জি এম রাজু আহমেদ/ আলী মোর্তজা: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমাল বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ইতোমধ্যে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এদিকে ঘূণিঝড় রিমালের প্রভাবে সাতক্ষীরা উপকূলীয় এবং সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় ৫ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
রোববার ভোর থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন চুনা, খোলপেটুয়া, মাংলঞ্চ ও যমুনা নদী কপোতাক্ষ নদে স্বাভাবিক জোয়ার তুলনায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যানগরের বুড়িগোয়ালীনি, গাবুরা, পদ্মপুকুর, আটুলিয়া, কৈখালী, রমজাননগর, মুন্সিগঞ্জ উপকূলীয় এলাকায় মাঝারি বৃষ্টির পাশাপাশি ঝড়ো বাতাস বইছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলের মানুষের মাঝে। এদিকে দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ও ঝূকিপূর্ণ ইউনিগুলো থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে মানুষদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সি পি পি, সিডিও’র সহায়তা নিয়ে মাইকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য। শ্যামনগর উপজেলা কে ঘিরে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে উপকূল রক্ষা বাঁধ সংস্কারের কাজ চলছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে সাতক্ষীরায় ১০নম্বর মহা বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সাতক্ষীরা থেকে ২৯৫ কিমি দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার গতিতে উপকূলের অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬২ কিলিমিটারের মধ্যে বাসাতের গতিবেগ ঘন্টায় ৯০থেকে ১২০ কিমি। সাতক্ষীরার উপকূল অঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারের থেকে ৮ থেকে ১২ ফিট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। সন্ধ্যা নাগাদ সাতক্ষীরা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। সাতক্ষীরা শহরে ছিটেফোটা বৃষ্টি হলেও সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে গতকাল শনিবার থেকে।
দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার ডুমুরিয়া এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, মাঝে মাঝে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে। ঘুর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ইতোমধ্যে নদীর পানি কানায় উঠে গেছে। এখন জোয়ার শুরু হয়েছে চলবে ৩টা পর্যন্ত। চাদনিমুখা এলাকায় নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাধ ছাপিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছিলো স্থানীরা সেটা ঠেকিয়েছে। নদী উত্তাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। এখনও মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে সেইভাবে আসেনি। কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি ১০ থেকে ১২ জন করে এসে। আমাদের ইউনিয়নটি নদী বৃষ্টিত। গাবুরা ইউনিয়নের ৯নং সোরা, হরিষখালি এবং গাবুরার ২নং ওয়ার্ড এলাকার বেড়িবাধের নাজুক অবস্থা। আবহাওয়া অফিসের তথ্যনুযায়ী জলোচ্ছ্বাস হলো পুরো ইউনিয় পানিতে ডুবে যাবে।
গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে আমার ইউনিয়নের দুই পাশে নদী খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদীতে পানি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। যেসব এলাকায় বেড়িবাদের সমস্যা সেখানে বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আশ্রয়ক কেন্দ্রগুলোতে প্রতিবন্ধী, অসুস্থ, বৃদ্ধ, শিশু ও নারীদের নেওয়া হয়েছে। মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। বড় জলোচ্ছ্বাস হলে আমার ইউনিয়নে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো- ১) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন জানান, ঘূণিঝড়ের প্রভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন নদীগুলোতে স্বাভাবিক জোয়ার ভাটার তুলনায় পানি ৫ ফিট বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢেউ বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পান-অশনির পর জেলার অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। আপাতত নদী ভাঙ্গনের কোন সমস্যা নেই। তবে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি যেন ছাপিয়ে বাঁধের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য একাধিক টিম কাজ করছে।৫কিলোমিটার বাঁধ ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। যেসব জায়গাতে বেড়িবাঁধের অবস্থা নাজুক সেখানেও সংস্কারের কাজ চলছে। আর এছাড়াও আমরা পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ মজুদ করে রেখেছি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুুতি আছে। উপকূলীয় শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও দেবহাটা এলাকার আশ্রয় কেন্দ্রগুলো স্বেচ্ছাসেবক টিমের ৬হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। এছাড়া পুলিশ, নৌবাহিনী, বিজিবি, গ্রাম পুলিশ মানুষদের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দে নেওয়ার কাজ করছে।
এদিকে পযাপ্ত শুকনা খাবার প্রস্তুত রাখা, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মচারীরা যেন সকলে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে, ইউনিয়নে মেডিকেল টিম প্রস্তুতকরণ, খাওয়ার পানি মজুদ রাখা, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply