তুহিন হোসেন সাতক্ষীরা থেকে:
জনৈক কয়েকজন সাংবাদিক মাঝে মধ্যে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান বিভিন্ন তথ্য নেওয়ার জন্য।তারা যে কয়দিন ই গিয়েছেন পুলিশ সুপারের দপ্তরে ঠিক একই চিত্র দেখেছেন। চিত্র টি ছিলো এমন পুলিশ সুপারের কক্ষের সামনে ওয়েটিং রুমে নাম লিখিয়ে বসে আছে ১০-১২ জন নারী-পুরুষ ও বৃদ্ধ। তাদের ভিতরে বৃদ্ধ দম্পতী প্রথমে প্রবেশ করলেন পুলিশ সুপারের কক্ষে। পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান বলেন কি সমস্যা আপনাদের?
তখন এক হিন্দু ভদ্র মহিলা আসলেন পুলিশ সুপারের কক্ষে। তার অভিযোগ তাদের পরিবার কে মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষ হয়রানী করছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ সুপার সংশ্লিষ্ট থানার ওসি কে ফোন দিলেন এবং হিন্দু মহিলার নাম বলে দিলেন ওসি সাহেব কে বিষয়টি সঠিক ভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেন পুলিশ সুপার। পুলিশ সুপারের কথায় খুব একটা খুশি হতে পারলেন না ঐ হিন্দু মহিলা।
তিনি একটু এসপি সাহের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলেন, স্যার কডা টাকা দেই ঐ ফাড়ির ইনচার্জ কে আপনি বলে দেন। পুলিশ সুপার তখন একটু রাগ করে বলেন, খবদ্দার!! চার-আনা পয়সা দিবেন না আমার দারোগা কে। আমি জানতে পারলে কিন্তু তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করে রাখবো। ঐ হিন্দু মহিলা কে ড্রাগণ ফল আর কফি খাওয়ায়ে আপ্যায়ন করলেন পুলিশ সুপার। সময় লাগলো ২০-৩০ মিনিট কথা বলতে হলো পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানকে।
একই ভাবে আর এক বৃদ্ধ মহিলা পুলিশ সুপারকে বলেন স্যার আপনার ওমুক থানার ওমুক দারোগা আমাদের বিবাদী পক্ষের সেল্টার দিয়ে জমির প্রাচীর দিতে দিচ্ছেনা। সাথে সাথে তাদের সামনে পুলিশ সুপার লাউন্ড স্পিকারে ফোন দিলেন সেই থানার ওসির নিকট। বলেন, ওসি সাহেব দেখেন তো আপনার ওমুক দারোগা এদের ঝামেলা করছে কেনো? এরা অসহায় মানুষ জমির কাগজ পত্র ঠিক আছে এরা যাচ্ছে আপনার থানায়, ন্যায় বিচার করে দিয়েন। পুলিশ সুপার এত কিছু ওসি কে বলার পরেও বৃদ্ধ মহিলা পুলিশ সুপার কে বলছে স্যার, আপনি দারোগা বাবু কে বলে দেন। নাই দারোগা বাবু কথা শুনবেনা। একথা শুনে পুলিশ সুপার হেঁসে ফেলেন আর বলেন, আপনি যান দারোগা বাবু অবশ্যই ওসি সাহেবের কথা শুনবেন। যদি না শোনে তবে আমার ভিজিটিং কার্ড নিয়ে যান। আবার আমাকে ফোন দিয়ে জানাবেন। এই বৃদ্ধ দম্পতী কে আবার ড্রাগণ ফল আর কফি খাওয়ায়ে আপ্যায়ন করলেন পুলিশ সুপার। দুই দম্পতীর পিছনে পুলিশ সুপারের সময় নস্ট হলো প্রায় ৪০ মিনিটের বেশি।
দুটো অভিযোগ নিষ্পত্তির পর পুলিশ সুপার এবার স্টোনোর আনা বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ করতে থাকলেন। দাপ্তরিক কাজ শেষে আবারো এক মহিলা আসেন পুলিশ সুপারের কক্ষে। তার অভিযোগ তার স্বামী বাচ্চা রেখে চলে গেছে অন্য মহিলার সাথে। বাচ্চার ভরণপোষণ দেন না স্বামী। পুলিশ সুপার সাথে সাথে ওসি ডিবি কে ফোন করে লিখিত অভিযোগ নিয়ে তার স্বামী কে ডেকে আনতে বলেন। পুলিশ সুপারের তড়িৎ পদক্ষেপ দেখে অশ্রুশিক্ত চোখে ঐ মহিলা এসে পুলিশ সুপারের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে পুলিশ সুপারের জন্য দোয়া করে দেন।
তার কিছুক্ষণ পরে এক ষাটোর্ধ বৃদ্ধ দম্পতী আসেন পুলিশ সুপারের কক্ষে। তাদের অভিযোগ পুত্রবধূর কথা শুনে ছেলে পিতা-মাতার প্রতি অত্যাচার করেন।একই ভাবে পুলিশ সুপার ওসি ডিবি কে ফোন করে তাদের কে সহযোগীতা করার নির্দেশ প্রদান করেন।
এতক্ষণ উপরোক্ত ঘটনা গুলো পর্যবেক্ষণ করছিলেন পুলিশ সুপারের কক্ষে বসে থাকা কয়েকজন সাংবাদিক। তারা পুলিশ সুপার কে বিরক্ত হয়ে বলেন,এসপি মহোদয় আপনি তো প্রতি বুধবার বা বৃহম্পতিবার ডিসি অফিসের গণশুনানির মত করলে পারেন। পুলিশ সুপার উত্তরে সাংবাদিক দের বলেন,আমার কাছে দুর দুরন্ত অনেক বৃদ্ধ মানুষ কষ্ট করে আসে। আমি তাদের কি করে ফিরিয়ে দেবো? আমার বিবেকে বাধা দেয়। এই অসহায় মানুষ গুলো থানায় বিচার না পেয়ে দুর দুরন্ত থেকে অনেক আসা নিয়ে আসে আমার দপ্তরে। আমি যদি বিরক্ত বোধ করি, তাহলে তারা যাবে কোথায়?
পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানের কথা শুনে বোঝা গেলো তিনি সত্যি সত্যি শতভাগ আন্তরিকতার সহিত তাঁর পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন পাশাপাশি তিনি নিজ উদ্যোগেই তিনি এসব মানবিক কাজ গুলো করেন।
এসময় পুলিশ সুপারের কক্ষে বসা সাংবাদিকরা পুলিশ সুপার কে বলেন, আপনি জেলার ৮ টি থানা তদারকি করেন ,জেলা গোয়েন্দা শাখা, জেলা বিশেষ শাখা ও জেলা ট্রাফিক বিভাগ তদারকি করেন।যেটা করতে সারাদিন-রাত আপনার ব্যস্ততার ভিতরে সময় পার করতে হয়। এমনি কি আপনার সরকারি ফোনটি আপনি বন্ধ করে ঘুমাতে পারেন না
আপনি শত ব্যস্ততার ভিতরেও এই যে দুর-দুরন্ত থেকে আসা অসহায় মানুষ গুলোর সাথে হাসি মুখে কথা বলেন ও তাদের আপ্যায়ন করেন সত্যিই আপনি অতুলনীয় ও অসাধারণ পুলিশ সুপার। আপনি পারেন ও বটে। আপনার এই ধৈয্য সত্যিই প্রশাংসার দাবীদার। আপনাকে হৃদয় থেকে স্যালুট পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান পিপিএম। সাতক্ষীরা জেলায় গতবছর আগষ্ট মাসে আপনি যোগদান করেছিলেন, যোগদানের এক বছর পূর্ণ হওয়াতে আপনাকে অভিনন্দন। আপনার এই সেবা মুলক মানবিক কার্যক্রম অব্যহত থাকুক, সেটাই প্রত্যাষা মোদের।
Leave a Reply