নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা সদরের ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাড়ির এএসআই জয়নালের বিরুদ্ধে উৎকোচ নিয়ে মাদক ব্যবসাসহ, নারী ব্যবসার অন্তরালে ব্লাকমেইলিংয়ে সহায়তার পাশাপাশি নিরীহ লোকদের পকেটে কৌশলে গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য দিয়ে ফাসিয়ে অর্থ আদায়সহ নানান অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সে ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাড়িতে যোগদানের পর থেকে ধুলিহর, ব্রহ্মরাজপুর ও ফিংড়ী ইউনিয়নে এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন মাদক দ্রব্য। এতে আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে মাদক সেবির সংখ্যা। আর মাদকের টাকা জোগাড় করতে এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, নারী ব্যবসার অন্তরালে সুকৌশলে ফাঁদ পেতে ব্লাকমেইলিং, জুয়াসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। অভিযোগের তীর ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাড়ীর এএসআই জয়নালের দিকে। ফলে পুলিশের এই কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং সচেতন মহল এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অবিলম্বে ওই পুলিশ সদস্যসহ তার অপকর্মের দোসরদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, সম্প্রতি ধুলিহর, ব্রহ্মরাজপুর ও ফিংড়ী ইউনিয়নে ব্যাপক হারে মাদক ব্যবসা, নারী ব্যবসার অন্তরালে ফাঁদ পেতে ব্লাকমেইলসহ নানান অপরাধমুলক কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। নেপথ্যে কাজ করছেন ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাড়ীর এএসআই জয়নাল। শান্তি প্রিয় সাধারণ মানুষ ওই পুলিশ সদস্যের দুর্ব্যবহারে অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। উক্ত এএসআই জয়নাল ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ফাড়িতে আসার পর থেকে তিনি নাকি মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট মাদকদ্রব্য সরবরাহ করেন এবং তাদেরকে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করেন। কৌশলে মাদকসেবীদের পাশাপাশি নিরীহ লোকদের পকেটে গাজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য দিয়ে আটক করার নামে হ্যান্ডকাফ দিয়ে নাটক করে সুকৌশলে মোটা অংকের অর্থ আদায় করছেন! সম্প্রতি এলাকার অর্ধশত ব্যক্তিকে এভাবে কথিত মাদকসহ আটকের নাটক করে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীরা তার আশ্রয় প্রশ্রয়ে বহাল তবিয়তে প্রকাশ্য মাদক চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি পুলিশ ফাড়িতে আসার পর থেকে একটি অদৃশ্য শক্তির উপর ভর করে অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে নানান অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফয়জুল্যাপুর গ্রামের এক ব্যক্তি জানান, আমি গত কয়েক দিন পূর্বে সারাদিন কাজ করে রাতে ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। রাত আনুমানিক সাড়ে এগারোটার দিকে আমার ফোন বাজতে থাকলে আমি ঘুমচোখে ফোন রিসিভ করি। তখন আমাকে বাড়ির সামনে রাস্তায় ডাকে জয়নাল দারোগার কথিত সোর্স শহর আলীর পুত্র বিল্লাল। গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মধ্যে আমি রাস্তায় আসামাত্র আমার হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে দেয় জয়নাল দারোগা। তখন আমার বাড়িসহ স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে জয়নাল দারোগা সোর্স বিল্লালের কাছ থেকে নিয়ে বলে এই গাজাগুলো নাকি আমার। তখন আমি হতভম্ব হয়ে দীর্ঘ দরকষাকষির পর ১০হাজার টাকার চুক্তিতে তার সোর্স বিল্লালের মাধ্যমে নগদ ৬ হাজার টাকা দিলে আমার হাতকড়া খুলে দেয় এবং বাকি ৪ হাজার টাকা পরের দিন জোগাড় করে দিয়ে তারপর মুক্তি পায়। এছাড়া রবিবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যায় একইভাবে ওই গ্রামের বাংলালিংক টাওয়ারের পাশে সিরাজুল ইসলামের পকেটে সোর্স আনিসের সহযোগিতায় মাদকদ্রব্য দেওয়ার চেষ্টা করে। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা চ্যালেঞ্জ করে এবং বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে এবং তাৎক্ষণিক এক সাংবাদিক ঘটনাস্থলে আসলে এএসআই জয়নাল তড়িঘড়ি করে চলে যায়। কিন্তু এ সময় জনরোষের কবলে পড়ে দারোগা জয়নালের গুপ্তচর আনিস। গ্রামবাসীরা তাকে গণধোলাই দিয়ে ফিংড়ী ইউনিয়ন পরিষদে দিলে সে সব অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চায় এবং দারোগা জয়নালের কথা মতো এসব করতে বাধ্য হয়েছে বলে জানায়। এসময় জয়নাল দারোগার অত্যাচারে এলাকার অতীষ্ঠ শতাধিক লোক ফিংড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. লুৎফর রহমানের নিকট ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি এএসআই জয়নালকে ফোন করে তার অপকর্মের বর্ণনা দিয়ে ভৎসনা করেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত না থাকলে উর্ধতন মহলকে জানাবেন বলে জানান। এছাড়া এলাকার সব অপরাধীদের সাথে তার সখ্যতা থাকায় এসব চিহ্নিত অপরাধীরা সবসময় তার আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখা যায়। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ধুলিহর ইউনিয়ন পরিষদের চিহ্নিত মাদক কারবারি গ্রাম পুলিশ সাইদুল ও ভোম্বল ব্রহ্মরাজপুর বাজারের সাহেব বাড়ির মোড় থেকে শুরু করে, সুপারি ঘাটা, তালতলা, বড়দল, গোবিন্দপুর, মাটিয়াডাঙ্গা, বালুইগাছা, জাহানাবাজ, ভালুকা চাঁদপুর যতন মালীর মোড়, ফিংড়ী, ব্যাংদহ, গাভা, এল্লারচর, শিমুলবাড়ীয়া, কালেরডাঙ্গা, চেলারডাঙ্গা, মাছখোলা ও দহাকুলাসহ এলাকার অর্ধশতাধিক মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট এএসআই জয়নালের দেওয়া মাদকদ্রব্য পেশাদার মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট সরবরাহ করে থাকে। দারোগার মাল বিক্রি করলে কোন ভয় না থাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা নির্বিঘœ মাদকদ্রব্য বিক্রি করছে বলে দাবি এলাকাবাসির। ফলে এলাকায় হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে মদ, গাঁজা, ফেন্সিডিল ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। ফলে আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে মাদকসেবীর সংখ্যা। উঠতি বয়সী যুবক থেকে শুরু করে স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ মাদকের নীল দংশনে দংশিত হচ্ছে। মাদকের বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। অভিভাবক ও সচেতন মহল শংকিত হয়ে পড়েছে। বেকার মাদকাসক্তরা মাদকের টাকা জোগাড় করতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া ব্রহ্মরাজপুর বাজারের কথিত সাহেববাড়ি মোড়ে নেপাল অধিকারী ওরফে উত্তম চায়ের দোকানের আড়ালে যেনো মিনি ক্যাসিনো হল খুলে বসেছেন। এখানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চলে জুয়া খেলা। এছাড়া অন্ধকার গলির এই ঘরে চলে ক্যারামের নামে চলে জমজমাট জুয়া। এলাকার স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীসহ উঠতি বয়সী তরুণরাই এখানে আসর জমায় বলে জানান এলাকাবাসি। এদিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার জিফুল বাড়ি এলাকায় মোবাইল ফোনে জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে তরুণ সমাজ। এদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস নেই কারও।
জয়নালের মতো পুলিশের কারণে গোটা পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নসহ এলাকার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে অভিজ্ঞ মহলের দাবি। এছাড়া ব্রহ্মরাজপুর গ্রামের সাহাপাড়া, ধুলিহর বেড়বাড়িসহ বেশ কয়েকটি চিহ্নিত স্পটে দারোগা জয়নালের মদদে ও স্থানীয় একটি প্রভাবশালী কুচক্রীমহলের সহায়তায় লক্ষ লক্ষ টাকা ব্লাকমেইলের মাধ্যমে আদায় করছে বলে জানা গেছে। এ চক্রের ফাঁদে পড়ে অনেকেই লক্ষ লক্ষ টাকা খুইয়ে সর্বশান্ত হলেও মান সম্মানের ভয়ে মুখ খুলতে চায় না। গত ১৭ আগস্ট রাতে সাহাপাড়ার ওই স্পটে বিদেশ ফেরত প্রবাসীকে ওই চক্র ফাঁদে ফেলে ৩লক্ষ টাকা চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করলে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।
সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার এএসআই জয়নালের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করেননি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। সচেতন এলাকাবাসী অবিলম্বে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিতর্কিত দারোগা জয়নালের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানিয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Leave a Reply