সাতক্ষীরা পৌর এলাকায় পানিবন্দি মানুষের চরম জনদূর্ভোগ
নিজস্ব প্রতিনিধি: জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর উন্নয়নে পাল্টে গেছে দেশের চিত্র। অব্যাহত সেই উন্নয়নের ধারা বহমান। পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। উন্নয়নের চোখ ধাঁধানো সেই অপরূপ দৃশ্য শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, বিশ্ববাসীও দেখছে। প্রশংসাও কুড়াচ্ছে বিশ্ববাসীর। বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে পৃথিবীর অনেক দেশ অনুকরণও করছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১৫ বছরে সাতক্ষীরা জেলায়ও অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান উন্নয়নে চিরচেনা সাতক্ষীরার রূপও বদলে গেছে অনেক ক্ষেত্রে। সাতক্ষীরায় মেডিকেল কলেজ, বাইপাস সড়ক, টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, শতশত স্কুল কলেজ মাদ্রাসার বহুতল ভবন, রাস্তা-ঘাট ব্রিজ কালভার্টসহ অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। গ্রাম এখন আর গ্রাম নেই। মাটির রাস্তা খুঁজে পাওয়া কঠিন। গো-ভাগাড়ে লেগেছে পিচের ছোঁয়া। ইট-পাথরে বাঁধানো অনেক সড়ক।
ব্যতিক্রম শুধু কিছু এলাকা। তার উদাহরণ সাতক্ষীরা পৌরসভা। এখানে মাটির রাস্তাও আছে, বর্ষাকালে পানির মধ্যেও বাস করতে হয় জনগণকে। এক শত গজ রাস্তার এক মাথা দিয়ে কাজ শুরু করে অপর মাথায় যাওয়ার আগেই পিচ উঠতে শুরু করে। লাইনে পানি না দিয়েও বিলও নেয়। মিটারে টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় রাস্তার বৈদুতিক বাতি নিভে যায় সাতক্ষীরা পৌরসভা এলাকায়। এসব উন্নয়ন বঞ্চিত এলাকায় শোনা যায় জনতার ফরিয়াদ-হে আল্লাহ! কিন্তু দেখেছি বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতে কাঁচা রাস্তায় মাটির হাবড়। দেখেছি পিচের রাস্তায় খানা-খন্দ। হে আল্লাহ! কারবালার নির্মম কাহিনী শুনেছি। পানি পানি করে কারবালায় হা-হা-কার পড়েছিল। আমরা পানির বিল দিই, কিন্তু পানি পাই না। আমাদের কাছ থেকে ট্যাক্স ন্য়ে কিন্তু বিদ্যুতের আলো দেয়না। ও গো মাবুদ! সাতক্ষীরা পৌরসভায় বসবাস ও রাস্তাঘাটে আমাদের চলাচলের তৌফিক দাও। আমিন।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাটিয়া গদাইবিলের এক গ্রামের শতশত মানুষের যোগাযোগের একমাত্র কাঁচা রাস্তাটি বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এক পশলা বৃষ্টি হলেই কর্দমাক্ত হয়ে পড়ায় চলার অনুপযোগী হয়ে পরে। যা দেখার কেউ নেই। জানা গেছে, সাতক্ষীরা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের গদাইবিল গ্রামে শতশত পরিবার বাস করে। শুকনো মৌসুমে তাদের যাতায়াতের জন্য একমাত্র রাস্তা এটি। এই কাচা রাস্তাটির প্রধান যানবাহন হচ্ছে ভ্যান, রিকশা, মটরসাইকেল, বাইসাইকেল। এই রাস্তার বর্তমানে বেহাল অবস্থার কারণে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। ফলে হাজার মানুষের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। জরুরি কোনো রোগীকে উন্নত চিকিৎসার হাসপাতালে নিতে চাইলে দেড়-দুই কিলোমিটার রাস্তা হেটে আসতে হবে যা সেই রোগীর জন্য অসম্ভব। এমনকি যথাসময়ে রোগীকে হাসপাতালে নিতে না পারলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। গদাইবিল এলাকার বাসিন্দা রাহুল হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে এই রাস্তাটি পানিতে তলিয়ে যায় আর শুকনো মৌসুমে এই রাস্তা দিয়ে আমরা হেঁটে কিংবা রিকশায় যাতায়াত করি। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি কর্দমাক্ত হয়ে চলার অনুপযোগী হয়ে পরে। আমরা বর্তমান উন্নয়ন বান্ধব সরকারের কাছে আবেদন জানাই অতি দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করা হোক। গদাইবিল এলাকার আরেক বাসিন্দা আবু হাসান জানান, শুকনো মৌসুমে আমাদের চলাচল করতে কোন সমস্যা হয় না তবে বৃষ্টি নামলেই কর্দমাক্ত হয়ে চলাচলে অসুবিধা হয় দেড়-দুই কিলোমিটার রাস্তা হেটে যাতায়ত করতে হয়। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
অন্যদিকে, সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের মেহেদীবাগ মেহেদীবাগের রাস্তাটি বেহাল দশা ভোগান্তিতে মহল্লাবাসী। সাতক্ষীরা শহরের সার্কিট হাউজের পশ্চিম পাশে অহেদ আলীর বাড়ির উত্তর পার্শ্ব হতে আমিনুর রহমানের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৬১০ফুট রাস্তাটি চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ১৫ বছরের একটি গ্রামীণ কাঁচা সড়ক। বৃষ্টি নামলে কাদার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েন মেহেদীবাগ এলাকার ৫০ ঘড় পরিবার। সাধারণ মানুষের এসব দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই। দুর্ভোগ কমাতে গ্রামীণ এই সড়কে ঢালায় রাস্তা নিমার্ণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী গ্রামবাসি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তাটিতে বড় বড় গর্তের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে । স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি সংস্কার না করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে শতশত লোকজন চলাচল করে, চলাচল করতে গিয়ে এলাকার লোকজন দুর্ঘটনায় পড়েন।
মেহেদীবাগ গ্রামবাসিরা বলেন, গ্রামের লোকজন যাতায়াত করেন এ সড়কটি দিয়ে। বর্ষাকালে মাটির এ রাস্তায় জুতা পায়ে কাপড় পরিধান করে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। বর্ষার সময়ে এই এলাকার লোকজন বা গর্ভবতী মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। এছাড়া স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমাদের দাবি এ গ্রামীণ কাঁচা সড়কটিতে ঢালায় পাকা রাস্তা করে দিলে মানুষের হাঁটা-চলা করার উপযোগী হতো।
এ বিষয়ে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ শফিক উদ-দৌলা সাগর জানান, মেহেদীবাগের রাস্তার কাজ খুব তাড়াতাড়ি শুরু হবে বৃষ্টির কারণে পানি জমে আছে এজন্য হচ্ছে না। ডিসেম্বর মাসের ভিতরে রাস্তাটির কাজ করা হবে ।
Leave a Reply