স্টাফ রিপোর্টার: সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্তে ভারত থেকে নদী সাঁতরে বাংলাদেশে নিয়ে আসা ৫’শ বোতল ফেনসিডিলের চালান লুটের ঘটনার দশদিন অতিবাহিত হলেও লুটকৃত ফেনসিডিলের মালিক দুই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী আসাদুল, কালা সাইফুল কিংবা সাজানো লুট নাটকে জড়িত তাদের সহযোগীদের অদ্যবধি গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। মাদক ব্যবসায়ী আসাদুল উপজেলার ধোপাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ও আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের সদস্য মিজান ডাকাতের ছেলে এবং অপর মাদক ব্যবসায়ী সাইফুল ওরফে কালা সাইফুল সখিপুর বাজার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা।
ঘটনার পর থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় আসাদুল সহ তার কয়েকজন সহযোগী অদ্যবধি আত্মগোপনে থাকলেও, সম্প্রতি আত্মগোপন থেকে ফিরে আবারও মাদক পারাপার, মাদক ব্যবসায়ী ও লুটেরাদের নিয়ে গোপন বৈঠক এমনকি সীমান্ত এলাকায় মহড়া দিয়ে রীতিমতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ী কালা সাইফুলসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
ভারতে অবস্থানরত এসব মাদকদ্রব্য সরবরাহকারীদের বোকা বানিয়ে আনুমানিক ৬ লাখ টাকা মূল্যের ওই ফেনসিডিলের চালানটি আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই মাদক ব্যবসায়ী আসাদুল ও কালা সাইফুল পরিকল্পিতভাবে তাদের সহযোগীদের ব্যবহার করে লুটের নাটকটি মঞ্চস্থ করে বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে খবর মিলেছে।
গত ২ মার্চ বৃহষ্পতিবার রাত দেড়টার দিকে দু’দেশের আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারনী ইছামতি নদী সাঁতরে ভারত থেকে অবৈধভাবে আনা ফেনসিডিলের চালানটি দেবহাটার চরশ্রীপুর স্লুইজ গেট সংলগ্ন বেড়িবাঁধে পৌঁছাতেই কয়েকজন দূর্বৃত্ত তা লুট করে নেয় বলে এলাকায় প্রচার মাদক ব্যবসায়ী আসাদুল ও কালা সাইফুল গ্যাং।
এমনকি তাদের সাজানো নাটকটি প্রশাসনসহ সর্বমহলে বিশ^াসযোগ্য করে তুলতে লুটকান্ডের পরদিন ফেনসিডিলের চালান নদী পারাপারে নিয়োজিতদের ধরে নিয়ে পারুলিয়ায় সাবেক এক জনপ্রতিনিধির সামনে ফেলে শারিরীক নির্যাতন চালানোসহ তাদের ব্যবহৃত একটি মোটর সাইকেল আটকে রেখে জোরপূর্বক কয়েকটি অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় খোদ ফেনসিডিল চালানটির মালিক ও লুটেরারা।
এনিয়ে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশের পর লুটকৃত ফেনসিডিলের চালান উদ্ধার এবং মাদকের চালান পারাপারে জড়িত মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের সহযোগী লুটেরাদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান শুরু করে করে দেবহাটা থানা পুলিশ, বিজিবি, জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) সহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সীমান্তের একাধিক বিশ^স্ত সূত্রের দাবি, ‘ভারতীয় মাদক সরবরাহকারী শাঁকচুড়োর রিয়াজুল, মোমেন ও বারাসাতের আকরাম সম্পূর্ন বাকিতে ওই ফেনসিডিলের চালানটি বাংলাদেশে মাদক ব্যবসায়ী আসাদুল ও কালা সাইফুলের উদ্দেশ্যে পাঠায়। চালানটি বেচাকেনার পর মাদকের মূল্য ভারতীয়দের পরিশোধ সহ লভ্যংশের টাকা দু’দেশে অবস্থানরত এই সিন্ডিকেটের মধ্যে ভাগাভাগির চুক্তি ছিল। কিন্তু চুক্তি ভঙ্গ করে সমূদয় অর্থ আত্মসাতের জন্য গোটা ফেনসিডিলের চালানটি লুটের নাটক সাজায় মাদক ব্যবসায়ী আসাদুল ও কালা সাইফুল। তারা লুটকান্ডে চরশ্রীপুরের হাচিমের ছেলে শাহিন, জাহাপুর গ্রামের সুকুমার ওরফে বাচা’র ছেলে নব মুসলিম তারেক, ঘলঘলিয়ার খালেকুল ও কোমরপুরের আনারুলের ছেলে আলমগীরসহ কয়েকজন সহযোগীকে ব্যবহার করে।
পরিকল্পনা মোতাবেক নদী পেঁরেয়ে তীরে পৌঁছাতেই আসাদুল ও কালা সাইফুলের এসব সহযোগীরা ফেনসিডিলের চালানটি কৌশলে লুট করে সীমান্তের আশপাশে তাদের নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে রাখে। লুকিয়ে রাখা ফেনসিডিল গুলো কালা সাইফুল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সূত্রগুলো আরও জানায়, ফেনসিডিল চালানের মালিক ও সাজানো লুট নাটকের মুলহোতা আসাদুল, কালা সাইফুল বা তাদের সহযোগীদের আইনের আওতায় নিয়ে জিঞ্জাসাবাদ করা হলে লুটকৃত ৫শ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারসহ সীমান্তে প্রতিনিয়ত মাদক চোরাচালানের চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ন তথ্য বেরিয়ে আসবে।’
এব্যাপারে দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্যাহ বলেন, মাদক কারবারি আসাদুল, কালা সাইফুলসহ তাদের অপরাপর সহযোগীদের গ্রেপ্তার ও লুটকৃত ফেনসিডিল গুলো উদ্ধারে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে নিয়মিত সীমান্ত পেরিয়ে ফেনসিডিল, ভারতীয় মদসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের চোরাচালান ও চাঞ্চল্যকর এ লুটের ঘটনায় সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে মাদক ব্যবসায়ী আসাদুল ও কালা সাইফুলের মোবাইলে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তাদের মোবাইল বন্ধ থাকায় যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
Leave a Reply