আজকের সাতক্ষীরা দর্পণ ডেস্ক: সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ রোডের বেহাল দশায় জনগণের ভোগান্তি চরমে। পোস্ট অফিস মোড় থেকে সরকারি কলেজ হয়ে হাটখোলা পর্যন্ত শহীদ রীমু সরণি রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী নেই আর। তাতে বিগত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে রাস্তাটি। বেহাল সড়কে সাতক্ষীরার অসংখ্য মানুষ চরম দুর্ভোগে। রাস্তায় চলতে গিয়ে খেতে হচ্ছে নাকানিচুবানি। পৌরসভার অধিকাংশ সড়কগুলোর অবস্থা করুণ দশায় পৌঁছেছে। একটি রাস্তাও আস্ত নেই সাতক্ষীরায়। সড়কগুলোর পিচ ও খোয়া উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ছালচামড়া উঠে সড়কগুলো বেহালদশায় পরিণত হয়েছে। দেখে মনে হয় খানা-খন্দে ভরা সড়কগুলো। ফলে মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। বিশেষ করে কার্পেটিং উঠে সাতক্ষীরা শহরের কলেজ সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও পিচের ঢালাই উঠে গেছে। সড়কজুড়ে ছোট-বড় হাজারো গর্ত। গাড়ি চলছে ঝুঁকি নিয়ে। চারদিকে ধূলা আর ধূলা। সাথে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে স্যাতস্যাতে অবস্থা। বিগত ১০বছরে ইটের পুটিং ছাড়া কোন সংস্কার না হওয়ায় নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত পৌরবাসী। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছেন, সড়কগুলোর নির্মাণের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভায় দুই লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে পোস্ট অফিস মোড় থেকে হাটখোলা পর্যন্ত সড়ক দিয়ে দিন-রাতে অসংখ্য মানুষ চলাচল করছে। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে রেজিস্ট্রি অফিস, লস্কর পাড়া, আনন্দ পাড়া, ঝুটি তলা, শ্যাল্যে-মাছখোলা, সরকারপাড়া, মুনজিতপুর, রাজারবাগান, মুন্সিপাড়া, রথখোলা, হাটখোলাসহ আশাশুনি উপজেলার যে মানুষগুলো শহরের উত্তর পাশে কাজের জন্য আসেন সকলেই এই রোড দিয়ে শহরে ওঠেন। সড়কের বাজে অবস্থার কারণে মানুষ রাতে এই পথে বাসায় ফিরতে ভয় পাচ্ছে। এই সড়কের দুই পাশে রয়েছে একাধিক সরকারি অফিস ও বাসভবনসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এরপরও ব্যবস্থা নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন, পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ইজিবাইক, মাহিন্দ্রা,ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। এ সড়কের দুই পাশে সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে, জেলা পোস্ট অফিস, সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজের বাসভবন, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, সাতক্ষীরা রেজিস্ট্রি অফিস, জেলা সমবায় অফিস, টিআইবি অফিস, টিএন্ডটি, শহর সমাজ সেবা অফিস, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, জাতীয় মহিলা সংস্থার কার্যালয়, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ, পল্লী মঙ্গল স্কুল এন্ড কলেজের মত অসংখ্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের অবস্থান এই সড়কে। এছাড়াও সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ১৭ হাজার ছাত্র-ছাত্রী এবং সাতক্ষীরা পল্লীমঙ্গল স্কুল এন্ড কলেজের ৯০০জন শিক্ষার্থী এই মেয়াদ উত্তীর্ণ রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ বিভিন্ন পরীক্ষার কেন্দ্র হওয়ায় প্রতিদিন অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষা দিতে আসেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা শহরের পোস্ট মোড় থেকে শুরু করে সরকারি কলেজ হয়ে হাটখোলা মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এই সড়কের অধিকাংশ জায়গায় পিচ উঠে যেয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হয়ে সেখানে কাদা-পানি জমে আছে আর রোদ হলেই এই কাদা ধুলা হয়ে উড়বে। সাতক্ষীরা পৌরসভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বেহাল দশা নিয়ে সংসদ বক্তব্যের পরও কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি পৌর কর্তৃপক্ষের।
সাতক্ষীরা পৌরসভা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শহরের পোস্ট অফিস মোড় হতে পুরাতন সাতক্ষীরা হাটখোলা পর্যন্ত এই সড়কটির দৈর্ঘ্য ১.৮৫ কিলোমিটার। সর্বশেষ ২০১১-১২সালে মেয়র আব্দুল জলিলের মেয়াদকালে সড়কটি শেষবারের মতো পিচঢালাই করা হয়। এরপর চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ২০লাখ টাকায় রিপিয়ারিং করা হয়। পৌর রাস্তাগুলো সংস্কারের জন্য বিভিন্ন সময়ে স্থানীয়রা আন্দোলন–সংগ্রাম করলেও কোনো লাভ হয়নি। তারপরও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি।
উল্লেখ্য, ৮ মে সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংস্কার কাজ শুরু না করলে ২জুন দিনব্যাপী সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে। উল্লেখ্য, সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান গত রোববার জাতীয় সংসদে এ সড়কের কথা উল্লেখ করে বলেন, অবস্থা এতটাই খারাপ যেকোনো অন্তঃসত্ত্বা নারী ওই রাস্তায় চলাচল করলে পথেই ‘ডেলিভারি’ (সন্তান প্রসব) হয়ে যাবে।
সাতক্ষীরা সিটি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন কলেজ রোডে আসা হয় কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য। তবে রাস্তাটি খুবই খারাপ একটু বৃষ্টি হলেই কাদা- পানি জমে থাকে। রাস্তাতে দ্রুত সংস্কার হলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। পুরাতন সাতক্ষীরায় এলাকার পানি সরবরাহকারী ভ্যানচালক জাকির হোসেন বলেন, দশ মিনিট পথ ৩০ মিনিট সময় লাগে। এটি দ্রুত সংস্কার করা হলে ভ্যানটাও ভালো থাকবে। সময়ও বাঁচবে। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সামনে হোটেল ব্যবসায়ী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, এরশাদ সাহেবের আমলে একবার রাস্তাটি হয়েছিল তারপরে এই রাস্তাটি আর সংস্কার করা হয়নি। রাস্তাটি সংস্কার না হওয়ায় অনেকেই চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে এই রাস্তায়।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আমানউল্লাহ আল হাদী দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণকে বলেন, এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ অসহ্য ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করে। আমার কলেজের ১৭হাজার শিক্ষার্থীর সাথে বিভিন্ন পরিক্ষার কেন্দ্র থাকায় প্রতিদিন অংসখ্য ছাত্র-ছাত্রী এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ সকালে ১হাজার ২০০ছাত্র-ছাত্রীর পরিক্ষা এবং বিকালে ১হাজার ৮০০ছাত্র-ছাত্রীদের পরিক্ষা আছে। বৃষ্টির কারণে রাস্তার যে অবস্থা হয়েছে তাতে করে শিক্ষার্থীদের কাদা মেখে পরীক্ষা হলে ঢুকতে হচ্ছে তাতে করে। আমি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি অতি দ্রুত এই রাস্তাটি করার জন্য।
সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান বলেন, সাতক্ষীরার কেএফডব্লিউ জার্মান প্রজেক্ট দীর্ঘদিন ধরে অনুমোদন দিচ্ছিল না, সেটা আমি গতকার সপ্তাহে অনুমোদন করিয়ে এনেছি। প্রথম প্যাকেজের ওয়ার্কশপের মধ্যে চারটি ওয়ার্ড পড়েছে যেটা টেন্ডার হয়ে গেছে এবং দ্বিতীয় প্যাকেজে তিনটা ওয়ার্কশপ রয়েছে যার মধ্যে কলেজ রোডসহ আরো কয়েকটি ওয়ার্ড পড়েছে সেটা আমি বৃহস্পতিবার গেয়েছিলাম পিডি অফিস ঢাকা পিটি মহোদয় বলেছেন আগামী সপ্তাহে অনুমোদন দিয়ে দিবে।
দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণের কাছে প্রশ্ন করেছিলেন ভিতরের রাস্তারগুলোর টেন্ডার হয়ে গেছে তাহলে কলেজ রোড কেন হচ্ছেনা? তিনি বলেন এই প্রপোজালগুলো দু’বছর আগে পাঠানো ছিল, সেটা অনুমোদন হয়েছে এখন যার জন্য ভিতরের রাস্তা গুলোর টেন্ডার হয়েছে। আশা করছি প্রক্রিয়া শেষে খুব দ্রুত কলেজ রোডের কাজ শুরু করতে পারব-ইনশাআল্লাহ।
Leave a Reply