নিজস্ব প্রতিনিধি: পিতাকে ভাই বানিয়ে ওয়ারেশ কায়েম সনদ দিয়েছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ লুৎফর রহমান। ফিংড়ি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বর মোঃ আবু ছালেকের সুপারিশে এ সনদ দিয়ে এলাকায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান। জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ, ভোটার তালিকা, বিবাহের কাবিননামা, ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিবেদন ও এলাকাবাসীর প্রত্যায়নে মোছাঃ তাছলিমা খাতুনের পিতার নাম মোঃ ইনছাফ আলী এবং মাতার নাম মোছাঃ জাহানারা বেগম। জাতীয় পরিচয়পত্র নং ৬৮৭৬৫৪৮৮৪০। ঠিকানা: গ্রাম/রাস্তা: নওয়াপাড়া, ডাকঘর: বুধহাটা-৯৪০৩, আশাশুনি, সাতক্ষীরা। জন্ম নিবন্ধন নং ১৯৮৬৮৭১০৪৩৪০০৭৬২৫। জন্ম তারিখ ০৬-০২-১৯৮৬। আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের নওয়াপাড়া (ভোটার এলাকার কোড: ০৭৪৭) এলাকার ভোটার তালিকায় মোছাঃ তাছলিমা খাতুনের ০৭২১ নং ক্রমিকে ভোটার নং ৮৭০৭৪৭৮৪৫৭৬৯। ২০০২ সালের ২১ মার্চ সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা গ্রামের মোঃ রেজাউল খাঁর পুত্র মোঃ রওশন আলীর সাথে বিবাহ হয় তাছলিমা খাতুনের। আশাশুনির নওয়াপাড়া গ্রামের মরহুম আব্দুর রহিমের ছেলে মাওঃ আব্দুর রাজ্জাক বিবাহ রেজিস্ট্রি করেন। রেজিস্ট্রারের ১৭ নং বহিতে ৫০নং পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ তথ্য অনুযায়ী মোছাঃ তাছলিমা খাতুনের পিতার নাম পিতার নাম মোঃ ইনছাফ আলী এবং মাতার নাম মোছাঃ জাহানারা বেগম। এছাড়া ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর ফিংড়ি ইউপির তৎকালীন চেয়ারম্যান মোঃ শামছুর রহমানের দেওয়া এক প্রতিবেদনেও মোছাঃ তাছলিমা খাতুনের পিতার নাম মোঃ ইনছাফ আলী এবং মাতার নাম মোছাঃ জাহানারা বেগম। অথচ সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৪নং ফিংড়ি ইউপির চেয়ারম্যান মোঃ লুৎফর রহমান গত ১৪-০৬-২০২২ তারিখে পিতা মোঃ ইনসাফ আলী মোড়লকে মোছাঃ তাছলিমা খাতুনের ভাই বানিয়ে ওয়ারেশ কায়েমি সনদ দিয়েছেন। যে সনদে তাছলিমা খাতুনের পিতার নাম লেখা হয়েছে মৃত আফিল উদ্দীন মোড়ল। অথচ আফিল উদ্দীন মোড়লের কোন কন্যা সন্তান ছিল না। ০৭ নং ওয়ার্ড মেম্বর আবু ছালেক সম্পূর্ণ বেআইনি ও গায়ের জোরে প্রভাব খাটিয়ে চেয়ারম্যান কে দিয়ে এ কাজ করিয়ে নিয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী। সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ শামছুর রহমানের দেওয়া প্রতিবেদনে জানা যায়, ফিংড়ি ইউপির জোড়দিয়া গ্রামের মোঃ আফিল উদ্দীন মোড়লের দুই পুত্র সন্তান যথাক্রমে মোঃ আকবর আলী ও মোঃ ইনসাফ আলী ছাড়া আর কোন ওয়ারেশ নেই। মোছাঃ তাছলিমা খাতুন আফিল উদ্দীনের কন্যা নন, বরং তিনি মোঃ ইনসাফ আলীর কন্যা। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা জানান, উক্ত তাছলিমা খাতুনের পিতা ইনসাফ আলীর নিকট থেকে জোড়দিয়া গ্রামের মৃত কেয়াম উদ্দীন বিশ্বাসের ছেলে মোঃ আব্দুল বারী বিশ্বাস কিছু সম্পত্তি কেনার কারণে ইনসাফ আলীর অপর ভাই আকবর আলী ও ইউপি মেম্বর আবু ছালেক মিলে আব্দুল বারীকে হয়রানীর করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ওই আপত্তিকর সনদ দিয়েছে। স্থানীয়রা আরও জানান, গত নির্বাচনে আব্দুল বারী বিশ্বাস বর্তমান মেম্বর আবু ছালেকের দল না করায় মেম্বর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মেম্বারের পক্ষের বিভিন্ন লোকজন দিয়ে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ করে নিরীহ আব্দুল বারীকে নাজেহাল করছে। পিতাকে ভাই বানানো ওই ওয়ারেশ কায়েমি সনদের বিরুদ্ধে আব্দুল বারী বিশ্বাস যাতে আইনের আশ্রয় নিতে না পারে সেজন্য মেম্বর ও তার লোকজন হুমকি-ধমকি ও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে বলে সাতক্ষীরা থানায় অভিযোগ থেকে জানা গেছে। আব্দুল বারী বিশ্বাস বলেন, সার্বিক বিষয়ে রেজিস্ট্রি পত্রের মাধ্যমে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ লুৎফর রহমানকে জানানো সত্তে¡ও সম্পূর্ণ গায়ের জোরে কোন প্রকার প্রমাণাদি ছাড়াই মেম্বরের কথামত আপত্তিকর ওই ওয়ারেশ কায়েম সনদ দিয়ে আমাকে চরমভাবে হয়রানী করছে।
এ ব্যাপারে ইউপি মেম্বর আবু ছালেক বলেন, জোড়দিয়া গ্রামের আফিল উদ্দীন মোড়লের স্ত্রী জাহানারা খাতুন তালাকপ্রাপ্ত হলে সতীন পুত্র ইনসাফ আলীর সাথে বিবাহ করেন। আমরা মনে করি, তাছলিমা খাতুন আফিল উদ্দীনের কন্যা। স্থানীয় মসজিদ মাদ্রাসার সভাপতি-সেক্রেটারী মসজিদে দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিয়েছে তাই আমরা ওেই ওয়ারেশ কায়েম সনদ দিয়েছি। জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ, ভোটার তালিকা, বিবাহ রেজিস্ট্রারে মোছাঃ তাছলিমা খাতুনের পিতার নাম মোঃ ইনছাফ আলী, আফিল উদ্দীন নয় কেন-এমন প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান তিনি।
ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, ইউপি মেম্বর মোঃ আবু ছালেকের সনাক্তে ও সুপারিশে ওই ওয়ারেশ কায়েম সনদ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় মসজিদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অনেকেই লিখিতভাবে জানালে আমরা ওই ওয়ারেশ কায়েম সনদ দিয়েছি। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ, ভোটার তালিকা, বিবাহের কাবিননামা, ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিবেদনে মোছা: তাছলিমা খাতুনের পিতার নাম মোঃ ইনছাফ আলী আছে।
Leave a Reply