শ্যামনগর প্রতিনিধি: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় রোববার রাত থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। সেই সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে ক্রমেই বৃদ্ধি পায় বাতাসের গতিবেগ। সর্বশেষ আবহাওয়া বার্তায় উপকূলীয় সাতক্ষীরা জেলায় ৭ নাম্বার বিপদ সংকেত দেখাতে বলার পর থেকে জেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে; উপকূলজুড়ে শুরু হয়েছে মাইকিং। মোড়ে মোড়ে ওড়ানো হয়েছে লাল পতাকা। প্রস্তুত রয়েছে সিপিপি, আনসার, নৌ-পুলিশ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে শ্যামনগরের গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী এবং আশাশুনির প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আশাশুনি সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে যাওয়া শুরু করেছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সকাল ১০টা পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে; যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাতাসের মাত্রাও বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা উপকূলে ৫ থেকে ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা রয়েছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে পদ্মপুকুর ইউনিয়ন সিপিপির টিম লিডার জিএম মাসুম বিল্লাহ বলেন, নদীতে এখন জোয়ার। সকাল থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। জোয়ারের পানি গত দিন থেকে আজ বেশি, এলাকার মানুষ নাজুক বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কিত। দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রয়েছে।
দ্বীপ ইউনিয়ন পদ্মপুকুরের চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলাম বলেন, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ২৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ। কামালকাটি, ঝাপা, পশ্চিম পাতাখালী, পূর্ব পাতাখালী, চন্ডিপুর চাউলখোলা, পাখিমারা এলাকার বেড়িবাঁধ নাজুক। এলাকাবাসীকে মাইকিং করে সর্তক করা হচ্ছে। সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে শুকনা খাবার ও পানি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, চারপাশে নদীবেষ্টিত গাবুরাকে ঘিরে থাকা বাঁধ আইলার পর থেকে বেশ নিচু হয়ে আছে। এছাড়া ইয়াস ও আম্পানের পর থেকে বড়গাবুরা, হরিশখালীসহ কয়েকটি অংশের বাঁধও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এমতাবস্থায় ইউনিয়নের ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিম্নচাপকে ঘিরে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আসার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।
শ্যামনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শাহীনুল ইসলাম জানান, সাইক্লোন শেল্টারগুলো খুলে রাখা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকিংসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন আশ্রয় সেন্টারে আসছেন।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। দুর্যোগের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় জেলার ২৫০টির অধিক আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়াও ১ হাজার ২৫০টি স্কুল-কলেজ বিকল্প আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রয়েছে। জেলায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। ৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, সোমবার (২৪ অক্টোবর) বেলা ১১টায় শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে তিনি উপস্থিত থেকে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দুর্যোগ মোকাবেলার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রত্যেকটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের ঝড়ের পূর্বেই মানুষকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রত্যেক ইউনিয়নে মেডিকেল টিম প্রস্তুতকরণ, পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও খাওয়ার পানি মজুদ রাখা, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপজেলায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। যেসব এলাকার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ আছে। সেসব এলাকায় বিশেষভাবে নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে মেরামতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
Leave a Reply