জি এম রাজু আহমেদ নিজস্ব প্রতিনিধি: শ্যামনগর উপজেলার সিংহড়তলী এলাকার ভাঙন কবলিত উপকুল রক্ষা বাঁধের ভিতরের দিকে তিন স্তরের রিং বাঁধ তৈরী করা হয়েছে। বালু ভর্তি জিও টিউবসহ মাটি দিয়ে পৃথকভাবে একের পর স্তর তৈরীর মাধ্যমে এসব রিং বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। যার ফলে পাশের চুনকুড়ি নদীতে উপকুল রক্ষা বাঁধের একটা বড় অংশ ধসে যাওয়া সত্ত্বেও লোকালয়ে জোয়ারের পানির প্রবেশ ঠেকানো সম্ভব হয়েছে।
এদিকে ভাঙনের বিস্তৃতির কথা বিচেনায় নিয়ে সোমবার দুপুর থেকে একই অংশে চতুর্থ স্তরের রিং বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তবে পাশর্^বর্তী এলাকাসমুহে পর্যাপ্ত এবং ভাল মানের বালুর সন্ধান না মেলায় কাজের গতি শ্লথ বলে জানিয়েছে পাউবো সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি পাশর্^বর্তী আরও অন্তত তিনটি পয়েন্ট ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থায় থাকলেও এই মুহুর্তে ভাঙনের শংকা নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী প্রিন্স রেজার ভাষ্য স্থানীয় গ্রামবাসীসহ দুর-দুরন্ত থেকে আগত শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী রোববার সারারাত ধরে ধসে যাওয়া অংশে রিং বাঁধ নির্মাণ কাজে সহযোগীতা করেছে। এর আগে রাত একটা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রনী খাতুন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সহকারী কমিশনার(ভুমি) আব্দুল্লাহ আল রিফাত ও শ্যামনগর থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবিরের সহাতায় কয়রা থেকে বাল্কহেড আনিয়ে বালু সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন।
তিনি আরও জানান সোমবার সকালে ধসের সৃষ্টি হওয়া অংশে ১৪ শত ব্লকসহ সহ¯্রাধিক জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। পরবর্তী ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ধসে যাওয়া অংশের ভিতরে প্রায় ৭০ মিটার জায়গাজুড়ে নুতনভাবে রিং বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ‘ধসের সৃষ্টি হওয়া স্থান শংকা মুক্ত’- দাবি করে তিনি বলেন বাঁধ ছিদ্র করে নাইনটি ও পাইপ স্থাপনের ফলে এসব অংশে ধস সৃষ্টির মুল কারন।
পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী সালাউদ্দীন সানী দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণ প্রতিনিধিকে জানান ধসে যাওয়া অংশের ভিতরে জিও টিউব দিয়ে প্রথম স্তরে বিকল্প বাঁধ তৈরী করা হয়ছে। পরবর্তীতে মাটির দিয়ে দ্বিতীয় স্তরের বাধ তরীর পাশাপাশি ধসে যাওয়া অংশের বাইরের দিকে ১৪শ ব্লক ডাম্পিং করার পর অবস্থা স্তিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। তিনি আরও জানান ¯্রােতের গতিপথের কারনে তদসংলগ্ন অংশের কয়েকটি স্থানে ভাঙন লেগেছে। আশপাশে মানসম্পন্ন বালু না পাওয়ায় কাজের গতি কিছুটা ধীর। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করায় বিশাল এলাকা প্লাবিত হওয়া থেকে আপাতত রক্ষা পেয়েছে। পাশের ঝুঁকিপুর্ণ অংশসমুহের ভাঙন ঠেকাতে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রনী খাতুন বলেন, ধসে যাওয়া অংশ আপাতত রক্ষা পাওয়ায় অন্তত তিনিটি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়া থেকে বেঁচে গেছে। তবে সামনের বর্ষা মৌসুমের কথা বিবেচনায় নিয়ে অপরাপর ঝুঁকিপুর্ণ অংশের ভাঙনরোধে পাউবো কতৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য গত শুক্রবার ফাটল দেখা দেয়ার পর শনিবার থেকে শ্যামনগর উপজেলাকে ঘিরে থাকা উপকুল রক্ষা বাঁধের ৫ নং পোল্ডারের সিংহড়তলী অংশের প্রায় ৩০ ফুট মালঞ্চ নদীতে ধসে যায়। এসময় স্থানীয়দের মধ্যে ভাঙত আতংক ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি তদসংলগ্ন অন্তত আটটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার শংকা তৈরী হয়। একপর্যায়ে সিপিপিসহ বিভিন্ন স্বেচ্চাসেবীদের ঘটনাস্থলে সমবেত করার পাশাপাশি স্থানীয় গ্রামবাসীদের সরিয়ে নিতে পাশের বনশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে প্রস্তুত করা হয়।
Leave a Reply