মাসুম বিল্লাহ সদর প্রতিনিধি: মধ্য আষাঢ়ে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সাতক্ষীরা জেলাসহ আশাপাশের বিভিন্ন জেলায় ঝরছে বৃষ্টি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন জীবিকার তাগিদে সড়কে বের হওয়া শ্রমজীবী-কর্মজীবী এবং অফিসগামী মানুষজন। আবহাওয়া ছিল মেঘাচ্ছন্ন। ‘মেঘের উপর মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে, আমায় কেন দাঁড়িয়ে রাখ একা দ্বারের পাশে, তুমি যদি না দেখা দাও করো আমায় হেলা, কেমন করে কাটে আমার এমন বাদল বেলা।’ কবির এমন আকুতির জবাব হয়তো এভাবে দিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায়, ঝরঝর বৃষ্টিতে জলভরা দৃষ্টিতে, এসো কোমল শ্যামলও ছায়ায়, চলে এসো তুমি চলে এসো এক বরষায়…।’ আষাঢ়ের ভোর থেকে মঙ্গলবার সাতক্ষীরায় থেমে থেমে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি ঝরেছে। এতে ইটপাথরের কর্মব্যস্ত নগর জীবনে দেখা দেয় ছন্দপতন। গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে কর্মজীবী মানুষের জীবন যেন হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। এর আগে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দু’দিনের বৃষ্টিতে ছোট ছোট পুকুর কানায় কানায় পানি ভরে গেছে। এছাড়া ফসলী জমিতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা ও অফিস আদালতের কর্মজীবী মানুষ বিড়ম্বনায় পড়েছেন। কৃষকরা বলেন, দু’দিন বৃষ্টি হওয়ার আগে প্রচন্ড তাপদহ দেখা দেয়। প্রচন্ড তাপদাহে নাকাল হয়ে পড়ে কর্মজীবী মানুষ। বৈশাখের তাপদগ্ধ প্রকৃতিতে কষ্টের কান্না হয়ে আসে বর্ষা। বর্ষায় সিক্ত হয় প্রকৃতি। ইজিবাইক চালক মিজানুর রহমান দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পন এর প্রতিনিধিকে বলেন, ‘সকালে বের হয়েছি, কিন্তু রাস্তা ফাঁকা। লোকজন বের হচ্ছে না। ভাড়া নেই, তাই গাড়ি নিয়েই দাঁড়িয়ে আছি।’ ভ্যানচালক আসাদ বলেন, ‘বৃষ্টির দিনে যাত্রী মেলে না, আবার ভ্যানে ছাতা নাই বলে আমরা নিজেরাই ভিজে যাই। তখন আর বের হওয়া ঠিক হয় না।’ আরোও বলেন বৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই কেউ কেউ বের হচ্ছেন কাজের সন্ধানে, আবার কেউ আশায় থাকলেও ফিরছেন শূন্য হাতে।
আমন ধান চাষ করার জন্য আষাঢ় মাসে ধানের বীজ বপন করে চাষীরা। ধানের বীজ বপনের পর ধানের চারা হয়। ওই চারা দিয়ে আষাঢ় মাসের শেষের দিকে আমন ধান রোপন শুরু করেন ধান চাষীরা। যার ফলে আষাঢ় মাসে বৃষ্টি পানি কৃষকদের খুবই জরুরী প্রয়োজন। কৃষকরা আরো বলেন, অপরিকল্পিত মৎস্য ঘেরের কারণে সামন্য দু’দিন বৃষ্টিতে মাঠের ফসলী জমিতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মৎস্য ঘেরের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় অতিরিক্ত বৃষ্টির হলেই অনেকে কৃষকরা প্রতিবছর ফসিল জমিতে ধান চাষ করতে পারেন না। আবার অনেক কৃষক ঝুঁকি নিয়ে তাদের ধান চাষ করতে হয়। মৎস্য ঘেরের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলে ফসলি মাঠে জলবদ্ধতা হয় না এবং কৃষকরা ভালোভাবে ফসিল মাঠে ধান চাষ করতে পারেন। জলাবদ্ধতা কৃষকদের দুশ্চিন্তা বাড়ায়। জলাবদ্ধতা নিরসনে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন চাষিরা।
Leave a Reply