আবু সাঈদ, সাতক্ষীরা: আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহম্মেদ, সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র, শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন, মোঃ খলিলুল্লাহ ঝড়–। তফসিল ঘোষণার পরপরই সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সরব হয়ে উঠেছেন জেলার ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন আওয়ামী লীগের অন্তত ৪ নেতা ও স্বতন্ত্র ১ জন। দলের হাই কমান্ডের আশীর্বাদ পেতে ইতিমধ্যে তদবিরে নেমে পড়েছেন তাঁরা। সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের নির্বাচন হবে আগামী ১৭ অক্টোবর। তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে ২৩ আগস্ট। এরপর থেকেই মাঠে নেমেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। দলীয় নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করেছেন তাঁরা। স্থানীয় শীর্ষ নেতৃত্বের সমর্থন পেতে দলের মধ্যে লবিং ও তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা পরিষদের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে এখন পর্যন্ত যাঁদের নাম আলোচনায় উঠে এসেছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জেলা পরিষদের সদ্য বিদায়ী প্রশাসক সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন, এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ খলিলুল্লাহ ঝড়–। সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম এর আগে জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘ ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রবীণ এবং রয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা। ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ। এরপর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। তিনি ২০০৪ সাল থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব করছেন। ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে সাতক্ষীরা সদরের নৌকা প্রতীকের সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বি›দ্বীতা করেন। তিনি ইতিপূর্বে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ৫ বছর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন ৫০ কোটি টাকার উর্দ্ধে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। তার মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, স্কুল-কলেজ, রাস্তা-ব্রীজ-কালভার্ট, খেলার মাঠ, কোভিড-১৯ এর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার, চিকিৎসা সহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করেছেন প্রায় ১ কোটি টাকার মতো। বর্তমানে আমি এবারও নৌকার প্রাথী হিসেবে গণসংযোগ করে যাচ্ছি। গতবার যে ভোট পেয়েছি তার চেয়েও অধিকতর বেশি ভোটে এবারও নির্বাচিত হবো ইনশাআল্লাহ। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ বলেন, ‘দল যদি মনে করে, আমাকে দিয়ে জেলা পরিষদের নির্বাচন করাবেন, সে ক্ষেত্রে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি রাজনীতি করি, দলের যেকোনো সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। তিনি আরও বলেন, ১৯৬৯ সালে ছাত্রলীগের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করি। ১৯৭০ সালে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক, তারপর জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক, ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করি। ১৯৭৪-৭৫ সালেযশোর সিটি কলেজে ভিপি নির্বাচিত হই। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে একাধিকবার সাক্ষাৎ করার সুযোগ হয়। সাতক্ষীরা জেলা শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি এবং ১৯৮৪ সালে জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে ও তার পরে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তারপরবর্তীকালে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ২০১৩-১৪ সালে সাতক্ষীরায় ১৬ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়, তাদের লাশ পোস্ট মর্টেম করে নিজ খরচে নিজ নিজ বাড়ীতে পৌছে দিই। ১৯৭৫ সালে অনেক নেতা-কর্মী পলাতক হলেও আমি পালাইনি। সেসময় আমি জেল খাটি এবং ১৯৭৬ সালের ২৬ জুন জেল থেকে মুক্তি পাই। অদ্যবধি পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একটুও বিচ্যুত হইনি এবং দলের কঠিন সময়ে দলকে সুসংগঠিত করে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করায় ছিল আমার মূল লক্ষ্য। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে আগ্রহী জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র বলেন, ‘আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। তবে দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, তাঁর পক্ষেই কাজ করব। এখানে দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’ ১৯৭৭ সালে ছাত্রলীগের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে প্রবেশ করি এবং ঢাকা সলিমুল্লাহ হলের ছাত্রলীগের সদস্য ছিলাম। ১৯৮৪ সালে পৌর আওয়ামীলীগ ও ২০০০ সালে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম, পরবর্তী সময়ে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমি যদি মনোনয়ন পায় সাতক্ষীরা জেলা পরিষদকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিকরণ ও যারা ভোটার আছে তাদের নিয়ে সকল বিষয়ে ও বিলি বন্টনের বিষয়ে আলোচনায় বসবো। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে রাজি নই। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভোট করবো না দিলে আমি করব না এবং সকল সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম ও বাণিজ্য বিষয়ক সাধারণ সম্পাদক শেখ এজজ আহমেদ স্বপন, ‘আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। দল যে সিদ্ধান্ত দেবে, তা মাথা পেতে নেব।’ আমি ১৯৮৬ সালে বাবার হাত ধরে রাজনীতিতে হাতে খড়ি এবং ১৯৮৬ সালে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মরহুম মমতাজ উদ্দীনের নির্বাচনী পোস্টার লাগানোর মাধ্যমে ছাত্রলীগে প্রবেশ করি। পরবর্তী সময়ে সিটি কলেজের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, সদর উপজেলাছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক, ১৯৯২-৯৩ সালে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক, ৯৫ সালে জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি, ১৯৯৬-৯৮ সালে জাতীয় পরিষদ সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সদস্য, ২০০০ সালে যুগ্ম আহবায়ক, ছাত্রলীগ জেলা শাখা। ০২ সালে সাতক্ষীরা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক, ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের আবহায়কের দায়িত্বপালন সহ বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম ও বাণিজ্য বিষয়ক দায়িত্ব পালন করছি এবং বিভিন্ন সময়ে সামাজিক কাজ সহ দেশের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ খলিল্ল্লুাহ ঝড়– বলেন, চলতি মাসের ১৭ অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলা পরিষধ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আমি একজন সচেতন ও প্রগতিশীল নাগরিক হিসেবে অংশগ্রহণ করতে চাই। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সংকটে পতিত সাতক্ষীরা জেলার জন্য সমউপযোগী সমস্যা সমাধানে বাস্তব ভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ণে ২২ লক্ষ মানুষের সুপেয় পানির ব্যবস্থা করবো। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের ও প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে ৫ বছরের জন্য নির্বাচনী এসতেহার প্রনয়ন করবো। যদি নির্বাচিত হতে পারি তাহলে দুর্নীতিমুক্ত জেলা পরিষদ গঠনের মাধ্যমে শতভাগ এসতেহার বাস্তবায়নের জন্য সচেষ্ট থাকবো ইনশাআল্লাহ। আমি সাতক্ষীরা জেলা সমিতি ঢাকার সভাপতি, সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক লিঃ এর চেয়ারম্যান ও সীমান্ত আদর্শ কলেজের সভাপতি ও সাতক্ষীরা যুব একাডেমীর চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি।
Leave a Reply