নিজস্ব প্রতিনিধি: পাওনা টাকা আদায়ের জন্য চট্টগ্রামের এক প্রতারক ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে অপহরন মামলায় ফেঁসে গেলেন সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান। প্রতারক ব্যবসায়ী চট্টগ্রামের সাউদ সাদাতের দায়ের করা মামলায় সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশ মাকসুদ খান ও তার ম্যানেজার মহসিনকে গ্রেপ্তার করেছে । শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশ ভোমরা স্থলবন্দরস্থ মাকসুদ খানের ম্যানেজার মহসিনের ভাড়া বাসা থেকে প্রতারক সাউদ সাদাতকে উদ্ধার করে। এসময় পুলিশ মহসিনকে ও গ্রেপ্তার করে। শনিবার প্রতারক সাউদ সাদাত বাদী হয়ে মাকসুদ খান সহ পাঁচ জনকে আসামী করে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খানকে গ্রেপ্তার করে।
মাকসুদ খান সাতক্ষীরা পৌরসভার কাটিয়া মাস্টারপাড়া এলাকার মাস্টার মাহফুজুর রহমানের ছেলে। আর শুক্রবার রাতে আটক হওয়া মহসিন আলী সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা গ্রামের বাসিন্দা।
সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মহিদুল ইসলাম মামলা দায়ের এবং মামলার আসামী হিসেবে মাকসুদ খানসহ তার ম্যানেজার মহসিন আলীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ভোমরা স্থল বন্দর এলাকায় সৃষ্ট ঘটনা সম্পর্কে পরষ্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। এক গ্রæপের বক্তব্য সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান আদৌ চট্টগ্রামের ঐ ব্যবসায়ীর কাছে কোন টাকাই পাবে না। সে টর্চার সেল তৈরী করে তাকে নির্যাতন করেছে। তারা দাবী করেন সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের দীর্ঘদিন ভোট না হওয়াতে মাকসুদ খানের মত অযোগ্য লোকেরা নেতৃত্বের আসনে বসায় বন্দর ব্যবসায়ী শুন্য হতে চলেছে। তারা অবিলম্বে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবী জানান।
অপরপক্ষের বক্তব্য অপহরণের অভিযোগ সম্পূর্ণ সাজানো নাটক। বিশেষ করে বন্দরের মত একটি জনবহুল এলাকায় থাকা মাকসুদ খানের মালিকানাধীন এমএন্ডএম ট্রেডার্সে একটা মানুষকে ১৫ দিন ধরে আটক রেখে নির্যাতন চালানো হলো, আর সেটা কেউ জানতে পারলো না এটা অবিশ্বস্য। তারা আরো বলেন, এসোসিয়েশনের নেতৃত্ব প্রত্যাশি একটি মহল এ ঘটনার নেপথ্যে সক্রিয় রয়েছে। বিশেষ করে ভোমরার ব্যবসায়ী পত্রিকা সম্পাদক ও তার বাবা দ্রæত কিছু একটা করার জন্যই এ নাটকের নেপথ্যে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ভোমরা স্থল বন্দর সিএ্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এএসএম মাকসুদ খান দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণকে জানিয়েছিলেন, চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ গ্রামের মৃত সামশুল আলম চৌধুরী ছেলে ব্যবসায়ী সাউদ মোহাম্মদ সাদাত এর কাছে তার এক কোটি ২২ লাখ ৯২ হাজার ৫০০টাকা পাওনা রয়েছে। উক্ত পাওনা টাকার স্বপক্ষে চেক ও স্ট্যাম্পের ফটোকপি এবং থানায় জিডিসহ চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ হামিদউল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতিতে করা অভিযোগের কাগজপত্র তিনি দর্পণকে সরবরাহ করবেন। এছাড়া সাতক্ষীরার বিশেষ কিছু ব্যক্তির এনিয়ে তৎপরতার মোবাইল ফোনের কললিস্টের স্কিনসটও পাঠান।
এএসএম মাকসুদ খান দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণকে আরো জানিয়েছিলেন, উক্ত সাউদ মোহাম্মদ সাদাত সম্প্রতি সাতক্ষীরায় আসার পর ঐ ব্যবসায়ী পত্রিকা সম্পাদকের সেল্টারে ওঠেন। পত্রিকা সম্পাদকও মোবাইল ফোনে একাধিকবার টাকা পরিশোধের দায়িত্ব নেন। পরে ভোমরায় তার প্রতিষ্ঠান এমএন্ডএম ট্রেডার্সে পাঠিয়ে দেন এবং সেখানেই উক্ত সাউদ অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মত অবস্থান করেন।
এএসএম মাকসুদ খান দৈনিক আজকের সাতক্ষীরা দর্পণ এর কাছে দাবী করেছিলেন উক্ত সাউদ মোহাম্মদ সাদাত তর অফিসে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মতই থেকেছে, নিয়মিত মোবাইলে তার পরিবারসহ অন্যান্যদের সাথে মোবাইলে কথা বলেছে, ভোমরায় হোটেলে খাওয়া দাওয়া করেছে এবং ঘুরে বেড়িয়েছে। এসময়ের মধ্যে সে ভোমরা থেকে চট্টগ্রামে মালামালও পাঠিয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর রোববার টাকা পরিশোধের ওয়াদা খেলাপ করতেই সাতক্ষীরার ব্যবসায়ী পত্রিকা সম্পাদকের পরামর্শে তার বিরুদ্ধে নাটক সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি দাবী করেছিলেন। ঐ ব্যবসায়ী পত্রিকা সম্পাদক সাতক্ষীরার দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক স.ম. আলাউদ্দিন হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত এক গড়ফাদার আসামীর ছেলে।
এদিকে সাতক্ষীরা থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে সাউদ মোহাম্মদ সাদাত উল্লেখ করেছেন তার নিকট মাকসুদ খানের ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। তার ব্যবসায়িক অবস্থা ভাল না থাকায় সে টাকা সময় মত পরিশোধ করতে পারিনি। সে কিভাবে টাকা পরিশোধ করবে আলোচনা করার জন্য গত ২ সেপ্টেম্বর এজাহার মিয়া ও মোঃ আক্তার নামে দু’জন স্বাক্ষী নিয়ে সাতক্ষীরায় আসেন। বিকাল সাড়ে ৫টায় ভোমরায় যান এবং সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের অফিস থেকে তাকে কৌশলে আসামীরা অপহরণ করে এমএন্ডএম ট্রেডার্সে নিয়ে আটক করে একটি ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখে।
তাকে আসামীরা বিভিন্ন সময়ে শারীরিক ও মানুষিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। গত ১২ সেপ্টেম্বর দুপুর অনুমান ২.৩০ টার সময় মাকসুদ খান সেখানে উপস্থিত হয়ে এসএস পাইপ দিয়ে তার হাতে পায়ে কোমরে উরুতে বেদম মারপিট করে রক্ত জমাট ফোলা জখম করে এবং তার প্যান্টের পকেটে থাকা ৫০টাকা নিয়ে নেয়। সে বিষয়টি কৌশলে তার স্ত্রীকে জানায়। তার স্ত্রী থানা পুলিশকে অবহিত করিলে ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬.৩০ টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে তাকে উক্ত কক্ষ হতে উদ্ধার করে।
মামলায় এজাহারে গ্রেপ্তারকৃত উক্ত দুইজন ছাড়াও আকাশ, মোঃ রাজিব ও টফি নামের আরো ৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সাতক্ষীরা থানার মামলা নং ৩২, তারিখ ১৬.০৯.২৩ইং।
Leave a Reply