সাইদ, সাতক্ষীরা: উপর্যুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং প্রযুক্তির দাপটে চারু শিল্পের বিকল্প হিসাবে নিত্য-নতুন প্লাস্টিক সামগ্রী বাজারজাত করণে হারিয়ে যেতে বসেছে বেত ও বাাঁশের তৈরী চারুশিল্প। তাই সাতক্ষীরার বাঁশ শিল্পীরা তাদের ভাগ্যের উন্নয়ের জন্য বাপদাদার রেখে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে বেছে নিচ্ছে অন্য পেশা। আর এসব পেশায় তাদের উপযুক্ত দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ না থাকায় তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতে পারছে না। ফলে তাদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। বাহারি ও মন কাড়া রকমারী প্লাস্টিক সামগ্রী যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সেই পণ্য বাজার দখল করার কারণে পরিবেশ বান্ধব বেত ও বাঁশের তৈরী জিনিসের প্রতি মানুষ দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এক সময় সাতক্ষীরার বেত ও বাঁশ শিল্পের সুনাম দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে ছিলো। কিন্তু এই শিল্প আজ আধুনিক ও যান্ত্রিক যুগের সাথে পাল¬া দিয়ে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই দিনদিন চারুশিল্পের বিশ্বজোড়া খ্যাতি যশ ধীরে ধীরে ¤ø¬ান হয়ে অলাভজনক শিল্পে পরিনত হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে চারুশিল্পীরা বাপ-দাদার রেখে যাওয়া পেশা ছেড়ে বেছে নিচ্ছে নতুন পেশা। যে পেশায় তারা একেবারে আনাড়ী। ফলে সাতক্ষীরার বেত ও বাঁশ শিল্পীরা এখন মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। সাতক্ষীরার দেবনগর, লাবসা, ফিংড়ী, বাবুলিয়া, গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবার বেত ও বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। যারা বাঁশ দিয়ে তৈরী চাটাই, কুলা,ঝুড়ি, ডালা, চালুন, খাঁচা, খারই, মোড়া, ডরি, ধামা, পেলেসহ বিভিন্ন ধরনের টুকরি-সাজিসহ হরেক রকম দ্রব্যসামগ্রী তৈরী করে স্থানীয় বাজার সহ সারা দেশের চাহিদা মিটাতো। কিন্তু বর্তমানে এ পেশায় সরকারি পৃষ্টপোষকতা না থাকা, বাঁশ ও বেতের যোগান না থাকা এবং প্লাস্টিক সামগ্রীর রসতলে চারু শিল্পের চাহিদা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এ পেশার সাঙ্গে জড়িত মান্দার দাশ, সুকুমার দাশ, দুলাল দাশ, স্বপন দাশ ও বিপুল দাশ বলেন, প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ ও সরকারী পৃষ্টপোষকতা না থাকায় এবং বাজারে বাহারী প¬াষ্টিক সামগ্রীর পণ্যের চাহিদায় চারুশিল্পের ভগ্ন দশা। তারা আরো বলেন আমাদের খবর কেউ রাখেনা। লাবসার সুনিল দাশ বলেন আমাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চার জনের সংসার আমার কখনো কখনো এক বেলা না খেয়ে থাকতে হচ্ছে, অথচ আমাদের খবর কেউ রাখেনা। এবিষয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন, বেত ও বাাঁশের তৈরী চারুশিল্প আমাদের দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য এই শিল্পকে রক্ষা করতে সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত সংগঠন সহযোগিতা চাইলে তাদেরকে সহযোগিতা করবে বর্তমান সরকার। এবিষয়ে সাতক্ষীরা সমাজসেবা অফিসার শেখ শহিদুর রহমান ও উপজেলা ফিল্ড সুপারভাইজার পথিক কুমার মন্ডল বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে আমাদের একটা জরিপ করার নির্দেশ দেয়া হয়। সেই আলোকে ১০টি পেশার মধ্যে ৫টি শ্রেণির পরিসংখ্যান করে ২২৬০টি নামের তালিকা কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়েছি এবং সরকারি পর্যায়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানোন্নয়ন শীর্ঘক প্রকল্পের আওতায় তালিকা করা হয়েছে। যাতে পরবর্তীতে ওনারা সহযোগীতা পেতে পারে বলে আশা করছি।
Leave a Reply