মোঃ তুহিন হোসেন সাতক্ষীরা থেকে:
আজ ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে যারা নবীন রাষ্ট্রটির অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে চেয়েছিল, তারা নিক্ষিপ্ত হয়েছে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। তবু এই বিয়োগান্ত ঘটনায় জাতির অস্তিত্ব ও মননে যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখনো পুরো উপশম করা সম্ভব হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড বাংলাদেশকে এর মৌলনীতি ও প্রত্যয় থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে। ১৫ আগস্ট এখন সরকারিভাবে জাতীয় শোক দিবস। প্রতিবছর ১৫ আগস্টে আমাদের মন বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়। আজ এই দিনে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার-পরিজনসহ ১৫ আগস্টে নিহত সবার স্মৃতির প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাই, সবার আত্মার শান্তি কামনা করি।
অনেক বাধা-বিপত্তির পর দেরিতে হলেও ইতিহাসের জঘন্যতম এই হত্যাকান্ডের বিচার হয়েছে। খুনিদের অধিকাংশের দন্ড কার্যকর করার মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, জাতি গøানিমুক্ত হয়েছে। এখনো যারা পলাতক রয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে এই পর্বটির ইতি টানা প্রয়োজন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন একটি সুখী-সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তিই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান ও সাধনা। বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তাঁর অসীম সাহসী নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে যে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়, তার প্রধান প্রেরণাও ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যখন বঙ্গবন্ধু নতুন করে গড়ে তোলার কাজে ব্রতী হন, তখনই দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা ষড়যন্ত্র শুরু করে। এই ষড়যন্ত্র কেবল ব্যক্তি মুজিবের বিরুদ্ধে ছিল না, ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও তাঁর আদর্শের বিরুদ্ধে। দুঃখজনকভাবে ষড়যন্ত্রকারীরা দুই ক্ষেত্রেই সফল হয়েছে।
আজ জাতীয় শোক দিবসে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি এই মহান নেতাকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। আমরা মনে করি, তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে, যে সুখী, সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, তার বাস্তব রূপ দেওয়া। এমন একটি দেশ গড়ে তোলা, যেখানে স্বাধীনতার মূল চেতনা বাস্তবায়িত হবে এবং ধর্মগোত্রনির্বিশেষে সব মানুষ সম-অধিকার ভোগ করবে। গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায় এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই সেই কাজটি করা সম্ভব।
বঙ্গবন্ধুর শাসনকাল নিয়ে সমালোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অনন্য ও সাহসী ভূমিকা অস্বীকার করা বাংলাদেশকে অস্বীকার করারই শামিল। তাই, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের এই মহান স্থপতিকে আমাদের স্মরণ করতে হবে জাতীয়ভাবে, সব সংকীর্ণতা ও দলীয় গন্ডির বাইরে গিয়ে। বঙ্গবন্ধু কোনো দলের নন, সমগ্র জাতির।
Leave a Reply