ধর্ম বার্ত: জাকাত ইসলামী সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান। জাকাত একদিকে দরিদ্র, অভাবী ও অক্ষম জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি, অন্যদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। জাকাত আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা, ক্রমবৃদ্ধি, আধিক্য ইত্যাদি।
পারিভাষিক অর্থে জাকাত হলো, ধনীদের ধন-মাল থেকে আল্লাহর নির্ধারিত হারে উপযুক্ত ব্যক্তিকে দান করা। মহান আল্লাহ সম্পদশালীদের সম্পদ থেকে জাকাত সংগ্রহ করে নির্ধারিত আটটি খাতে ব্যয় বণ্টন করার জন্য ইসলামী রাষ্ট্রের সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন। জাকাত একদিকে জাকাতদাতার মন ও আত্মাকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে, তার ধন-সম্পদকেও পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করে দেয়; অন্যদিকে দরিদ্রদের অভাব পূরণে সহায়তা করে এবং সম্পদে ক্রমবৃদ্ধি বয়ে আনে। যাদের জাকাত দেওয়া যাবে না: নিজ পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, অর্থাৎ জাকাত দাতার সকল পিতৃকুল ও মাতৃকুলের সকল ঊর্ধ্বতন নারী-পুরুষকে জাকাত দেওয়া যাবে না।
ঔরসজাত ছেলে-মেয়ে, নাতী-নাতনি, পরনাতি-পরনাতনি, অর্থাৎ নিজের অধস্তন কোনো নারী-পুরুষকে জাকাত দেওয়া যাবে না। স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে জাকাত দিতে পারবে না। এছাড়া অন্য সব দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনকে জাকাত দেওয়া যাবে। যেমন- ভাইবোন, চাচা-ফুফু, মামা-খালা, শ্বশুড়-শাশুড়ি, সৎ মা-সৎ বাবা, জামাতা, পুত্রবধূ ইত্যাদি। -হেদায়া ১২০৬
জাকাত দানের ক্ষেত্রে জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত নিকটাত্মীয়দের জাকাত দেওয়া উত্তম। -রদ্দুল মুহতার ৩২৯৩, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১১৯০, মারাকিউল ফালাহ ৫৯৪
মাসয়ালা: যে ব্যক্তির কাছে জাকাতযোগ্য সম্পদ নেসাব পরিমাণ নেই, কিন্তু অন্য ধরনের সম্পদ, যাতে জাকাত আসে না, যেমন ঘরের আসবাবপত্র, পরিধেয় বস্ত্র, জুতা ইত্যাদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ও নেসাবের সমমূল্য পরিমাণ আছে, তাকে জাকাত দেওয়া যাবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ২১৫৮
জাকাতের টাকা কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা যাবে না। ব্যয় করা হলে জাকাত আদায় হবে না। যেমন- রাস্তাঘাট, পুল নির্মাণ করা, কূপ খনন করা, বিদ্যুৎ-পানি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। কেননা শরিয়তে জাকাতের বিধান দেওয়া হয়েছে ব্যক্তির প্রয়োজন পূরণের জন্য, সামাজিক প্রয়োজন পূরণের জন্য নয়।
Leave a Reply