নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, আলোকিত পথে গনমাধ্যমগুলি উদ্যোগ নিতে পারে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ১৫ শতাংশ মানুষ প্রতিবন্ধী। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা অর্ধেক। অপরদিকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৯.৭ শতাংশ মানবসন্তান প্রতিবন্ধী। সমাজসেবা অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ২৭ লাখ প্রতিবন্ধী রয়েছে বাংলাদেশে। সাতক্ষীরার ক্ষেত্রে এই হিসাব ৪৬ হাজারে পৌছেছে। শনিবার এই তথ্য উপস্থাপন করে বেসরকারি সংস্থা ডবি্উলডিডিএফ(উইমেন্স উইথ ডিজঅ্যাবলড্ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন) এর আয়োজকরা বলেন, সমাজ জুড়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নারী প্রতিবন্ধীরাও একই ধরনের সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। তারা পরিবার থেকে অবহেলা এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে সহিংসতার মুখে পড়ছেন। আলোকিত সমাজে তারা আসতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছেন। সংস্থাটির উদ্যোগে আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তারা বলেন, এমন অবস্থা থেকে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে হলে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবন্ধী নারী শিশু ও পুরুষদের নিজ নিজ সক্ষমতা অনুযায়ী তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারলে তারা উপকৃত হবে। এজন্য দেশের গনমাধ্যমগুলি এসব বিষয়ে সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ করে সমাজকে আরও সচেতন করতে পারে। একইসাথে বিচারপ্রার্থীদের জন্যও বিচার পাওয়া অনেকটাই সহজ হতে পারবে। সংবাদপত্রে প্রতিবন্ধীদের নানা ধরনের সফলতার কথা তুলে ধরে তাদের উৎসাহ যোগানো যেতে পারে। সাতক্ষীরা শহরের অদ‚রে তুফান কনভেনশন সেন্টারে ‘প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতি সহিংসা দ‚রীকরনে গনমাধ্যম সাংবাদিকদের ভ‚মিকা’ শীর্ষক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় গতকাল সকালে। ডবি্উলডিডিএফ এর নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন্নাহার মিষ্টির সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন সাতক্ষীরা সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন নাহার, সমাজসেবক ডা. আবুল কালাম বাবলা ও প্রেসক্লাব সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপী। জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান নিজের বিবেককে অন্যের বিবেকের কাছে নিয়ে যেতে হবে উলেখ করে বলেন, আমাদের মধ্যে সহানুভ‚তি ও সহমর্মিতা থাকাটা জরুরী। তাদের চাহিদার কথা সরাসরি উচ্চারন করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, একজন প্রতিবন্ধী প্রথমেই পারিবারিক বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন। এরপর সমাজেও তিনি একই অবস্থায় অবহেলিত থাকেন। ১৯৭২ এর পবিত্র সংবিধানের উলেখ করে তিনি বলেন, সকল নাগরিকের সমান অধিকার এবং আইনের চোখে সবাই সমান এমন কথা উলেখ থাকলেও সামাজিক বাস্তবতায় আমরা সেই লক্ষ্যে পৌছাতে পারছি না। তিনি বলেন, যারা বিচারপ্রার্থী হন তাদের পক্ষে যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত থাকতে হয়। একজন বিচারক কেবলমাত্র আইনের চোখ দিয়েই এসব মামলা বিচার করে থাকেন। ফলে তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে যথাযথভাবে মামলা না করা গেলে একজন বিচারপ্রার্থী ন্যায়বিচার থেকে বি ত হতেই পারেন। সাতক্ষীরায় সাড়ে ৬২ হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে জানিয়ে জেলা ও দায়রা জজ বলেন, এর জন্য এককভাবে বিচারক নন, আমরা সংশ্লিষ্ট সবাই দায়ী। জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান আরও বলেন, প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা দরকার। এজন্য গ্রাম পর্যায়ের স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা তালিকা তৈরী করে তাদেরকে সরকারি সহযোগিতা পৌছে দেওয়া একইসাথে কর্মক্ষেত্রে নিয়োগের সুযোগ করে দিতে হবে। প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয় বরং তাদেরকে কর্মীর হাতে পরিনত করতে হলে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। তাদেরকে স্কুলকলেজে শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের সব ধরনের সুযোগ করে দিতে হবে। তাদের প্রতি কোনরকম বৈষম্যম‚লক আচরন না করে মানবিক দৃষ্টিতে তাদের লালন করতে হবে। কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, দৈনিক দক্ষিনের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারন সম্পাদক এম কামরুজ্জামান, নিউজ ২৪ এর আমিনা বিলকিস ময়না, আজকের সাতক্ষীরার নির্বাহী সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম কবির, দৈনিক আমাদের অর্থনীতির শেখ ফরিদ আহমেদ ময়না, গ্রামের কাগজের রেজাউল ইসলাম দৈনিক ভোরের কাগজের ড. দিলীপ কুমার দেব, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিবন্ধী কল্যান সমিতির সাধারন সম্পাদক মোঃ আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। কর্মশালাটির সঞ্চাালনায় ছিলেন মোঃ হুমায়ুন কবির।
Leave a Reply