⬛ প্রানহানির শংকায় রোগীরা ⬛ নেই লাইসেন্স নবায়ন ⬛ অবৈধ পন্থায় চলছে কার্যক্রম ⬛ সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব ⬛ পরিত্যক্ত ঘোষণার দাবি…
মোহাম্মদ মুজাহিদ: সাতক্ষীরায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চিকিৎসা সেবা প্রদান করার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন “জয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার” নামক প্রতিষ্ঠানে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগীরা ডাক্তার দেখানোর নিমিত্তে এবং সেবা গ্রহণের জন্য আসেন। অথচ, ঐ ভবনটির দেয়ালে ফাটল ও চির দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে অনেকেই চিহ্নিত করেছেন। সেকারণে অনেক রোগী নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। অভিযোগ আছে, ইতিমধ্যে “জয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার” নামক প্রতিষ্ঠানের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্বেও নিয়মিত সিরিয়াল দেওয়ার মাধ্যমে সেখানে রোগী দেখেন চিকিৎসকরা। এছাড়া রোগীদের রোগ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে ডাক্তার ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে টেস্ট সম্পন্ন করার পরামর্শ দেন। সে মোতাবেক রোগীরা উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে পেসক্রিপশনে উল্লেখ করা বিভিন্ন প্রকার টেস্ট সম্পন্ন করছেন। টেস্ট শেষে মোটা অংকের টাকা নিয়ে রোগীদের কাছে রিপোর্ট প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মালিকপক্ষ কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করেই ভবনটি অবাধে ব্যবহার করছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরা, বাঁকালে অবস্থিত “জয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে” চলতি বছরের ২০২৪-২০২৫ সালে লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অমান্য করে “জয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চলছে অবাধে কার্যক্রম। এর আগে সর্বশেষ ২০২২-২০২৩ সালে লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। কিন্ত অদ্যাবধি এখনো কোন প্রকার লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। লাইসেন্স নবায়ন ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ থাকার কথা থাকলেও অবলীলায় চলছে নিয়মিত রোগী দেখা থেকে শুরু করে রোগীদের বিভিন্ন প্রকার টেস্ট বানিজ্য। বেসরকারি হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে নিয়মিত লাইসেন্স নবায়ন না করার ফলে সরকার হারাচ্ছে বড় ধরনের রাজস্ব। “জয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে” প্রতিদিন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অনেক রোগী এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই অবৈধ পন্থায় কিভাবে “জয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার” তাদের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে এসব নিয়ে নানা মহলে রয়েছে অনেক জল্পনা কল্পনা। এ ব্যাপারে রীতিমতো অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, জয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দ্বিতল বিশিষ্ট ভবনটির বিভিন্ন স্থানের পাকা ঢালাই খসে পড়ে সেখানে রড দেখা যাচ্ছে। এছাড়া দেয়ালে ফাটল এবং চির ধরেছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত এক মাস পূর্বে জয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হঠাৎ দেয়ালে দৃশ্যমান ফাটল দেখা যায়। তারা বলেন, জয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সৌন্দর্য বর্ধনে তৈরি ছাদের নিচ ভাগে প্লাস্টিকের সিলিং নষ্ট হলেও সেখানে কোনো রোগী না থাকায় বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। তারা আরও বলেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যে কোন সময় যে কোন মুহূর্তে জয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা বিদ্যমান রয়েছে। এদিকে, জয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কমিশন ভুক্ত দালালদের মাধ্যমে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন রোগীদেরকে ভাগিয়ে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর জন্য উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসেন। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী হয়ে থাকে। একই সাথে রোগীর স্বজনরাও জয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এসে থাকেন। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় রয়েছে ব্যপক প্রানহানির আশংকা।
সচেতন মহল সহ সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের অভিমত, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে যেনো ভয়ংকর দুর্ঘটনা এবং কোন প্রকার প্রাণহানী না ঘটে তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামক প্রতিষ্ঠানটি অচিরেই পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে তাদের সব কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত।
এ বিষয় “জয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার” প্রতিষ্ঠান পরিচালক ডাঃ সমীর কুমার দাশ এর সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার আলাপের চেষ্টা কালে আলাপ কলটি গ্রহণ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয় সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন মোঃ আব্দুস সালাম মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, আমি আসছি মে মাসের ২৮ তারিখে, তারা কেন লাইসেন্স নবায়ন করেনি তা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, আমি মে মাসে আসার পর অনেক হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভিজিট করেছি। অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিকের কোন লাইসেন্স নেই এবং অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা লাইসেন্স নবায়ন করেনি। তিনি বলেন, ডিজি অফিসের নতুন নিয়ম অনুযায়ী নারকোটিকের লাইসেন্স এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন হবেনা। তিনি বলেন, অবৈধ ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর তালিকা করে সাতক্ষীরা ডিসি অফিসকে দিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধ ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নিতে পারবেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিধিমোতাবেক জয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেনা।
Leave a Reply