ভ্যালেনটাইন’স ডে’ উচ্চারণ করে।
বসন্ত মানেই নতুন সাজে প্রকৃতি মুখরিত হওয়ার দিন। ফুল ফোটার পুলকিত সময়। শীতের বিবর্ণতা কাটিয়ে নতুন পাতায় ঋদ্ধ হয়ে উঠছে রুক্ষ প্রকৃতি। ফাগুনের ঝিরঝিরে বাতাস আর কোকিলের মিষ্টি কুহুতানে উন্মাতাল হয়েছে ধরনি। আনন্দ আর উচ্ছ্বাস মুখরতায় ভরে উঠছে মন-প্রাণ।
‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে/তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে/কোরো না বিড়ম্বিত তারে।’ এভাবেই ঋতুরাজ বসন্তের বন্দনা করেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রকৃতিতে যেমন, শিল্প-সাহিত্য, এমনকি রাজনীতিতেও বসন্ত বাঙালি জীবনে তাৎপর্যময়।
করোনা মহামারির আতঙ্ক, স্বজন হারানোর বেদনা, জীবিকার অনিশ্চয়তা সব কিছু পেছনে ফেলে মানুষ যখন আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে, তখন ধরনিতেও ‘বসন্ত এসে গেছে’। বিবর্ণ প্রকৃতিতে জেগে উঠছে নতুন জীবনের ঢেউ।
বসন্ত ও ভালোবাসা মিলেমিশে একাকার হয়ে সাতক্ষীরা জেলাসহ সারা দেশে মেতে উঠছে ফাল্গুনী আমেজে। ফাগুনের আগুনলাগা উচ্ছ্বাস প্রিয়তমের হাতে হাত রেখে প্রিয়ার কোমল হূদয় ব্যাকুল হয়ে উঠছে ঘরবাঁধার স্বপ্নে। ঋতুরাজের দখিনা বাতাস তাদের হূদয়-জমিনে ভালোবাসার ঢেউ তুলছে। বাসন্তী রঙের শাড়িতে খোঁপায় হলুদ গাঁদা আর মাথায় ফুলের টায়রার সুষমার শৈল্পিকতা ফুটে উঠছে তরুণীদের। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তরুণরাও দিয়ে যাচ্ছে।
বসন্ত আর ভালোবাসার মিশেলের এমন দিনকে বরণ করতে ফুলের দোকান আর মার্কেটের শাড়ি-পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে গত কয়েকদিন ধরেই বেশ ভিড়।
বসন্তমিশ্রিত ভালোবাসার এমন দিনে পরস্পরের শুভেচ্ছায় সিক্ত হবে দুজন। ফুল, কার্ড, চকোলেট বিনিময়ের পাশাপাশি কবিতা ও ছন্দমিশ্রিত ক্ষুদে বার্তায় ভরে গেছে মোবাইল ফোনের ইনবক্স। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে যাচ্ছে পরানের গহিনের উষ্ণতা। বিনোদনকেন্দ্র ও পার্কসহ অনেক জায়গায় ভালোবাসা দিবস এবং বসন্তের ছোঁয়া থাকছে।
দেশের নানা জায়গায় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নাচ, গান, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজনে পহেলা ফাগুন ও ভ্যালেনটাইনস ডে উদযাপন করছে। তবে করোনা মহামারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সব আয়োজন থাকছিল স্বল্প পরিসরে। এ সব উৎসবে তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন পার্ক, খাবারের দোকান মুখর হয়ে উঠছে।
Leave a Reply