আবু সাইদ,সাতক্ষীরা: দেশের সর্ব প্রথম বাল্যবিবাহ মুক্ত উপজেলা সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা এখন বাল্য বিবাহের ভারে আক্রান্ত! করোনা কালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারনে অনেক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্টনের শিক্ষার্থীর জীবন বাল্য বিবাহের কারনে অকালে ঝরে পড়েছে। “বাল্য বিবাহ একটি অভিশাপ ও সামাজিক ব্যাধি’- এ স্লোগান কে সামনে রেখে কালিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, জন প্রতিনিধি, সাংবাদিক, এনজিও প্রতিষ্ঠানসহ সমাজের সচেতন মহল কালিগঞ্জ উপজেলাকে বাল্যবিবাহ মুক্ত করার নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যান। এক পর্যায়ে ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ তারিখে কালিগঞ্জ উপজেলা বাংলাদেশের মধ্যে সর্ব প্রথম “বাল্য বিবাহ মুক্ত” উপজেলা হিসাবে সরকারি ভাবে ঘোষিত হয়। তারই স্বীকৃতি স্বরূপ তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলহাজ্ব সৈয়দ ফারুক আহম্মেদ একই বছরের অক্টবর মাসে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের নিকট থেকে হোটেল সোনার গাঁও এ আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে সম্মাননা ক্রেষ্ট গ্রহন করেন। বেশ কিছুদিন যাবৎ বাল্য বিবাহ মুক্ত উপজেলা হিসাবে মানুষ সুফল ভোগ করলেও সর্বনাশা মহামারী করোনা এ পরিস্থিতিকে পাল্টে দেয়। করোনা কালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারনে অনেক অবিভাবক তাদের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কোমল মতি সন্তানদের কে বিবাহ প্রদান করে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে স্থানীয় ম্যারেজ রেজিষ্টার বর-কনে পক্ষের সহযোগীতায়, কতিপয় মতলব বাজ ও কিছু কুচক্রী মহলের যোগসাজসে, অতি গোপনে বাল্য বিবাহ সম্পন্ন করে। গত ২০২০ ও ২০২১ সালে উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নের ২৭৩টি গ্রামে অন্তত ১ হাজার বাল্য বিবাহ সংগঠিত হয়েছে। বেসরকারি নারী উন্নয়ন সংগঠন ‘বিন্দু’ এর নির্বাহী পরিচালক জান্নাতুল -মাওয়া এ প্রতিনিধিকে বলেন -উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নের মধ্যে ২৪ টি গ্রামে জরিপ পরিচালনা করে ২০২০ ও ২০২১ সালে ১০১ টি বাল্য বিবাহ সংগঠিত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২০ সালে গোবিন্দপুর (ছোট) গ্রামের ৮ম শ্রেনী পড়–য়া (১৪) ৯ম শ্রেনী পড়–য়া (১৫), ২০২১ সালে কৃষ্ণনগর গ্রামের ৭ম শ্রেনী পড়–য়া (১৩), একই গ্রামের ৭ম শ্রেনী (১৪), রাজাপুর গ্রমের ১০ম শ্রেনীর (১৬), সোনাতলা গ্রামের ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী (১৪) এদের বাল্য বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। অপরিণত বয়েসে বিয়ের পিঁড়িতে পা রেখে এ সকল কোমল মতি মেয়েদের জিবন অনিশ্চিত ভবিৎসতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অপরিণত বয়েসে স্বামী, সংসার ও সন্তানের দায়-দায়িত্ব গ্রহন এদের কাছে যেন স্বপ্নের মতো। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রে বাড়ছে দাম্পত্য কলোহ। এ বিষয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অর্ণ্যা চক্রবর্তী বলেন বাল্য বিবাহের সঠিক পরিসংখ্যান আমার কাছে না থাকলেও তথ্যদাতাদের থেকে খবর পেয়ে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে আমরা যথাযথ ভ্থমিকা রেখেছি। ২০২১ সালে উপজেলায় ১৬ টি বাল্য বিবাহ বন্ধ করা হয়েছে। কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন ২০১৪ সালে স্বীকৃতি প্রাপ্ত বাল্য বিবাহ মুক্ত উপজেলা হিসাবে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বর- কনে পক্ষের মুচালেকা গ্রহন সহ ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে আর্থিক জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। তিনি বলেন করোনা কালীন সময় থেকে এ উপজেলায় বাল্য বিবাহ বেড়েছে। কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও মানবাধিকার কর্মী সুকুমার দাশ বাচ্চু বলেন- বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রথম প্রয়োজন জনসচেতনতা। উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, ম্যারেজ রেজিষ্টার, গনমাধ্যমকর্মী, শিক্ষক ও সর্বপরি অভিভাবকমন্ডলীর স্বদিচ্ছা থাকতে হবে। তবে আমার জানামতে কিছু সংখ্যক অসাধু ম্যারেজ রেজিষ্টারের কারণেই এ উপজেলায় বাল্যবিবাহ বেশি হয়ে থাকে।
Leave a Reply