ন্যাশনাল ডেস্ক: সাধারণত পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপরে গেলেই তিস্তার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়। কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে; অপরদিকে কাউনিয়া পয়েন্টেও বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই। “এ ছাড়া, কাউনিয়া পয়েন্টে নদী বিপদসীমা টাচ করে আছে। ওখানেও পানি বাড়ার আশঙ্কা আছে। তবে এটা দীর্ঘমেয়াদী হবে না। আজকে রাতটা থাকবে, কাল (শনিবার) দুপুর থেকেই পানি নেমে যাবে।” এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রকৌশলী উদয় আরও বলেন, “এটা হচ্ছে উজানের ভারি বৃষ্টির জন্য। শিলিগুড়ি, দার্জিলিংয়ের দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই পানি তিস্তার দিকে আসছে। তবে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মাঝে এই বৃষ্টিপাত কমে যাবে। তখন সারাদেশের নদীর অবস্থা স্বাভাবিক হবে। পাউবোর ডালিয়া পয়েন্টের পানি পরিমাপ কর্মচারী নুরুল ইসলাম বলেন, সকাল ৯টা থেকে নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। দুপুর ১২টার পর পানি বিপৎসীমার তিন সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে; যা বিকালে বৃদ্ধি পেয়ে ১১ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে পানি বাড়তে থাকায় নদী তীরবর্তী এলাকা ও নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করে; এতে লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলার তিন থেকে চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে তিনি জানান। এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর ও খুনিয়াগাছ বাগডোরা; আদিতমারী উপজেলার খুনিয়াগাছ ও কালমাটি এবং হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না গড্ডিমারি এলাকায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাকির হোসেন বলেন, “সকাল থেকে তিস্তার পানি বেড়েই চলেছে। পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় অত্র এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যেতে শুরু করেছে।”
গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, “এ ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ড তিস্তা পাড়ে অবস্থিত। সকাল থেকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ এলাকায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাসিন্দাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।”“চলতি মাসেই একবার বন্যা হয়েছে। সেই ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই আবারও নদীর পানি বাড়ছে। এলাকাবাসীর দাবি নদী খনন করে দুই তীরে বাঁধ দেওয়া হোক।” লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, “পানি বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। বন্যা মোকাবেলায় আমাদের সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া আছে। তিস্তাপাড়ের মানুষকে সতর্ক করার পাশাপাশি সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি।” বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আরও জানায়, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি সমতলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে, গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।এ ছাড়া, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
Leave a Reply