তুহিন হোসেন সাতক্ষীরা থেকে: গেল অর্থবছরে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আহরণ করতে না পারলেও রপ্তানি আয় বেড়েছে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে। ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা রপ্তানি আয় বেশি হয়েছে বন্দরটিতে। বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা পরবর্তী সময়ে দেশী পণ্যের চাহিদা বাড়ায় রপ্তানি বেড়েছে। ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে যে পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে তা হলো পাটের সুতা, তাঁতের শাড়ি, মশারী নেট, গার্মেন্টস বর্জ্য, মধু, রাইস ব্র্যান্ড অয়েল, মাছ ও বিভিন্ন ধরনের প্রাণের ফুডস সামগ্রী উল্লেখযোগ্য। তবে ভোমরা স্থলবন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী নেতাদের দাবি, সব ধরনের পণ্য আমদানি করার সুযোগ পেলে রপ্তানির পাশাপাশি পণ্য আমদানিতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা যেত।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব শাখা থেকে জানা গেছে, সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছর এ বন্দর দিয়ে ২ লাখ ৬৭ হাজার ১৮৩ টন বিভিন্ন ধরনের বাংলাদেশী পণ্য রপ্তানি হয়, যার মূল্য ৩ হাজার ২১ কোটি ৪ লাখ ১৫ হাজার ১৫২ টাকা, যা তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৮২ কোটি ৫৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৫১ টাকা বেশি। সূত্রটি জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে এ বন্দরে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয় ২ লাখ ৬২ হাজার ৩১৯ টন, যার রপ্তানি মূল্য ২ হাজার ৭৩৮ কোটি ৫০ লাখ ২৬ হাজার ৭০১ টাকা।
ভোমরা স্থলবন্দরের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স গনি অ্যান্ড সন্সের ব্যবস্থাপক অশোক কুমার দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণকে জানান, তার প্রতিষ্ঠান আমদানির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করে। বিগত ২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩ অর্থবছরে অন্তত ২০-২৫ শতাংশ পরিমাণ পণ্য রপ্তানি বেশি হয়েছে তার প্রতিষ্ঠানে।
বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণকে বলেন, শুধু রপ্তানি নয় আমদানিতেও ব্যাপক সম্ভাবনা ভোমরা স্থলবন্দর। এ বন্দরে ৭৪টি পণ্য আমদানির অনুমোদন রয়েছে। তবে ভোমরা বন্দরের যাত্রা শুরু থেকে নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার। পার্শ্ববর্তী বেনাপোল বন্দরে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায়, তার কিছুই দেয়া হয় না ভোমরা বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের।
ভোমরা বন্দরের সি,এন্ড,এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এ এস এম মাকছুদ খান দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণকে বলেন, ভোমরা বন্দর এলাকায় রাস্তার সংস্কার কাজ চলছিল সেটি কয়েক মাস আগে শেষ হয়েছে। এছাড়া ভারতীয় অংশে রাস্তা গুলো আগেই সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এজন্য এই বন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের চেয়ে এখন অনেক উন্নত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী বেনাপোল বন্দরে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায়, তার কিছুই দেয়া হয় না ভোমরা বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের।
সাতক্ষীরা জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণকে বলেন, পণ্য আমদানি রপ্তানিতে খুবই সম্ভাবনাময় ভোমরা স্থলবন্দর। এ বন্দরের সক্ষমতা বাড়ালে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে দেশের অন্যান্য বন্দরের চেয়ে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বে থাকা কাস্টমস ডেপুটি সহকারী কমিশনার নেয়ামুল হাসান দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণকে বলেন, পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে কাস্টমসের পক্ষ থেকে স্বচ্ছতা বজায় রেখে ব্যবসায়ীদের সর্বাত্মক সেবা প্রদান করা হয়। যে কারণে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে রফতানি আয় বেড়েছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ভোমরা শুল্ক স্টেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
Leave a Reply