নিজস্ব প্রতিনিধি: কাজী আছে, অফিসও আছে, নিয়মিত বিয়েও পড়াচ্ছেন। আছে বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রারের পাশপাশি সরকার নির্ধারিত বালাম বইও। তবে সেসব আসল নয়, ভুয়া। নেই আইনগত কোন বৈধতাও। সেইসাথে কাজীর নেই সরকারি নিবন্ধনও। তুবুও সাতক্ষীরা সদরের বকচরা গ্রামের আবু জাফরের ছেলে ইস্রাফিল হোসেন মিলন একজন বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার বলে আদালতপাড়ায় পরিচিতি লাভ করেছেন।
বর্তমানে তিনি সদরের বালিয়াডাঙা মাঠপাড়ায় বসবাস করেন। অভিযোগ, প্রতারণার মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ উপার্জন করে মিলন শহরতলীতে চারটি প্লটে এক বিঘারও বেশি জমি কিনেছেন। স্থানীয়রা জানান, মিলনের বাবা ঋণে জর্জরিত হয়ে একসময় নিখোঁজ হয়ে যান। মায়ের কাছে মানুষ হওয়া মিলন তালতলা ভোকেশনাল স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাশ করেন। অ্যাড. স.ম মমতাজুর রহমানের কাছে বেশ কিছুদিন আইনজীবী সহকারি হিসেবে কাজ করেন মিলন। আইনজীবী সহকারির লেবেল লাগিয়ে দীর্ঘদিন ভুয়ো বিয়ে ও তালাকনামা সম্পাদন করেছেন মিলন। এত ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের নুনগোলা গ্রামের বিবাহ রেজিস্ট্রার রওশান আলম এবং সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭ ও ৮নং ওয়ার্ডের বিবাহ রেজিস্ট্রার শেখ সাঈদুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজনের সাক্ষর ও সিল মোহর জাল করে তিনি ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ। সহকারি হিসেবে বকচরা এলাকার সুমন, হাফেজ হোসাইন, ও মোহরারের মাধ্যমে খরিদ্দার যোগাড় করে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে যাচ্ছেন। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নিয়ম বহির্ভুতভাবে বিয়ে ও রেজিস্ট্রি করিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন মুঠো মুঠো টাকা। নাম সর্বস্ব এ কাজীর ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে হাজারো মানুষ। মাদ্রাসায় পড়াশুনা না করেও বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার হিসেবে পরিচিতি লাভ করা মিলনের মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়েরা ভালবেসে পালিয়ে বিয়ে করে বিপাকে পড়ছেন। বিয়ের বছর না ঘুরতেই বনিবনা না হওয়ায় মামলা করতে যেয়ে বেরিয়ে আসছে মিলনের আসল রহস্য। আবার মিলন নিজেকে কখনো কাজী রওশান আলমের অফিসের নিয়োগপ্রাপ্ত ম্যানেজার এবং তার সহযোগী হিসেবে হাফেজ হোসাইন কাজ করে যাচ্ছে বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে বাল্য বিবাহ ও বহিরাগত ছেলেমেয়েদের আদালত পাড়া থেকে আগেভাগেই যোগাযোগ করে সমস্যার সমাধান করে দেন মিলন। মিলনের রয়েছে কয়েকজন দালালের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বাল্য বিবাহ করাতে মূল জন্মনিবন্ধন স্ক্যানিং করে বয়স বাড়িয়ে থাকেন মিলন। তার রয়েছে একাধিক তালাকপ্রাপ্ত নারীর সিন্ডিকেট। ওইসব নারীরা পুরুষদের বিশেষ করে চাকরিজীবীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বড় অংকের টাকার কাবিননামা করে মিলনের মাধ্যমে। পরে মামলার ভয় দেখিয়ে ওইসব পুরুষদের কাছ থেকে আদায় করা হয় লক্ষ লক্ষ টাকা। পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পিছনের তারিখ দেখিয়ে কাবিনামা ও তালাকনামা সংগ্রহ করার পাশাপাশি বিয়ে না করেও কাবিননামা মেলে মিলনের কাছে। গত বছরের ১২ নভেম্বর স্থানীয় একটি দৈনিকে বকচরায় অনৈতিক সম্পর্কের অপবাদ দিয়ে চাঁদা চাওয়ায় সেলুন মালিকের আত্মহত্যা শিরোনামে প্রকাশিত খবরে বাবা, মা ও মেয়েকে আটকে রেখে জোরপূর্বকতালাকনামায় স্বাক্ষরগ্রহণকারি ছিল বর্তমানে বেলেডাঙা মাঠপাড়ায় বসবাসকারি সেই চাঁদাবাজ ছিল মিলন। তার বিরুদ্ধে খুলনা জোনাল অফিসের বড়বাবু আমীর হোসেনের সই ব্যবহার করে সাতক্ষীরা সহকারি ভূমি কমিশনারের অফিসসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করার অভিযোগ রয়েছে।
বকচরা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে হোসাইন আলীর অভিযোগ, তিনি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক হওয়ার সুবাদে তার গাড়িতে চলে মিলন বিভিন্ন জায়গায় ভূয়া কাবিননামা ও তালাকনামা বানাতে যেয়ে তাকে লেখক হিসেবে কাজ করতে বলতেন। স্থানীয় পোস্ট অফিসের রানার হিসেবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে মিলন তার কাছ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। ব্রাক সমিতি থেকে ঋণ ও দুটি গরু বিক্রি করে ওই টাকা সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। কলারোয়ার পানিকাউরিয়া গ্রামের ইউনুছ আলীর ছেলে হযরত আলী ও মেয়ে আয়েশা খাতুনকে পোস্ট অফিসের রানার হিসেবে কাজ দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন মিলন। এছাড়া নিজের স্ত্রী মিমকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে শ্বশুর বাড়ি থেকে আট লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মাধবকাটির হাবিবের বিয়ে ও তালাকনামা জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে মিলনের বিরুদ্ধে। লেখক হিসেবে ব্যবহার করা ভাড়া মোটরসাইকেল চালক হোসাইন আলীর চাকরির বাবাদ টাকা প্রতারণা করতে অবশেষে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা (সিআর-৪৭৭/২৩) করিয়েছেন মিলন। এছাড়াও বকচরার আশরাফুল ইসলাম তার ছেলে শিমুলকে বিদেশে পাঠানোর সময় মিলনের মায়ের কাছ থেকে চড়া সুদে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ১৫০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্টাম্পে সাক্ষর করে নেয় মিলন। ঋণ পরিশোধ না করতে না পারায় সমিতি থেকে লোন করিয়ে দেওয়ার নামে অলিখিত চেকে আশরাফুলের সাক্ষর করিয়ে নেয় মিলন। পরে আইএফআইসি ব্যাংকের ওই চেক ব্যবহার করে আদালতে মামলা করে(সিআর ৯২/২০) সাড়ে ৫ লাখ টাকা আদায় করেন মিলন।
বর্তমানে মিলন তার প্রতারণার অর্থে চারটি প্লটে এক বিঘারও বেশি জমি কিনেছেন। এ ব্যাপারে ই¯্ররাফিল হোসেন মিলনের সঙ্গে মঙ্গলবার বিকেল ৬টা ১৬ মিনিটে তার মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি রিসিভ করেননি।
Leave a Reply