তুহিন হোসেন:
সাতক্ষীরা জেলার কৃষকরা কুয়াশামাখা সকালে বোরো আবাদ চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সম্প্রতি কয়েক বছর থেকে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় এ মৌসুমে বোরো চাষে তাদের মাঝে বেশ উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমানে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা, কোথাও কোথাও গভীর নলকূপ থেকে চলছে পানি সেচ, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষের কাজ, গরু-মহিষ ও মানুষের দ্বারা মই দিয়ে চলছে মাঠ সমান করার কাজ। আবার বোরো ধান রোপনের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে ধানের চারা।
কৃষকদের শরীরে রয়েছে হালকা শীতের পোষাক, মাথায় গরম কাপড়। কৃষান-কৃষাণীরা রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। কেউবা জমিতে হাল চাষ দিচ্ছেন, কেউ জমির আইলে কোদাল মাড়ছে, কেউ জৈব সার দিতে ব্যস্ত, আবার কেউ সেচের জন্য ড্রেন নির্মাণ কিংবা পাম্পের বা শ্যালো মেশিনের জন্য ঘর তৈরি করছেন। আবার অনেকে তৈরি জমিতে পানি সেচ দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন, কেউ আবার বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলে তা রোপণ করছেন।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানাযায় প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। শতভাগ অর্জিত হবে বলে আশা করছেন কৃষকসহ কৃষি কর্মকর্তারা। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৪ হাজার ৫০০ হেক্টর, কলারোয়ায় ১৪ হাজার হেক্টর, তালায় ২০ হাজার হেক্টর, দেবহাটায় ৬ হাজার হেক্টর, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর, আশাশুনিতে ৮ হাজার হেক্টর ও শ্যামনগরে ২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।গতবছরের তুলনায় এবার ৬ হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা বেশি ধরা হয়েছে।
এদিকে কুশখালী ইউনিয়নের শিকড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, গত বছর আমন চাষাবাদ করে লাভবান হয়েছি। এবারও সে আশায় ৪ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ শুরু করেছেন। অপরদিকে আগরদাঁড়ি ইউনিয়নের কাশেমপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ জানান, গত আমন মৌসুমে ব্রি-জাতের ব্রি -৮১, জিরাশাইল ধানের ফলন ও বাজারমূল্য ভালো পাওয়ায় চলতি বোরো মৌসুমেও আবাদ করতে আমরা বেশি আগ্রহী। জমি থেকে সরিষা তোলা পর জমিতে বোরো ধান রোপন করা হবে। শ্যামনগর থেকে শেখ আলী মোর্তজা বলেন গত আমন মৌসুমে ব্রি-জাতের ব্রি -৮১, জিরাশাইল ধানের ফলন ও বাজারমূল্য ভালো পাওয়ায় চলতি বোরো মৌসুমেও আবাদ করতে আমরা বেশি আগ্রহী।
অন্যদিকে সাংবাদিক আব্দুল মোমিন জানান, করোনা মহামারীর কারণে গরীব অসহায় মানুষরা বিপদগ্রস্থ ছিল। বাইরে কাজে যেতে পারেননি। এলাকায় তেমন কোন কাজ না থাকায়, পরিবার নিয়ে বেশ অভাব অনটনের মধ্যে রয়েছেন তারা। তাই বোরো মৌসুমে সকালে কুয়াশা ও ঠান্ডা বেশি হলেও বোরো ধান লাগাতে হচ্ছে, এতে একটু কষ্ট হলেও ধান রোপন করে দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন তারা। এবার একটু বেশি আয় হবে বলে আশা করছেন গরীব অসহায় কৃষকরা।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক নূরুল ইসলাম জানান, জমিতে লাইন ও লোগো করে ধান রোপন করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ধানের চারা একটু বড় হলে জমিতে দশ হাত অন্তর লাঠি পুতে রাখার জন্য কৃষকদের বলা হয়েছে। এতে করে পোকার আক্রমণ থেকে ধানের চারা রক্ষা পাবে। এছাড়া কৃষকদের মাঝে যথেষ্ট পরিমাণে বীজ ও সার প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে।
Leave a Reply