আবু সাঈদ সাতক্ষীরা : দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও ভবিষ্যৎ আন্দোলনের রূপরেখা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা করেছে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি।
শনিবার (১৫ মার্চ) শহরের নিরিবিলি কমিউনিটি সেন্টারে জেলা বিএনপি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় জেলার সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরও সুসংহত করতে ১২ দফা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
সভায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহমাতুল্লাহ পলাশের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সম্মানিত সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী আলাউদ্দিন। এছাড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসান হাদী, তাসকিন আহমেদ চিশতী, ড. মনিরুজ্জামান মনি, আখতারুল ইসলামসহ বিভিন্ন উপজেলা ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহের মধ্যে রয়েছে-
(১) নেতাকর্মীদের সতর্কতা ও সংযম: দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য অনুসরণ করে সকল নেতাকর্মীকে চলাফেরা, আচার-আচরণ ও কথাবার্তায় সতর্ক ও সংযত থাকতে হবে।
(২) জনপ্রতিনিধিত্বের বিষয়ে সচেতনতা: বিএনপি বর্তমানে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নেই এবং দলের কেউ জনপ্রতিনিধি নন। এ বিষয়টি নিজেদের উপলব্ধি করতে হবে এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও তা বুঝাতে হবে।
(৩) সামাজিক সহায়তা কার্যক্রম থেকে দূরে থাকা: টিসিবি/ভিজিএফ কার্ড বা অন্য কোনো সরকারি সহায়তা বিতরণের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।
(৪) সালিশ-বিচার ও ব্যক্তিগত লেনদেন থেকে বিরত থাকা: জমিজমা, ব্যবসায়িক লেনদেন বা অন্যান্য ব্যক্তিগত বিরোধের সালিশ-বিচারে না জড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হলো। বরং প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট জেলা/পুলিশ প্রশাসনে রেফার করা যেতে পারে।
(৫) স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটি গঠন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে জটিলতা এড়াতে আগাম আলোচনা করতে হবে, অ্যাডহক কমিটির পরিবর্তে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
(৬) ইজারা গ্রহণ থেকে বিরত থাকা: বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কোনো ইউনিট প্রধান হাট-বাজার বা বাওড় ইজারা নেওয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন না।
(৭) দায়িত্বশীল আচরণ ও সততা: আমরা সবাই নেতা এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আমানত হিসেবে নিজ নিজ এলাকার দায়িত্ব নিতে হবে। ঘনিষ্ঠজনদের অপরাধকে উপেক্ষা করা এবং অন্যদের ভুলকে কঠোরভাবে দেখা যাবে না। দায়িত্ব পালনে সকলকে সৎ ও নিরপেক্ষ থাকতে হবে।
(৮) সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য মতবিনিময় সভা: সভার গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ দ্রুত তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে জেলা/মহানগর বিএনপি তাদের অধীনস্থ উপজেলা/থানা/পৌর বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবে। এসব সভাগুলো তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হবে: প্রথম ধাপ: জেলা/মহানগর বিএনপি উপজেলা/থানা/পৌর বিএনপি। দ্বিতীয় ধাপ: উপজেলা/থানা/পৌর বিএনপি ইউনিয়ন/ওয়ার্ড বিএনপি। তৃতীয় ধাপ: ইউনিয়ন/ওয়ার্ড বিএনপি /ওয়ার্ড/মহল্লা বিএনপি।
(৯) দলের নীতি ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে নেতাকর্মীদের সচেতন করা: মতবিনিময় সভাগুলোতে দলের নীতি, আদর্শ এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল (এনসিপি) সম্পর্কে নেতাকর্মীদের অবহিত করতে হবে। বিএনপির বিরুদ্ধে চলমান ষড়যন্ত্র সম্পর্কে স্পষ্ট বার্তা পৌঁছাতে হবে।
(১০) সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা: দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় বা নেতাকর্মীদের অনিচ্ছাকৃত ভুলকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা গণমাধ্যমে প্রচার করা গুরুতর সাংগঠনিক অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
(১১) সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ: মতবিনিময় সভাগুলোকে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিতে হবে। বার্তা যথাযথভাবে নেতাকর্মীদের বুঝাতে হবে। কাউন্সেলিং কার্যকর না হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(১২) ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা: ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসমূহ যেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেছে, আগামীতেও একইভাবে দেশি-বিদেশি সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দলকে সুসংগঠিত করতে বিএনপি মাঠে থাকবে। আগামী দিনে আরও কার্যকর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে এবং নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তারা।
Leave a Reply