গাজা কেনার টাকা যোগাড় করতে কানের দুল ছিনতাইয়ে বাধা: দ্বিতীয় শ্রেণীর স্কুল ছাত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা
নিজস্ব প্রতিনিধি: মাদকের টাকা যোগাড় করতে মাদক সেবী পার্টনারের মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রীকে বন্ধুর বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কানের সোনার দুল ছিনতাই করা হয়েছে। ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় দুই হাত ও দুই হাত বেঁধে ওই ছাত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ গুম করতে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকেল ৫টার দিকে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আগরদাঁড়ি গ্রামের কলেজ শিক্ষক লুৎফর রহমানের পরিত্যক্ত বাড়ির সামনের পুকুর থেকে ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় একই গ্রামের রেজোয়ান কবীর জনি নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত রেজোয়ান কবীর জনি (২২) আশাশুনি উপজেলার আগরদাঁড়ি গ্রামের মো. আব্দুর রাজ্জাক সরদারের ছেলে। ভিকটিম নূসরাত জাহান রাহি (০৯) এর বাড়ী আসামীর বাড়ীর পাশে। ভিকটিম সম্পর্কে আসামীর প্রতিবেশী ভাতিজি। আসামী ইতিপূর্বে ঢাকার একটি লিফট কোম্পানীতে চাকুরী করতো। চাকুরী করা কালীন একটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক করে ০৯ (নয়) মাস আগে বিয়ে করে। বিগত ৪/৫ মাস আগে আসামীর চাকুরীটি চলে যাওয়ায় সে ঢাকা থেকে বাড়িতে চলে আসে।
আসামীর চাকুরী না থাকার কারণে সে অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগতেছিল এবং নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তার পিতার নিকট বিভিন্ন সময় টাকা চেয়ে না পেয়ে সে বিকল্প চিন্তা করে। তখন তার ভিকটিম নুসরাত জাহান রাহি’র কানে থাকা স্বর্ণের এক জোড়া রিং এর কথা মনে পড়ে। তার প্রেক্ষিতে ইং ১৪/১২/২০২৪খ্রি. সকাল অনুঃ ১১.০০ ঘটিকার দিকে ভিকটিম নুসরাত জাহান রাহি তার বান্ধবী মিতা বসু (০৮) এর বাড়ীর সামনে খেলা করছিল। সে সময় আসামী ভিকটিমকে মোড়ে যাওয়ার নাম করে ডাক দিয়ে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে যাওয়ার সময় মাওলানা মোঃ সোলাইমান আজিজীর পুকুরের পাশে যেয়ে আসামী ভিকটিমকে বলে চলো আমরা হলুদ তুলতে যাই। তারপর হলুদ ক্ষেতে গিয়ে ভিকটিমের কানে থাকা স্বর্ণের রিং জোড়া হাত দিয়ে খুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। ভিকটিম স্বর্ণের রিং জোড়া দিতে অস্বীকার করে এবং বাড়ীতে গিয়ে বাবা-মাকে বলে দিতে চায়। একপর্যায়ে আসামী মোঃ রেজোয়ান কবির জনি ভিকটিম নূসরাত জাহান রাহির কানে থাকা স্বর্ণের কানের রিং জোড়া জোরপূর্বক খুলে নেয় এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপরে ভিকটিমের লাশটা যেন কেউ খুজে না পায় তার জন্য ভিকটিমের গায়ে থাকা গেঞ্জি ছিড়ে হাত এবং পা বেধে হলুদ ক্ষেতের পাশে পুকুরের মধ্যে ফেলে দেয়। একই তারিখ বেলা অনুঃ ০১.০০ ঘটিকার সময় আসামী কানের রিং জোড়া নিয়ে বুধহাটা বাজারে যেয়ে পলাশ জুয়েলার্স এর দোকানে অজয় পাইনের কাছে ৯,০০০/- (নয় হাজার) টাকায় বিক্রি করে। ইতিমধ্যে স্থানীয় লোকজন নুসরাত জাহান রাহির লাশ পুকুরে দেখতে পেয়ে থানা পুলিশকে খবর দিলে থানা পুলিশ দ্রুততম সময়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এক পর্যায়ে থানা পুলিশ আসামী মোঃ রেজোয়ান কবির জনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইং-১৫/১২/২০২৪ তারিখ থানায় নিয়ে আসে।
সাতক্ষীরা জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম মহোদয়ের নির্দেশক্রমে জনাব মোঃ আমিনুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী মোঃ রেজোয়ান কবির জনি (২২) সকল ঘটনা পুলিশকে খুলে বলে এবং ভিকটিমকে হত্যার কথা স্বীকার করে। আসামীর দেওয়া তথ্য মতে থানা এবং ডিবি পুলিশের টিম আসামীকে নিয়ে বুধহাটা বাজারস্থ পলাশ জুয়েলার্সের দোকানে গিয়ে ভিকটিমের স্বর্ণের কানের রিং জোড়া আসামীর দেখানো ও সনাক্ত মতে অজয় পাইনের নিকট থেকে উদ্ধার করে। মামলা নং: আশাশুনি থানার মামলা নং-০৪, তারিখ-১৫/১২/২০২৪ খ্রি., ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড।
Leave a Reply