ফারুক হোসেন সোহাগ সাতক্ষীরা:
দেশের সোনালী আশ খ্যাত পাট চাষে কৃষকদের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। ৩ থেকে ৪ বছর আগেও ন্যায্য দাম না পেয়ে যে সব কৃষক পাট উৎপাদন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো তারাই এখন পাট চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এতে করে জেলায় আবাদ বেড়েছে পাটের। সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ বলছেন, গত দুই থেকে তিন বছরে পাটের চাহিদার পাশাপাশি দামও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। ফলে চাষিদের মাঝে আবারও আগ্রহ বাড়ছে পাট উৎপাদনে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাশেমপুর গ্রামের কৃষক মোমিন জানান, চলতি মৌসুমে সাড়ে ২ বিঘা পরিমান জমিতে তোষা জাতের পাটের আবাদ করেছেন। যা গত বছরের তুলনায় অর্ধবিঘা বেশি পরিমান। তিনি বলেন, গেল বছর ২ বিঘা পরিমান জমিতে ফসলটি আবাদ করে ৩০ মন পাট উৎপাদন হয়। জমি চাষ থেকে শুরু করে বীজ বপন, পাট ক্ষেতের আগাছা নিংড়ানো এবং পানিতে পচায়ে শুকানো পর্যন্ত তিন বিঘাতে মোট উৎপাদন খরচ হয়েছিলো ২২ হাজার। সেখানে ৩০ মণ পাট বিক্রি প্রায় ৯০ হাজার টাকা। প্রতি মণ পাটের দাম পাওয়া গিয়েছিলো ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত। যা খরচ বাদে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা লাভ হয়। এছাড়া আরো ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার পাটখড়ি বিক্রি হয় বলে জানান এই কৃষক। তিনি আরো বলেন, ৩ থেকে ৪ বছর আগেও পাট চাষ করে লোকসান হয়েছে তার। কিন্তু গেল দুই বছর পাটের বাজার খুবই ভালো যাচ্ছে বলে জানান কৃষক েেমামিন। তিনি বলেন, মনে হচ্ছে পাটের আবারও সুদিন এসেছে।
একই উপজেলার নিতমতলা গ্রামের কৃষক মো. আসাদুল ইসলাম জানান, চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে ৪ বিঘা জমিতে আট চাষ করেছেন। গত বছর একই পরিমান জমিতে পাট উৎপাদন করে ৯০ হাজার টাকা লাভ হয় তার। তিনি বলেন, ২০১৮-২০১৯ পর্যন্ত পাটের বাজার খুবই মন্দা গেছে। তখন পাট বিক্রি করে উৎপাদন পর্যন্ত বাচানো যেতো না। কিন্ত পরপর গেল দুই থেকে তিন বছর পাটের দাম ভালো পাচ্ছে। আগামীতে পাটের আবাদ আরো বাড়াবেন বলে জানান এই কৃষক।
স্থানীয় ঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাসনিন আকতার তামান্না বলেন, তার এলাকার কৃষকদের মধ্যে পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে। অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় চলতি মৌসুমে পাটের আবাদও বেড়েছে। ফসলটি উৎপাদনে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সবধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলাতে পাট আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্য ১ লাখ ২৮হাজার ১২ বেল। সূত্রটি আরো গেল বছর জেলায় পাট আবাদ হয় ১১ হাজার ৪৯০ হেক্টর পরিমান জমিতে। এ হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২০০ হেক্টর পরিমান আবাদ বেড়েছে পাট। এব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সোনালী আঁশ নামে খ্যাত পাট চাষে সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। পাটের চাহিদার পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়াতে ফসলটি উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মধ্যে।
Leave a Reply