স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরা সদর সাব-রেজিস্টার অমায়িক বাবুর বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয় আলোচনায় এসেছে। চরম জনদুর্ভোগে পড়েছে সাতক্ষীরাবাসী। পাশাপাশি রাষ্ট্র হারাচ্ছে রাজস্ব। সাব-রেজিস্টারের সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির ফলে সাধারণ জনগণ প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে। সরকারি এই অফিস এখন দালালের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সাব-রেজিস্টার অমায়িক নিজে ও তার সিন্ডিকেট সদস্যরা মাদকাসক্ত, চারিত্রিকভাবে নির্লজ্জ এবং পর-নারীতে আসক্ত। নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতে সরকারকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করে চলেছে। দুর্নীতিবাজ, অসৎ ও নেশাগ্রস্ত কিছু কর্মচারী (দলিল লেখক, নকলনবিশ ও দালালচক্র) নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। বড়বাবু পরিমল, অফিস সহায়ক মহসিন, নৈশ প্রহরী জাহিদ ও নকল নবিশ শামীমা আক্তার দীপা এই সিন্ডিকেটের মূল সদস্য। সাতক্ষীরা সদর সাব-রেজিস্টার অফিসে ঘুষ ছাড়া কোনো দলিল হয় না। এ যেন এক দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য।
মূলত রেজিস্ট্রি অফিসের প্রধান করণিক থেকে বিশেষ কোটায় তিনি সাব-রেজিস্টার পদে পদোন্নতি পান। সাতক্ষীরা সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যোগদান করার পর থেকে বেরিয়ে আসছে তার বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও নৈতিক স্খলনে জড়িয়ে পড়ার মতো ঘটনা। সিন্ডিকেটের মধ্যে অফিস সহায়ক মহসিন এর বাড়ি সাবেক আইন মন্ত্রীর এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হওয়ায় সাব-রেজিস্টার এর প্রতি রয়েছে তার বিশেষ সহযোগিতা ও প্রভাব। এছাড়া সাবেক সাব-রেজিস্টার রিপন মুন্সিকে নৈশপ্রহরী জাহিদ তাকে নারী ও মদ সরবরাহ করে থাকে।
বর্ণিত কর্মকর্তার অফিসে যেকোনো দলিল রেজিস্ট্রি হতে হলে সরকারের নির্ধারিত ফি এর পরিবর্তে তার নির্ধারিত অর্থ প্রদান করতে হয়। অন্যথায় সেবা প্রত্যাশীদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়। একটি সাফ কবলা দলিল লাখে ১ হাজার টাকা, পরবর্তী ১০ লাখ পর্যন্ত প্রতি লাখে ৪০০ টাকা, দশ লাখের ঊর্ধ্বে হলে প্রতি লাখে ৩০০ টাকা এবং দলিল মূল্য এক কোটির ঊর্ধ্বে হলে আলোচনার মাধ্যমে রেট ঠিক করা হয়। দানপত্র, হেবাবিল, এওয়াজ বদল, বন্টননামা, না-দাবি দলিলসহ সকল প্রকার দলিল রেজিস্ট্রিতে তার রেট অনুযায়ী অর্থ দিতে না পারলে দলিল রেজিস্ট্রি হয় না। এ সকল দলিলের ক্ষেত্রে তিনি আট হাজার টাকা থেকে বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন। তবে দলিলে দাতা বা গ্রহীতা অথবা জমির কোন সমস্যা থাকলে ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন। হিন্দুদের জমি রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে ঘুষের অর্থ আদায়ের জন্য তিনি বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। হিন্দুরা জমি বিক্রয় করে ভারতে চলে যায় বলে তিনি হিন্দুদের জমি রেজিস্ট্রিতে প্রাথমিকভাবে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট দলিল লেখকের মাধ্যমে দাতা ও গ্রহীতাকে তার কামরায় ডেকে এনে একান্তে কথা বলেন। তিনি সীমান্ত এলাকায় হিন্দুদের জমি রেজিস্ট্রিতে কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে মর্মে দাতাকে বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন। প্রতিটি হিন্দু জমি রেজিস্ট্রেশনে তিনি দুই লক্ষ থেকে দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণ করেন।
সরকারি রাজস্বের অর্থ তছরুপ করার ক্ষেত্রে সাবেক সাব-রেজিস্টার রিপন মুন্সিকে ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে ১০১ নং কাটিয়া মৌজার সাতক্ষীরা কোল্ড স্টোরেজ ও আইস ফ্যাক্টরির ৬৫.৫০ ও ১৯৬.৮৯ শতক জমি ১৯২৮/২৪ দলিল রেজিস্ট্রি হয়। এই দলিল দুটো রেজিস্ট্রি করতে সাব রেজিস্টার প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণ করার সহযোগিতা করেন অফিস সহায়ক মহসিন। তার বিনিময়ে প্রায় দুই কোটি টাকার রাজস্ব ছাড় দিয়েছেন। কোন জমি প্লট আকারে ক্রয়-বিক্রয় করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শতকরা ৫% রাজস্ব প্রদানের বিধান রয়েছে কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি দলিল লেখকের মাধ্যমে দাতা গ্রহীতাকে প্লট ঘোষণা দিতে নিষেধ করেন। ফলে দাতা, গ্রহীতা ও সাব রেজিস্টার সকলেই লাভবান হলেও সরকারের ব্যাপক রাজস্বে ক্ষতি হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জমি কারবারি ৫% অতিরিক্ত ফি ব্যাংক থেকে চালান করে নিয়ে আসলেও সাব-রেজিস্টার তাকে ফেরত দিয়ে ব্যাংক চালান ভাঙিয়ে নগদ অর্থ গ্রহণ করেন। অফিসে এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত করে চলেছেন। অতিরিক্ত টাকা প্রদান ছাড়া গ্রাহকরা সরকারি কোন সুবিধা ভোগ করতে পারে না। এর ফলে সাধারণ জনগণের নিকট সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তার কার্যকলাপে সাতক্ষীরা সদর রেজিস্ট্রি অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ এখন অতিষ্ঠ। তার নৈতিক স্খলন, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে সাতক্ষীরাবাসী।
Leave a Reply