তুহিন হোসেন সাতক্ষীরা: বার্ধক্যের আঘাত সার্বজনীন। কারো যদি অকাল মৃত্যু না হয় তবে প্রত্যেককেই এ জীবনের স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। বার্ধক্যের কষাঘাতে অনেককেই একাকিত্বের মতো কষ্টকর জীবন কাটাতে হয়। ভুগতে হয় অর্থকষ্টেও। এ ধারা অনেক দিন ধরেই চলছে। তবে সম্প্রতি বিষয়টি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য বিশেষভাবে উৎসর্গ করে যে দিনটি পালন করা হয় তাকে বাবা দিবস বলে। আসলে বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য বিশেষ কোনো দিনের প্রয়োজন হয় না, তার পরও বিশেষভাবে স্মরণ করে রাখার জন্যই এ দিনটির আয়োজন। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই বাবা হচ্ছেন পরিবারের প্রধান। সন্তানের জন্য পরম আদর্শ আর নির্ভরতার অন্য নাম বাবা।
বটবৃক্ষের মতো ছায়া হয়ে আমাদের আগলে রাখেন আমৃত্যু। বাবাদের ভালোবাসা মায়ের মতো প্রকাশিত হয় না। নিজের সুখ বিলিয়ে দিয়ে তারা সন্তানের সুখ কেনেন। অথচ জীবনের পড়ন্ত বিকালে সন্তানের কাছে হয়ে ওঠেন বোঝা, বাড়তি ঝামেলা। এমনকি শেষ আশ্রয়স্থল হয় তখন বৃদ্ধাশ্রম! এমন হতভাগা বাবার ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ঠাঁই হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। যেখানে রক্তের চেয়ে মাটি ও অর্থের মূল্য বেশি, সেখানে সম্পর্ক থাকার চেয়ে না থাকা ভালো। এজন্য, আমার মরণটা যেন বৃদ্ধাশ্রমে হয় এবং মৃত্যুর পরে মাটিটা সরকারি গোরস্থানে দেয়ার কথা বলেন তিনি। এই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয়িত অপর দু’জন হাসিনা খাতুনের জীবন গল্পের কাহিনীটা একই রকমের। সারাজীবন খেয়ে না খেয়ে সন্তানকে বড় করলেও জীবনের শেষ প্রান্তে সন্তানের কাছে হয়ে পড়েছেন বাড়তি ঝামেলা। তারা আরোও বলেন, সন্তানদের কাছে বাড়তি বোঝা হয়ে মরতে চাইনা বিধায় আশ্রয় নিয়েছেন বৃদ্ধাশ্রমে। এখন অবসর সময়গুলো কাটে বৃদ্ধাশ্রমের আশ্রয়িত প্রবীণদের সাথে সুখ ও দু:খের গল্প করে। প্রবীণ দিবসে প্রত্যাশা প্রসঙ্গে এই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয়িত প্রবীণরা বলেন, আমাদের মতো আর কোন প্রবীণের জীবন যেন বৃদ্ধাশ্রমে না কাটে।
জনপ্রিয় এক চিকিৎসক কাজ করেছেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অর্থ আর আভিজাত্যের কোনো অভাব ছিল না তার। দুই ছেলেকে বানিয়েছেন তার মতো চিকিৎসক। আর দুই ছেলেকে করেছেন প্রকৌশলী। নিজের পরিচয় আর অর্থ দিয়ে উন্নত জীবনের আশায় করে দিয়েছেন আমেরিকার ভিসা। আর ভিসায় যেন কাল হয়েছে। এই ছেলেরাই উন্নত জীবনের আশায় প্রিয় বাবাকে ছেড়ে মাকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেছে সুদূর আমেরিকা। এসে দেখেন বাড়িতে তালা দেওয়া। বাড়িতে কাউকে না পেয়ে তার ব্যক্তিগত চালক ও তিনি খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে পাশের বাড়ির লোকজন জানায় তার পরিবারের সবাই চলে গেছেন আমেরিকায়। তখন যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। সেই কষ্টে সেদিন রাতেই স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে পড়েন তিনি। পরে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় চলে আসেন এই প্রবীণ নিবাসে। জীবনের বাকিটা সময় কাটিয়ে এখন শুধু মৃত্যুর প্রহর গুনছেন তিনি।
এব্যাপারে বৃদ্ধাশ্রমটির পরিচালক এসএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, সন্তান আর পরিবারকে ভুলিয়ে রেখে যতটা পরিবারের মতো আনন্দ দেওয়া যায় তার কোনো কমতি রাখেন না তারা। যতই প্রবীণ নিবাস তাদের পরিবারের কথা ভুলিয়ে রাখতে চান, সম্পর্কের এই মায়া আর পরিবারের সুখের অভাবে কাটে এই প্রবীণদের। সন্তান বাবার ঋণ কখনো পরিমাপ করতেও পারে না। বাবার প্রাপ্য সম্মান প্রদর্শনে একদিন কিছুই নয়। তবু শুধুই তার জন্য একটি দিন, একটু আলাদা করে উদযাপন করতেই বাবা দিবস। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা। সব বাবারা ভালো থাকুন। আর কোনো বাবার ঠিকানা যেন বৃদ্ধাশ্রমে না হয়।
Leave a Reply