জহর হাসান সাগর: সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠা জেঠুয়া জাগরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষা ক্ষেত্রে আলোকবর্তিকা হয়ে আলো ছাড়াচ্ছেন। গ্রামের অবহেলিত শিক্ষার্থীদের জন্য মনোরম শিক্ষার পরিবেশ,আধুনিক মানের পাঠদান সহ প্রাচীর ঘেরা এই বিদ্যাপীঠের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা।
তালা উপজেলা শহর হতে পিচঢালা প্রায় ৪ কি.মি আঁকাবাঁকা পথ ধরে জেঠুয়া বাজার অভিমুখে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করা আলোকবর্তিকার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ১৪ জন শিক্ষক ও ৪৭৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
শিক্ষার্থী সংখ্যা ক্লাস ভাগে: ৬ষ্ট শ্রেণীতে ছাত্র ৩৯ জন ও ছাত্রী ৩৪ জন, ৭ম শ্রেণীতে ছাত্র ৪৩ জন ও ছাত্রী ৩৩ জন.৮ম শ্রেণীতে ছাত্র ২৭ জন ও ছাত্রী ৩৯ জন,৯ম শ্রেণীতে শ্রেণীতে ছাত্র ৪৫ জন ও ছাত্রী ৩৬ জন,১০ম শ্রেণীতে ছাত্র ৩৪ জন ও ছাত্রী ৩৮ জন সহ ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ্রগ্রহনকারী ছাত্র ৪৬ জন ও ছাত্রী ৬২ জন মোট ৪৭৬ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠাটিতে শিক্ষকমন্ডলীরা তাদের দক্ষতার সাথে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করায় বোর্ড পরীক্ষা সফলতার ছাপ রাখতে সক্ষম হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়,২০১৩ সালে এই প্রতিষ্ঠান হতে পরীক্ষা অংশগ্রহণকারী ৪০ জন শিক্ষার্থীদের মধ্য কৃতকার্য লাভ করেন ৩ জন এ প্লাস সহ ৩৭ জন,২০১৪ সালে ৭৯ জন পরীক্ষা অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী দের মধ্য ১জন এ প্লাস সহ ৭৪ জন কৃতকার্য লাভ ,২০১৫ সালে পরীক্ষা অংশগ্রহণকারী ৫৪ জন শিক্ষার্থীদের মধ্য ১ জন এ প্লাস সহ ৪৩ জন কৃতকার্য লাভ করেন,২০১৬ সালে ৬৭ জন শিক্ষার্থীদের মধ্য ৬জন এ প্লাস সহ ৬৬ জন কৃতকার্য লাভ করেন,২০১৭ সালে৬৩ জনের মধ্য ১জন এ প্লাস সহ ৬০ জন কৃতকার্য লাভ করেন,২০১৮ সালে ৬৯ শিক্ষার্থীদের মধ্য ১ জন এ প্লাস সহ ৪৭ জন কৃতকার্য লাভ,২০১৯ সালে ৭৭ শিক্ষার্থীদের মধ্য ৩ জন এ প্লাস সহ ৭৪ জন কৃতকার্য লাভ,২০২০ সালে ৬০ শিক্ষার্থীদের মধ্য ২জন এ প্লাস সহ ৫৪ জন এবং ২০২১ সালে ৬১ শিক্ষার্থীদের মধ্য ৩ জন এ প্লাস সহ ৫৮ জন কৃতকার্য লাভ করেছেন।
এছাড়া শিক্ষা বোর্ডর জেএসসি ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৪ সালে এই প্রতিষ্ঠান হতে পরীক্ষা অংশগ্রহণকারী ৬৫ জন শিক্ষার্থীদের মধ্য কৃতকার্য লাভ করেন ২ জন এ প্লাস সহ ৬৪ জন, ২০১৫ সালে পরীক্ষা অংশগ্রহণকারী ৮৪ জন শিক্ষার্থীদের মধ্য ৪ জন এ প্লাস সহ ৮২ জন কৃতকার্য লাভ করেন,২০১৬ সালে ৮২ জন শিক্ষার্থীদের মধ্য ১০জন এ প্লাস সহ ৮১ জন কৃতকার্য লাভ করেন,২০১৭ সালে ৮০ জনের মধ্য ২ জন এ প্লাস সহ ৬৫ জন কৃতকার্য লাভ করেন,২০১৮ সালে ৮১ শিক্ষার্থীদের মধ্য ৬৫ জন কৃতকার্য লাভ,২০১৯ সালে ১২৪ শিক্ষার্থীদের মধ্য ১১৮জন কৃতকার্য লাভ,২০২০ সালে ৯৭ শিক্ষার্থীদের মধ্য ৯৭ জন(অটোপাশ) এবং ২০২১ সালে ৮৬ শিক্ষার্থীদের মধ্য ৮৬ জন(অটোপাশ) কৃতকার্য লাভ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা খাতে অবদান রাখার পাশাপাশি অবকাঠমোগত উন্নয়ন করেছেন বিদ্যালয় কতৃপক্ষ। বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিজস্ব অর্থায়নে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ,শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পৃথক স্যানিটেশনের ব্যবস্থা,পতাকা ষ্টান্ড ও মনোরম ফুলের বাগান,ছাত্র-ছাত্রীদের পৃথক সাইকেল গ্যারেজ,প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় ও শিক্ষক মিলানায়তন টাইলস সহ এট্যাস বাথরুম নির্মাণ, বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য ও সাবেক সভাপতি অধ্যাপক এস কে কামরুল ইসলামের ব্যক্তিগত অর্থায়নে দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটক নির্মান, বিদ্যালয়টির উন্নয়নকল্পে সীমানা প্রাচীর ঘেষে ১২ টি দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া প্রদানের অর্থ রশিদের মাধ্যমে আদায় পূর্বক বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসেবে জমা প্রদান করা হয়। এমনকি শিক্ষা মান উন্নয়ন করতে কম্পিউটার সহ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম,ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক করা, প্রতি বছরে অভিভাবক সমাবেশ করা,শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাস রুটিন তৈরী,মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষা,বোর্ড পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ মনিটরিং ব্যবস্থা করার ফলশ্রæতিতে শিক্ষার্থীরা বৃত্তি লাভ সহ এ প্লাস লাভ করেছেন।এসকল কার্যসম্পাদনে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য ও সাবেক সভাপতি অধ্যাপক এস কে কামরুল ইসলাম, বর্তমান প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান,সকল শিক্ষকমন্ডলী, এলাকার অভিভাবক, সাবেক শিক্ষার্থীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। কিন্তু সম্প্রতি একটি মহল প্রতিষ্ঠানটির সুনাম নষ্ট করতে মিথ্যা পপগন্ডা সহ ভিত্তিহীন বক্তব্য অপপ্রচারে করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এসকল মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বনোয়াট তথ্যর প্রতিবাদ সহ কুচক্রী মহলের সদস্যদের এমন হেয় প্রতিপন্ন কাজ না করতে প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান অভিভাবক লিয়াকত মোড়ল,মোল্লা তবিবুর রহমান কালু ও নিত্যনন্দ রায় বলেন, ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত জেঠুয়া জাগরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি গুটি গুটি পায়ে আজ শিক্ষা খাত সহ সর্বক্ষেত্রে আলো ছড়াতে শুরু করেছে। এলাকার মান উন্নয়নেও বিদ্যালয়টি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। আমরা বিদ্যালয়টির উত্তর উত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।
বিদ্যালয়টি সর্ম্পকে দাতা সদস্য ও সাবেক সভাপতি অধ্যাপক এস কে কামরুল ইসলাম বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমার পূর্ব পুরুষদের দানকৃত সম্পর্তির উপর নির্মিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এখন উপজেলা জুড়ে শিক্ষার আলো ছড়াতে সক্ষম হয়েছে। আমি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির উত্তর উত্তর সমৃদ্ধি কামনা করতে এলাকাবাসী সহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান জানান, আমি বিদ্যালয়টিতে ২০১৩ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছি। যোগাদানের সাল হতে ২০২১ পর্যন্ত বিদ্যালয়টির পাশের হার ৯৫% হতে ৯৮ % এর মধ্য উন্নতি লাভ করেছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৪৭৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে সকল জাতীয় দিবস যথাযথ মর্যাদয় পালন করা হয়। সর্বোপরি বিদ্যালয়ের অডিট রিপোর্ট পরিচালনা ও সর্বপ্রকারের আয়-ব্যয় ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বিদ্যালয়টি অনেক চরাই-উতরাই শেষে এই অবস্থানে আসতে সক্ষম হয়েছে। আমি সকলের সহযোগিতা নিয়ে বিদ্যালয়টি আলোবর্তিকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করাতে কাজ করে যাচ্ছি।
Leave a Reply