ন্যাশনাল ডেস্ক: বাংলাদেশের উপকূলের দিকেই ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার গতিবেগে এগিয়ে আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত নাগাত দেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে যানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। উপকূলীয় ১৩টি জেলায় মারাত্বক আঘাত হানতে পারে। এরই মধ্যে উপকূলের ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে ঘূর্ণিঝড়টি। উপকূলীয় ১৩ জেলায় ৭ নং বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বিপদসংকেত আরও বেড়ে ৯ নম্বর পর্যন্ত দেয়া হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলের নিম্নাঞ্চল ৫-৮ ফুটের জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এবিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেছেন, ১৩ জেলায় ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। এসব জেলার মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বরিশাল।
চট্টগ্রাম খুলনা এবং বরিশাল বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় এটি আঘাত হানবে এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দ্বীপ অঞ্চলগুলো বিশেষ করে মহেশখালী, সন্দীপ ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানান মন্ত্রী।।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিভিয়ারে রুপ নিয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি। ঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরের রের্ড এলার্ট থ্রি জারি করা হয়েছে। তিনটি কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। জেটি ও বহির্নোঙরে থাকা জাহাজগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। বন্ধ আছে পণ্য খালাসের কার্যক্রমও। রয়েছে পাহাড়ধসের শঙ্কা। কক্সবাজারে পর্যটকদের সমুদ্র থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে বরিশাল নৌবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ চলাচলও। এরই মধ্যে সাতক্ষীরার আশাশুনিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। আতঙ্কে আছেন বরগুনা, ভোলাসহ বিভিন্ন জেলার উপকূলবর্তী বাসিন্দারা। আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ভেঙে যেকোনো মুহূর্তে পানি ঢুকতে পারে লোকালয়ে। সরিয়ে নেয়া হচ্ছে এসব স্থানের বাসিন্দাদের। খুলনায় দিবাগত রাত ১২টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। উপজেলা কয়রার সাতবাড়িয়া নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ঘৃর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিমি.। যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিমি. পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত ও চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার তাসনিম আহমেদ বলেন, সোমবার (২৪ অক্টোবর) বিকাল ৩টা থেকেই তারা এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করছেন। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বেলা ১২টা পর্যন্ত বিমানবন্দরে কোনো উড়োজাহাজ ওঠানামা করবে না।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দরও সোমবার সন্ধ্যা থেকে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান সিভিল এভিয়েশনের সদস্য (অপারেশন ও প্ল্যানিং) এয়ার কমডোর সাদিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, বিমানবন্দরগুলোতে আপৎকালীন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আবহাওয়ার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, সোমবার মধ্যরাত নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টির বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে। সে সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। মঙ্গলবার সকালের দিকে বাংলাদেশ সীমা অতিক্রম করতে পারে। সিত্রাং শক্তিশালী হলে পায়রা ও মোংলায় বাতাসের গতিবেগ সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১০৫ কিলোমিটার হতে পারে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ উপকূলীয় ১৩ জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাটি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। একই সাথে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে উপকূলীয় ১৫ জেলার নদী বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর নৌ বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত সবশেষ ৮ নম্বর বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি সোমবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। সিত্রাং আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং নামটি থাইল্যান্ডের দেওয়া। উচ্চারণ অনুযায়ী, ‘সি-তরাং’। সিত্রাং আসলে থাইল্যান্ডের বাসিন্দাদের একটি পদবি। ভিয়েতনামের ভাষায় এর অর্থ পাতা। ২০২০ সালে আবহাওয়া অধিদফতরের তালিকাভুক্ত ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে একটির নাম দেওয়া হয় ‘সিত্রাং’।
Leave a Reply