নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় বই উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতে লাইব্রেরি ও স্কুল গুলোতে শুরু হয়েছে নিষিদ্ধ নোট গাইড বইয়ের রমরমা বাণিজ্য। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, পুস্তক বিক্রেতা ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা নিষিদ্ধ গাইড বাণিজ্যের এই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ফলে বাধ্য হয়েএসব গাইড বই কিনতে হচ্ছে তাদের।
অভিভাবকদের অভিযোগ, কিছু অসাধু শিক্ষক, প্রকাশনী, বিক্রেতা এসব অবৈধ গাইড বই বাজারজাতের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ফায়দা হাসিল করছেন।
যদিও দেশে ১৯৮০ সালের নোট বই নিষিদ্ধকরণ আইন বিদ্যমান। আর এই আইন অনুসারে গাইড ও নোটবই ছাপা এবং বাজারজাত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এছাড়া ২০০৮ সালে নির্বাহী আদেশে ও শিক্ষা আইন ২০২০ সালের খসড়া আইনে চুড়ান্ত ভাবে নোটবই ও গাইডবই নিষিদ্ধ করা হয়।
সূত্র জানায়, জেলাব্যাপী বইয়ের দোকান গুলোতে প্রকাশ্যে চলছে নিষিদ্ধ নোট গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসা। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে আবার ‘একের ভিতরে সব’ বলে প্যাকেজ করে গাইড বিক্রি করছে। বিক্রেতারা এসব গাইড বই টেস্ট পেপার, সহায়ক বই, মেইড ইজিসহ বিভিন্ন নামে বাজারে বিক্রি করছেন। এদের মধ্যে শহরের বইমেলা নামক দোকানটি উল্লেখযোগ্য। দোকান মালিক জাহাঙ্গির হোসেন পপি, লেকচার, পাঞ্জেরি, দিকদর্শন,নবদূতসহ বিভিন্ন নোট গাইড কোম্পানির সাতক্ষীরা ডিলার হিসাবে নাম শোনা গেলেও তিনি বলেন নোট গাইড বিক্রি করি কিন্তু আমি ডিলার না।
জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বইয়ের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে শুরু করে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন নামে বিভিন্ন কোম্পানির গাইড বই বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সাজেশন নামেও গাইড বই বাজারে বিক্রি হতে দেখা যায়।
দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত বাজারে বিক্রি হওয়া গাইড বইয়ের অন্যতম প্রকাশনী সংস্থা হলো নবদূত, দিকদর্শন, লেকচার,পপি ও পাঞ্জেরী। এসব গাইড বই কিনতে খরচ হচ্ছে ৬’শ থেকে ২ হাজার টাকা। অভিযোগ রয়েছে, নির্দিষ্ট প্রকাশনার প্রতিনিধিরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ম্যানেজ করে শিক্ষার্থীদের এসব গাইড কিনতে উৎসাহিত করছেন। ক্লাসে বুকলিস্ট দিয়ে নির্দিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নোট, গাইড বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন তারা। এজন্য তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে অলিখিত চুক্তির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থও প্রদান করেন।
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে তার মধ্যে আলিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাথে ১ লক্ষ টাকার চুক্তি হয়েছে পপি ও লেকচার প্রকাশনার ৪০ হাজারে, ঝাউডাঙ্গা সোনার বাংলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক এর সাথে চুক্তি হয়েছে পপি প্রকাশনির। এছাড়া সাতক্ষীরা সদর, তালা, কলারোয়া, আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সাথে চুক্তিতে চলছে এ নিষিদ্ধ নোট গাইড। এমনকি জেলার বিভিন্ন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও চলছে এই বাণিজ্য।
এছাড়া জেলা শহরের বুনিয়াদ, বেসিকসহ কয়েটি কোচিং সেন্টারের পক্ষ থেকে ইংরেজী গ্রামারসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ নোট গাইড কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছে।
অনুসন্ধানে জেলার স্কুলগুলোর সাথে সমন্বয়কারী হিসেবে নাম উঠে এসেছে সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও নবারুণ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেকের। যে নিজেই প্রকাশনা কোম্পানিগুলোর সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান অথবা ম্যানেজিং কমিটির সাথে যোগাযোগ ও লেনদেনের বিষয়টি নিশ্চিত করছেন।
এব্যাপারে নবারুণ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষব আব্দুল মালেক জানান, নোট গাইড বিক্রির ব্যাপারে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এব্যাপারে পাঞ্জেরি প্রকাশনির সাতক্ষীরা প্রতিনিধি আবু হাসান জানান, নোট গাইড বিক্রি হচ্ছে এটা সঠিক,আমরা স্কুলে স্কুলে যাচ্ছি সৌজন্য সংক্ষা দিচ্ছি। শিক্ষকদের সাথে অর্থলেনদেনের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে আমাদেরই চলতে কষ্ট হচ্ছে। কাগজের দাম বৃদ্ধিসহ নানাবিধ কারনে আমরা সংকটে আছি।
এব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার অজিত কুমার সরকার জানান, বর্তমান সময়ের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে নোট গাইডের কোন সম্পর্ক নেই। নোট গাইড শিক্ষার্থীদের কোন কাজেই লাগবে না। তিনি বিষয়টি খোঁজ খবর নেবেন বলে জানান। সচেতন মহলের অভিযোগ, শিক্ষকেরা কমিশন নিয়ে গাইড কিনতে ছাত্রদের চাপ প্রয়োগ করেন। গাইড বই নিষিদ্ধের আইনের প্রয়োগ নেই। আইনের প্রয়োগ থাকলে নিষিদ্ধ বই এভাবে বিক্রি হতে পারতো না। এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সাতক্ষীরার সচেতন মহল।
Leave a Reply