ন্যাশনাল ডেস্ক: আজ সেই ভয়াল ১৭ আগস্ট। উগ্র জঙ্গিবাদের বিভীষিকাময় দিন। ২০০৫ সালের এই আগস্টেই বাংলার বুকে ঘটে এক নজিরবিহীন ঘটনা, যা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের কেউই কল্পনা করতে পারেনি।ক্ষমতায় তখন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। আর ওই সময়টি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। বাংলাদেশ তখন বোমাবাজদের অভয়ারণ্য। আদালতে বোমা, রাস্তায় বোমা, বাসে বোমা, ট্রেনে বোমা, মিটিংয়ে বোমা, সমাবেশে বোমা; চোরাগোপ্তা বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত জাতি। শত শত স্বজন হারানো মানুষের নিরূপায় আহাজারি ও কোটি কোটি মানুষের আতঙ্কমিশ্রিত দিনাতিপাত- বাংলাদেশে জঙ্গি-উত্থানলগ্নের সার্বিক চিত্র ছিল এমনই। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় (মুন্সিগঞ্জ বাদে) যুগপৎ বোমা হামলা চালিয়েছিল জেএমবি। অভিযোগ রয়েছে সিরিজ বোমা হামলা করতে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার ফান্ড গঠন করা হয়েছিল। ফান্ডের বেশির ভাগ টাকা এসেছিল মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে। বাকি অর্থ যুদ্ধাপরাধীদের গঠিত একটি রাজনৈতিক দল ছাড়াও বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে জোগান দেওয়া হয়েছিল।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দিনই সাতক্ষীরার পাঁচ জায়গায় বোমা হামলা চালানো হয়। দীর্ঘ ১৫ বছর পর সাতক্ষীরার পাঁচটি মামলার রায় দেওয়া হলো। এ ছাড়াও, ২০০৭ সালে সাতক্ষীরা থানার তৎকালীন ওসি গোলম মোহাম্মদ বাদী হয়ে এ ঘটনায় ২৩ জনকে আসামি করে মামলা করেন। সেই মামলার সব আসামিকে আজ আদালত বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছেন। ‘২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলায় একসঙ্গে বোমা হামলা চালায় জেএমবি।
এর মধ্যে সাতক্ষীরা শহরের শহীদ রাজ্জাক পার্ক, জেলা জজ আদালত চত্ত্বর, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত চত্ত্বর, বাস টার্মিনাল ও খুলনা মোড়ে একযোগে বোমা হামলা চালানো ও নিষিদ্ধ লিফলেট ছড়ানো হয়। ঘটনার দিনই সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বোমা হামলাকারী শহরতলীর বাঁকালের নাসিরুদ্দিন দফাদারকে প্রত্যক্ষদর্শী বাঁকাল ইসলামপুর চরের পকেটমার রওশানের বিবরণ মতে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সাতক্ষীরার রসুলপুরে জেএমবির ঘাঁটি চিহ্নিত করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ২০০৫ সালে পাঁচটি মামলা দায়ের করে।’
‘পরবর্তীতে ২০০৭ সালে সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি গোলাম মোহাম্মদ বাদী হয়ে আরও একটি মামলা দায়ের করেন। এসব মামলায় ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে ঢাকায় জেআইসিতে (জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঠানো হয়। সেখানে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া ছাড়াও জেএমবির বহু গোপন তথ্য জানায় তারা। পরে তাদের ফিরিয়ে আনা হয় সাতক্ষীরায়। গ্রেপ্তারকৃত মনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল ২০১১ সালের জুনে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে পালিয়ে যান। গ্রেপ্তার হওয়া সব আসামিই সাতক্ষীরার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বাঁকাল ইসলামপুরের নাসিরুদ্দিন দফাদার ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত কারণে সাতক্ষীরা কারাগারে মারা যান’।
২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার পাঁচ স্থানে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় হওয়া পাঁচটি মামলার ১৯ আসামির মধ্যে ১৭ জনকে কারাদ- দিয়েছেন আদালত। দ- পাওয়া ১৭ আসামির মধ্যে আট জনকে ১৩ বছর করে ও বাকি নয় জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেওয়া হয়।
‘আসামিদের মধ্যে শায়খ রহমান, বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানির মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে এসব মামলার আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। ২০০৬ সালের ১৩ মার্চ সিআইডি এসব মামলায় ১৯ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। ২০০৭ সালে দায়ের করা মামলাটিতে ২৩জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে এসব মামলার বিচারকাজ শুরু করেন।’ আসামীরা হলেন-মাহাবুবর রহমান, সাইফুল ইসলাম, ভারতীয় নাগরিক গিয়াসউদ্দিন, বিল্লাল হোসেন ওরফে আব্দুল্লাহ, হাবিবুর রহমান ওরফে ইসমাইল, মনিরুজ্জামান মুন্না, সাইফুল ওরফে আসাদুজ্জামান, হাজারী ওরফে সাঈদ, খালিদ হোসেন ওরফে মিন্টু, শামীম হোসেন ওরফে গ্যালিব, ওবায়দুল ইসলাম, রিয়াজুল ইসলাম, আনিসুর রহমান ওরফে ইসমাইল, আলমগীর হোসেন, আব্দুল আহাদ, আশরাফ আলী, মামুন, সদরের খড়িবিলার মমতাজ উদ্দিন ও আশাশুনির কুল্লার নূর আলী মেম্বর। এ মামলার আসামি সদর উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের ফখরুদ্দিন রাজি, সাতক্ষীরা সদরের সাতানির আবুল খায়ের, কলারোয়ার পাটুলি গ্রামের নাঈমুদ্দিন পলাতক।
Leave a Reply